দেবক বন্দ্যোপাধ্যায় :
প্রশ্ন: নামে কি আসে যায়?
উত্তর: হ্যাঁ, নামে আসে যায়।
প্রশ্ন: নামে কী আসে যায়?
উত্তর: নামে ঠিক কী কী আসে যায়, এখানে সেটাই বলব। কিন্তু তার আগে বলে রাখা দরকার এই আষাঢ়ে সবকিছু ছেড়ে ‘নাম’ নিয়ে পড়তে হলো কেন? বিষয় তো বাজারে কম নেই! ‘রাজভবনে রাসলীলা ও সায়ন্তিকার সংকোচ!’ কিংবা ‘বুলডোজারের হেব্বি ডোজ্!’ অথবা ‘বিকিকিনিতেও বহিরাগত।’ এইরকম যে কোনও একটি বিষয় নিয়ে রসিয়ে লেখাই যেত! তবু নাম মাহাত্ম্য নিয়ে কয়েকটি কথা এখানে বলতেই হয়।
অনেকদিন পর কলকাতা শহরে হকার উচ্ছেদ নিয়ে আবার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী কোনও রাখঢাক না করেই বলেছেন, ফুটপাথ আটকানো চলবে না। সবাইকে একটা নিয়মের মধ্যে আসতে হবে। তিনি আরও বলেছেন, তিনি হকারদের বিরোধী নন। কিন্তু তাই বলে যাচ্ছেতাই পরিস্থিতি তৈরি হোক, এটা তিনি চান না।
সঙ্গত কারনেই সাধারণ মানুষ সাধুবাদ জানাচ্ছেন। যদি সত্যিই আলোর মুখ দেখে ফুটপাথ! হাতিবাগানে হাঁটা যায় অবাধে! গড়িয়াহাটের বড় বড় দোকানগুলো আড়াল থেকে বেরিয়ে যদি জনারণ্যে মুখ দেখাতে পারে! সমাজের একাংশ ভাবছে, এইসব হলে ভালোই হয়। আবার কেউ কেউ ভাবছে একটু অন্যরকম। তাদের ভাবনায়, পুজোর আগে হকারদের কী হবে? দিদি বলেছেন, বিকল্প হবে। কিন্তু সার্ভে করতেই একমাস। পুজোর আগে বিকল্প ব্যবস্থা কি বাস্তবসম্মত? ওদিকে গড়িয়াহাটের পলি বৌদি ভাবছেন, ফুটপাথের বাজারে উইন্ডো শপিং(!) না করে সন্ধেগুলো কাটবে কী করে? এদিকে হাতিবাগানের মলি বৌদির চিন্তা স্বাস্থ্য নিয়ে। দুপুরবেলা হকার-স্টলের ছায়ায় ছায়ায় ফুটপাথ ধরে না হাঁটতে পারলে দিবানিদ্রা আবার তাঁকে গ্রাস করবে! যাঁরা একটু অন্যরকম চিন্তা করেন, তাঁরা ভাবছেন আর দু’কদম এগিয়ে। এই যে ফুটপাথ জোড়া বাজার, এতদিনে এটাই তো কলকাতার চেনা ছবি! এটাই তো কলকাতা! এটাই তো সিটি অফ জয়! এইসব চলে গেলে কলকাতা আর কলকাতা থাকবে! বিভিন্ন চায়ের আড্ডায় এখন এটাই টপিক অফ ডিসকাসন।
এখন কথা হলো ফুটপাথের হকার যদি এতোই খারাপ তাহলে সুব্রত মুখোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, যাঁরাই এই কাজে ব্রতী হয়েছেন, তাঁরা কেউ কোনওদিন বুক ঠুকে বলতে পারবেন, ফুটপাথের দোকান থেকে তাঁরা কেউ কখনও কিছু কেনেননি! ফুটপাথ দখল অপরাধ, এই নীতিগত অবস্থানে দাঁড়িয়ে কেউ কোনওদিন এক ভাঁড় চা বা একটি সিগারেট পর্যন্ত কিনে খাননি! দিদি তো নিজেই দুধ বিক্রি করেছেন ফুটপাথে দাঁড়িয়ে। পুলিশ এসে হটিয়ে দিয়েছে। পুলিশ চলে গেলে আবার পসরা সাজিয়েছেন।
এই বক্তব্যের অবতারনার একটিই কারণ,তা হলো ফুটপাথের দোকান, সমস্যা বটে, তবে একই সঙ্গে ভারতবর্ষের মতো দেশের, কলকাতার মতো শহরের প্রয়োজনও। যাঁরা দোকান হারাবার মুখে তারা যেমন চিন্তায়, যারা তাদের খদ্দের তাদের চিন্তাও কম নয়। ওই দামে চলনসই কোয়ালিটি এবার কোথায় পাবেন তারা?
তবে এইসব প্রয়োজন অপ্রয়োজন কে পুঁজি করে একদল কামিয়ে নেবে সেটাও কাম্য নয়। মুখ্যমন্ত্রীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেই নিজের দলের কাউন্সিলর-নেতা আর নিজের প্রশাসনের পুলিশ কে সামনে বসিয়ে সত্য কথাটা সহজে বলে দিয়েছেন।
হ্যাঁ, শুরুতে এই কথাটাই বলছিলাম। সত্য কথাটি হলো তোলা! তোলাবাজি। মুখ্যমন্ত্রী নাম বদলে, নরম করে বলেছেন চাঁদা।
যাই হোক, গোলাপকে যে নামেই ডাকো, সে সুন্দর!