দেবক বন্দ্যোপাধ্যায়
রাহুল গান্ধি নাকি কৃষ্ণ মাচারি শ্রীকান্ত? বিরোধী দলনেতা হিসেবে প্রথম দিনে ঝোড়ো ইনিংস রাহুলের। অন-এর বল অফ-এ, অফ-এর বল অন-এ। স্টেপ আউট করে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে ছয়! বোলার বলতে প্রতিপক্ষের কাপতান মোদি, সহঃ অধিনায়ক শাহ, সিনিয়র প্লেয়ার রাজনাথ ও রিজিজু। শুধু তাই নয়, নিবিড় ভাবে খেলা দেখলে বোঝা যায় আম্পায়ার ওম বিড়লাও খেলেছেন। অন্তত খেলার চেষ্টা করেছেন।
যে মোদি বিগত দশ বছর ধরে রাহুলের পূর্বপুরুষদের বা তাঁর পরিবার কে নিয়ে সংসদে রঙ্গ তামাশা করেছেন, বিরোধী নেতার আসনে বসেই রাহুল বুঝিয়ে দিয়েছেন এই মোদিকেও সংসদে দাঁড়িয়ে খিল্লির পাত্র করা যায়। রাহুল বলেছেন, পরমাত্মার সঙ্গে মোদির আত্মার কথা হয়। এনডিএর সমর্থনে স্পিকারের আসনে বসা বিড়লা কালক্ষেপ না করে বলে উঠেছেন, প্রধানমন্ত্রীকে অপমান করা হচ্ছে। রাহুল বলেছেন, এটা তাঁর কথা নয়। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং বলেছেন যে তিনি পরমাত্মার প্রেরিত দূত। বিড়লা আর বাগাড়ম্বর করেননি। কারন এই নিয়ে বেশি কথা এগোলে মোদির বক্তব্য নিয়েই প্রশ্ন উঠে যেতে পারে! রাহুল বলেছেন, মোদি হাসেন না। রাহুল সংসদে উপস্থিত হলে রাজনাথ যেমন তাঁকে সহাস্যে নমস্কার করলেন, মোদি তেমন করলেন না। তিনি গম্ভীর হয়ে বসে রইলেন। এই কথায় মোদি একটু ঠেস মারা রসিকতা করতে চেয়েছিলেন। উঠে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, বিরোধী দলনেতাকে তিনি ‘গম্ভীরতার’ সঙ্গে গ্রহন করতে পছন্দ করেন। কিন্তু তাঁর কথায় তেমন হাসির রোল ওঠেনি। এটা সম্ভবত সরকার পক্ষেরও মনের কথা। মেলোনির সঙ্গে অত হাসি আর সংসদে ঢুকেই ষাটের দশকের হেড মাষ্টার কিংবা বাংলা ছায়ছবির কমল মিত্র? কেন রে বাপু! বিজেপি সাংসদদের মনেও বোধায় এই প্রশ্ন আছে। তাছাড়া বিরোধী দলনেতাকে সিরিয়াসলি (গম্ভীরতা কে সাথ) নেন বলে ভদ্রতার হাসিটুকু হাসতে পারবেন না, এই যুক্তিতে মোদির অনুগামীরাও সম্ভবত যুক্তিগ্রাহ্যতা খুঁজে পাচ্ছেন না।
রাহুল মোদি অ্যান্ড কোম্পানির দিকে হাত দেখিয়ে বলেছেন, যারা নিজেদের হিন্দু বলে তারা সারাদিন ভয় দেখাচ্ছে। হিন্দু শব্দ উচ্চারিত হলে মোদি কিছু না বলে বসে থাকবেন, তা কী হয়? তিনি উঠেছেন এবং বলেছেন, সকল হিন্দুদের নিয়ে এমন উক্তি খুব উদ্বেগের। উদ্দেশ্য স্পষ্ট। রাহুলকে যদি কোনও মতে আরো একবার হিন্দু বিরোধী বলে দেগে দেওয়া যায়। কিন্তু মোদির বক্তব্য সংসদের মধ্যেই ধোপে টেকেনি। রাহুল আবার বলেছেন, সকল হিন্দু নয়, বিজেপি। তিনি আরও বলেছেন, বিজেপি ও আরএসএস -এর কাছে হিন্দুধর্মের ঠেকা নেই।
মোদির মতো একই ধরণের চেষ্টা কি বিড়লাও করেছিলেন একবার? যদিও স্পিকারের চেয়ারে বসে এই হেন প্রয়াস করার কথা নয় তাঁর। কী করেছিলেন ওম বিড়লা? রাহুল যখন দেবদেবীদের ছবি দেখানোর পর সেগুলি ডেস্কে রাখছিলেন, বিড়লা একবার বলে ওঠেন, রাহুলজি, এইসব ছবি আমরা পুজো করি। এগুলোকে প্লিজ ডেস্কে রাখবেন না! ভাবটা এমন, এই ধরনের ছবি ফুটপাথে ফেলে বিক্রি হতে যেন কোনওদিন দেখেননি! কংগ্রেসের কেউ কেউ বলছেন, স্পিকারও রাহুলের বিরুদ্ধে হিন্দু বিরোধী ধুয়ো নতুন করে তুলতে এমন মন্তব্য করেছেন।
মোদ্দা কথা, হিন্দুধর্মের সাবেক (প্রাক ২০১৪) ছবিটি রাহুল এদিন সংসদে তুলে ধরতে চেয়েছেন। ভারতে যে মহামানবের সাগরতীর, সেই ছবিটিও রাহুল এদিন তুলে ধরেছেন।
বহুকাল আগে, তাঁর ঠাকুমার পিতৃদেব পণ্ডিত নেহরু লিখেছিলেন, ‘কে বেশি সাহসী? যে বন্দুক তুলে বলে হত্যা করব, নাকি সে বেশি সাহসী, যে বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে বলে, আমি বন্দুকে ভয় পাই না।’
এদিন সব ধর্মের আরাধ্যদের স্পর্শ করে রাহুল বলেছেন, ভয় পেও না, ভয় দেখিও না। এত কিছুর মধ্যে চব্বিশ পরবর্তী মোদিকে নিস্প্রভ দেখিয়েছে কি? সেটা আপনারাই বলুন!