Home / TRENDING / ইস্টবেঙ্গলের পুনর্জন্ম : ডার্বি কিন্তু থাকছেই বাঙালি জীবনে

ইস্টবেঙ্গলের পুনর্জন্ম : ডার্বি কিন্তু থাকছেই বাঙালি জীবনে

রণবীর ভট্টাচার্য

দুই তিন দিন আগের কথা। ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ক্লাব একটি চিঠি পাঠিয়েছিল গঙ্গা পাড়ের লাল হলুদ ক্লাবকে ১০০ বছর পূরণের শুভেচ্ছা জানিয়ে। পৃথিবী জুড়ে কোটি কোটি সমর্থক থাকা ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) এই বছর আইএসএল (ISL) খেলবে। বাঙ্গুর গ্রুপ এগিয়ে আসায় ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে কোয়েস পরবর্তী যে অচলাবস্থা দেখা গিয়েছিল, তার নিরসন হয়েছে। বলাই বাহুল্য, অনেকেই এই স্পনসর পাওয়ার মধ্যে অনেকেই রাজ্যের সামনের বছরের বিধানসভা নির্বাচনের বিধান পাওয়ার প্রচেষ্টা দেখছেন। সেই ভাবনা অমূলক নয়, বিশেষ করে ইস্টবেঙ্গল শুধু একটি ফুটবল দল, বাঙালির আবেগের স্ট্যাটাস সিম্বল। কিন্তু সব আলোচনা-সমালোচনা সরিয়ে রেখে বলাই যায় যে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব নতুন করে অক্সিজেন পেল। যারা ভারতে ফুটবল নিয়ে ওয়াকিবহাল, তারা সকলেই জানেন যে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ছাড়া ভারতীয় ফুটবল নিয়ে কোনরকম আলোচনা বৃথা!

অনেকেই হাহুতাশ করেন যে দেশীয় ফুটবল নিয়ে মানুষের আগ্রহ কেন কমে গিয়েছে – শুধু দর্শক হিসেবেই নয়, খেলোয়াড় অনেক কমে উঠে আসছে শেষ দেড় দশক জুড়ে। এর জন্য শুধু একটা কারণ বলা যায় না, বিস্তারিত বলতে গেলে অনেক দিক নিয়ে আলোকপাত করা দরকার। একসময় বাংলার বিভিন্ন জেলা থেকে খেলোয়াড় উঠে এসেছেন, যারা সাতসকালে ট্রেনে করে ময়দানে আসতেন, পরবর্তীকালে মেসে থাকতেন। এছাড়া অজস্র ছোট ক্লাব তো ছিলই যারা ময়দানের বিভিন্ন ডিভিশন জুড়ে খেলত। অফিস ক্লাবগুলোর কথা না বললেই নয়! সর্বভারতীয় স্তরের অফিস ক্লাবগুলোর কথাও অনেকেরই মনে আছে যেমন আইটিআই, স্টেট ব্যাংক অফ ট্রিবানকুর, কেরল পুলিশ এরকম অনেক ক্লাব। কিন্তু যেই দিন থেকে আই লিগ তার কৌলীন্য হারাতে শুরু করল, সেদিন থেকে সমস্যা তৈরি হতে শুরু করল। আর এখন ডেম্পো, মহীন্দ্রা, জেসিটির মত কত ক্লাব সর্বভারতীয় স্তরে আর নেই! দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্যগুলো থেকে ফুটবলে আগ্রহ তো কমেছেই, সাথে সাথে মহারাষ্ট্রের মত অনেক রাজ্যে গ্রাফ নিম্নগামী। সাবেক আই লিগে নিম্ন মানের বিদেশি বা বয়স্ক বিদেশি নিয়ে খেলিয়ে সার্বিক গুণমান কমেছে। সেই অর্থে আইএসএল নিয়ে এসেছে নতুন একটি দিক। ভালো-খারাপ পরের ব্যাপার, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ যে বানিজ্যিক একটি ক্ষেত্র তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে ফুটবল ঘিরে। এইরকম একটি পরিস্থিতিতে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের আইএসএল না খেলাটা শুধু লজ্জার না, তার চেয়েও বেশি দুশ্চিন্তার ছিল দেশীয় ফুটবলের ভবিষ্যতের কথা ভেবে। তাই নতুন স্পনসর এসে অনেকটাই সমস্যার সমাধান করেছে।

