কমলেন্দু সরকার :
মহাভারতের বনপর্বে পুলস্ত্য মুনি যুধিষ্ঠিরকে আশীর্বাদ করে বলেছিলেন, তুমি অবশ্যইই ত্রিলোক প্রসিদ্ধ নর্মদা অবশ্যই দর্শন করবে।
পুলস্ত্য মুনিকে দেওয়া কথা রেখেছিলেন যুধিষ্ঠির। পাণ্ডবেরা বনবাসকালেই এসেছিলেন নর্মদার ধারে পুণ্যতীর্থ অমরকণ্টক। এখানে এসে তাঁদের সঙ্গে দেখা হয় মার্কেণ্ডেয় ঋষির। ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির মুনিকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, নর্মদার সৃষ্টির কথা। মার্কেণ্ডেয় মুনি খুব খুশি হয়েছিলেন পঞ্চ পাণ্ডবের ওপর। তারপর বলেছিলেন নর্মদার কথা—– দেবাদিদেব মহাদেব সকলের অগোচরে তপস্যায় মগ্ন ছিলেন ঋষ্য পর্বত বিন্ধ্যাচলের কোনও এক জায়গায়। সেইসময় রুদ্রতেজ থেকে ঘাম গড়িয়ে পড়ল। সেই ঘাম বইতে লাগল পাহাড়ের ওপর থেকে। সেই ঘাম থেকেই জন্ম নিল এক পরমাসুন্দরী। মহাদেবের ওই সুন্দরী কন্যা এক পায়ে দাঁড়িয়ে তপস্যায় রইলেন। তপস্যারত কন্যার ওপর খুব খুশি মহাদেব।
তখন নর্মদাকে বললেন পিতা মহাদেবকে, আপনি আমার ওপর প্রসন্ন হয়েছেন। আমি কতগুলো বর প্রার্থনা করতে পারি। মহাদেব বললেন, কি বর চাস। নর্মদা সাতট বরের কথা বললেন—– ১। পৃথিবীতে আমি যেন অমরত্ব পাই। ২। আমার প্রবাহে স্নান করলে সকলেই যেন পাপমুক্ত হয়। ৩। গঙ্গার মতো আমিও যেন পবিত্র হই। ৪। সমস্ত তীর্থে স্নান করার যে ফললাভ, আমার জলে স্নান করলে ফললাভ তার চেয়েও যেন বেশি হয়। ৫। শুধুমাত্র আমার দর্শনেই যেন ভক্তের মুক্তি ঘটে। ৬। মা পার্বতী আর আপনি সবসময়ই আমার প্রবাহের মধ্যেই থাকবেন। ৭। আমার জল যে-পাথরই স্পর্শ করুক-না কেন, সেই পাথরই যেন আপনারই রূপ পায়। এবং নর্মদেশ্বর বলে কথিত হয়।
মহাদেব তথাস্তু বললেন, তথাস্তু। মহাদেব তাঁর কন্যাকে আরও বলেন, তোর উত্তর দিকে যারা থাকবে তারা শিবলোকে বাস করবে। আর দক্ষিণ দিকে থাকবে তারা মৃত্যুর পর পিতৃলোকে গমন করবে।
তারপর নর্মদা গুপ্তভাবে এসে প্রকাশিত হলেন বিন্ধ্যপর্বতে।
নর্মদার রূপে মুগ্ধ হয়ে সব দেবতারাই বিয়ে করতে চাইলেন। কিন্তু কোনও দেবতাই নর্মদার ব্যক্তিত্ব এবং মহিমা অতিক্রম করতে পারলেন না। তখন কন্যা নর্মদাকে সঁপে দিলেন সমুদ্রের হাতে। মা নর্মদার এমনই মহিমা যে, পিতা মহাদেবের সঙ্গেই তাঁর নাম উচ্চারিত হয়। তাই যাঁরা নর্মদা পরিক্রমা করেন এবং সাধুসন্তেরা বলেন, নর্মদে হরে। নর্মদার ধারে আদিঅনন্তকাল থেকে ত্যাগী, তপস্বী, ঋষিমুনি আসেন আছেন। নর্মদা মানেই সুখপ্রদায়িনী অর্থাৎ যিনি সুখ বিতরণ করেন।
আরও পড়ুন :-
ধুতিকাণ্ডঃ গোয়েঙ্কাদের দেশবিরোধী বললেন সৌগত, সোমেন বললেন, ইংরেজের পা চাটা