দেবক বন্দ্যোপাধ্যায়।
আমে দুধে মিশে যাবে, আঁঠি গড়াগড়ি খাবে।
না, চেনা গল্পটি তে এই তিনটে মাত্র চরিত্র নেই। আরো একজন আছে। সে হল বাটি। তার কী হবে? সে কখনো পায়সান্নে, কখনও বা শাকান্নে ভ’রে উঠবেই! এইসব হেঁয়ালির গল্প ছেড়ে সোজা কথা সোজা ভাবেই বলি। সোজা ও সহজ কথাটি হল,
তৃণমূল নেতাদের একটি কথা বুঝে নেবার সময় হয়ে গেছে, যে মমতা তৃণমূলের ভিত্তি এবং অভিষেক হলেন ভবিষ্যৎ। সহজ সত্য টা বুঝে নিতে পারলে এবং মেনে নিতে পারলে খামোকা লোক হাসানোর প্রয়োজন হয় না।
রাজনৈতিক মহলে ইতিমধ্যেই অনেকে বলতে শুরু করেছেন যে, তৃণমূল এখন কালীঘাট আর ক্যামাক স্ট্রিটে (অভিষেকের অফিস) বিভক্ত। আলটপকা মন্তব্য করে এই ধরনের চায়ের দোকানের চর্চায় হাওয়া দেবার কোনো দরকার আছে কি?
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আগামী দু’মাস ভোট বা মেলা, সবকিছুই বন্ধ রাখা সঠিক হবে বলে মত দিয়েছেন। একই নিশ্বাসে বলেওছেন, এটি তাঁর ব্যক্তিগত মত। দলের সাধারণ সম্পাদকের ব্যক্তিগত মত বলে কিছু থাকতে পারে কি না, এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রশ্ন তোলার সঙ্গে সঙ্গে আর একটি প্রশ্নের জন্ম ও দিয়ে ফেলেছেন তিনি, হয়ত নিজের অজান্তেই! সেই প্রশ্ন টি হল এই, যে তিনি কেন দলের মধ্যে না বলে সংবাদ মাধ্যমের কাছে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের সমালোচনা করলেন? সৌগত রায় ও সুখেন্দু শেখর রায়ের মত দুই সাংসদ যখন আগেই বলেছেন, অভিষেকের মতের সঙ্গে তাঁরা সহমত, কিন্তু যেহেতু মেলার প্রস্তুতি অনেক আগে থেকে শুরু হয়ে গেছে তাই সরকারের পক্ষে পিছিয়ে আসা এখন সম্ভব নয়।
এরপরেও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় কে কেন বলতে হল? ধরে নেওয়া যায় এটাও তাঁর ব্যক্তিগত মত, এটা দলের মতামত নয়। আর তিনি বললেন তখন, যখন সিভিল সোশ্যাইটি অভিষেক কে সাধুবাদ দিচ্ছেন। নামী চিকিৎসকরা তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করছেন।
একুশের জয়ের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে উন্নততর তৃণমূলের কথা বলেছিলেন, সেই উন্নততর স্তরে দলকে উত্তীর্ণ করার পথে এগিয়ে অভিষেক যখন দলীয় ও নির্বাচনী স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে বিজ্ঞানভিত্তিক, সাধারণ মানুষের স্বার্থরক্ষাকারী বক্তব্য পেশ করছেন, তখন কালীঘাট-ক্যামাক স্ট্রিটের কাল্পনিক বিরোধ তত্ত্বে উস্কানি দিয়ে কী বার্তা দিতে চাইলেন কল্যাণ?
রাজনীতি তে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাঁটুর বয়সের চেয়েও ছোট সুদীপ রাহা টুইট করেছেন। তাঁর বক্তব্য টি নিম্নরূপ :
রাজনীতির জন্য মানুষ নয়,মানুষের জন্য রাজনীতি। তাই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য আজ সর্বজনবন্দিত। যারা ঈর্ষান্বিত হচ্ছেন, তারা বিশ্রাম নিন। নেতা তিনিই, যিনি মানুষের কথা বলেন। স্বার্থান্বেষী, ঈর্ষাকাতর যারা, তারা রাজনীতির অ-কল্যাণ!
মোলায়েম মোড়কে সুদীপের কঠোর বার্তাটি যে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের তা বোঝার জন্য বিরাট রাজনৈতিক বোদ্ধা হবার প্রয়োজন নেই, তা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না।
কল্যাণের পাল্টা সুদীপ রাহা!
কিংবা
কালীঘাট বনাম ক্যামাক স্ট্রিট!
কিংবা
পুরাতন বনাম নতুন!
এমন কোনো জল্পনার জন্ম দেবার দরকার ছিল কি?