লাল হলুদ ক্লাব অনেকদিন আই লিগ পাইনি এটা সংখ্যাতত্ত্বের দিক থেকে একদমই ঠিক। কিন্তু তাই বলে সমর্থনে ভাটা পড়েনি। এর সাথে সাথে মোহনবাগানের সাথে চিরকালীন দ্বৈরথ তো আছেই। মাস চারেক আগেও পরিস্থিতি ছিল অন্যরকম যখন দুই বড় ক্লাবের আইএসএল খেলা অনিশ্চিত ছিল। সত্যি কথা বলতে গেলে, আইএসএল অনেকবার অনুষ্ঠিত হলেও সেভাবে দর্শকের সমর্থন গড়ে তুলতে পারেনি।কলকাতার ক্লাব এটিকে একাধিক বার আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হলেও কলকাতায় জনপ্রিয়তা পায়নি। তাই ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের যোগদান আরেক দিক থেকে ভারতীয় ফুটবলের মসনদে আইএসএলকে বিশেষ জায়গা দেবে এই মরসুম থেকে। আর আই লিগ? হয়তো জুনিয়রদের লিগে পরিণত হবে সামনের দিনে।

জাপানের মত দেশ জে-লিগ শুরু করে ফুটবলে অনেক উন্নতি করেছে। যখন নব্বইয়ের দশকে ভারতে জাতীয় লিগ শুরু হয়েছিল তখন অনেকেই জাপানের জে-লিগের তুলনা এনেছিলেন। কিন্তু অনেক কারণেই সেটা হয়নি। তার ফলস্বরূপ ফুটবলের ঐতিহ্য, সমর্থন থাকার সত্ত্বেও ভারত ফিফার তালিকা অনুযায়ী কখনো প্রথম ১০০তে থাকে, আবার কখনো নেমে যায়। কিন্তু বদলে যাওয়া ভারতের ফুটবলের মানচিত্রের ভালোর দিকে যাত্রা শুরু আশা করাই যায়। এই করোনা অবসাদের মধ্যে চলে যাওয়া দুই কিংবদন্তি পিকে ব্যানার্জি ও চুনী গোস্বামী ভারতের বিশ্বকাপে খেলা দেখে যেতে পারেননি। তাদের সেই অধুরা স্বপ্ন যেন পূরণ হতে পারে সামনের দিনে। ভারতীয় ফুটবল যদি আবার জায়গা ফিরে পায়, তাহলে কোনও রাজনৈতিক দলের আর মুখাপেক্ষী হতে হবে না স্পনসরের জন্য। পঞ্চপাণ্ডবদের ক্লাব ইস্টবেঙ্গলকে অনেক শুভেচ্ছা রইল সামনের আইএসএল এর জন্য।

Spread the love

Check Also

কেমন হলো, মুখ্যমন্ত্রীর এপিসোডের প্রথম ঝলক ?

সুচরিতা সেন, বিনোদন ডেস্ক রোজ বিকেলে বাংলার প্রতিটি ঘরে বিনোদন শুরু হয় এই শো এর …

বছর শুরুতে শিব দরবারে মিমি

চ্যানেল হিন্দুস্তান, বিনোদন ডেক্স বর্তমানে বেনারস ভ্রমণে ব্যস্ত টলিউড নায়িকা। সেখানকার অলি-গলিতে ঘুরছেন। সদ্য ওটিটি …

রশিদ খানের ফিরে দেখা জীবনধ্যায়

বিনোদন ডেস্ক, সুচরিতা সেন, আবার নক্ষত্রপতন, না ফেরার দেশে চলে গেলেন ওস্তাদ রশিদ খান। গানের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *