দেবক বন্দ্যোপাধ্যায় :
খাতায় কলমে এখনও হয়নি, তবে মানসিকভাবে মুকুল রায়ের বিজেপি প্রবেশ হয়ে গেছে!
বল্লভভাই প্যাটেলের জন্মদিনে শ্রদ্ধা জানিয়ে, ওপরে প্যাটেল ও নিচে নিজের ছবি দেওয়া পোস্টার তিনি তাঁর অনুগামীদের দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দিয়েছেন। ৩১ অক্টোবর দিনটি ইন্দিরা গান্ধির মৃত্যুদিন। ১৯৮৪ তে তাঁর হত্যার পর থেকে দেশ জুড়ে কংগ্রেস এই দিনটি পালন করে। কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে তৃণমূল কংগ্রেস করার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রতি বছর এই দিনটি পালন করেন। তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই মুকুল রায়রা এই দিন ইন্দিরা গান্ধিকে স্মরণ করে আসছেন। কংগ্রেস সংস্কৃতিতে গান্ধি-নেহরু পরিবারের যে গুরুত্ব সেই গুরুত্ব ‘লৌহমানব’ প্যাটেলের কপালে জোটেনি বলেই অভিযোগ করে বিজেপি। ক্ষমতায় আসার শুরু থেকেই প্যাটেলকে তুলে ধরার বিবিধ কর্মসুচি নিয়ে আসছে বিজেপি। বিজেপির এই লাইনে এবার যোগ দিলেন মুকুলও। যদিও বিজেপিতে তাঁর যোগদান এখনও বাকি, তবু বিজেপিকে যে তিনি মনে মনে নিজের দল বলেই মানতে শুরু করেছেন, এই ফেসবুক পোস্টের মধ্যে দিয়ে তা বুঝিয়ে দিলেন মুকুল।
অমিত শাহ এখন হিমাচলে। গুজরাতে ক্ষমতা ধরে রাখা তো বটেই, তাছাড়াও আরামদায়কভাবে দলকে জিতিয়ে আনা এখন অমিতের ধ্যানজ্ঞান। হিমাচলে বীরভদ্র সিংহের কংগ্রেস সরকারের পতন ঘটানোটাও তাঁর বড় চ্যালেঞ্জ। প্রত্যাশিতভাবেই তিনি সেখানে সময় দিচ্ছেন। বিজয়বর্গীয়র সঙ্গে মুকুলের নিয়মিত কথাবার্তা হচ্ছে বিভিন্ন বিষয়ে। বিজয়বর্গীয় তাঁকে আরও কিছুদিন দিল্লিতে থাকতে অনুরোধ করেছেন।
অন্যদিকে মুকুলের বিজেপিতে যোগদানে বিলম্ব হওয়ায় উৎসাহিত হয়ে পড়ছে মুকুল-বিরোধী কয়েকটি মহল। তাঁরা ধরে নিতে শুরু করেছে তৃণমূল থেকে বেরিয়ে বিজেপির দরজায় বসে আছেন মুকুল কিন্তু বিজেপি দরজা খুলছে না। তবে বিজেপির শীর্ষ মহল বলছে বিষয়টি মোটেই এমন নয়। তাঁদের মতে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ সাধারণত দেখেন সিপিএম থেকে বা কংগ্রেস থেকে কোনও নেতা তৃণমূলে যোগ দিলেন আর তাঁকে সহসভাপতি পদ দিয়ে দলে নিয়ে নেওয়া হল। কংগ্রেসের ক্ষেত্রেও অনেকটা তাই। নেতারা হাসতে হাসতে একবার কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যান আবার হাসতে হাসতে কংগ্রেসে ফিরে আসেন। যেন একই বাড়ির শোওয়ার ঘর থেকে বসার ঘরে গেলেন ও আবার শোওয়ার ঘরে ফিরে গেলেন!
বিজেপিতে এমন উপায় নেই। অন্তত মুকুলের মত বড় মাপের নেতার ক্ষেত্রে তো একেবারেই নেই। আবার যাঁকে দলে নিয়ে বড় দায়িত্ব দেওয়ার কথা ঠিক হয়ে রয়েছে, তাঁর জন্য তো কখনওই নয়। এমনিতে বিজেপি ও আরএসএসের শীর্ষ সুত্র বলছে, মুকুল রায়কে নীতিগতভাবে দলে নেওয়া হয়ে গেছে। বিজয়বর্গীয় বলেছেন, “মুকুলবাবুর জন্য বিজেপির দরজা খোলা”। তবু কেন দেরি? আরএসএস ও বিজেপির শীর্ষ সুত্রের বক্তব্য প্রথমত অমিত শাহের সময় আর দ্বিতীয়ত, যেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তা হল কিছু ‘গুঢ় কারণ’। কি সেই গুঢ় কারণ? সোমেন মিত্র অভিযোগ করেছেন মুকুল যা করছেন তা মমতার সঙ্গে বোঝাপড়া করেই করছেন। বিজেপি কি এসব নিয়ে ভাবিত? রাজ্য বিজেপির এক নেতা দিল্লিতে গিয়ে মুকুলের বিরুদ্ধে লবি করছেন বলেও খবর। তাহলে কী তাঁর কথাতেই থমকে আছে মুকুলের পদ্ম প্রবেশ!
বিজয়বর্গীয় বলেছেন, “এসব কথার কোনও গুরুত্ব আমাদের কাছে নেই”। তাহলে কেন বিলম্ব!
বিজেপি ও সঙ্ঘের শীর্ষ সুত্রের বক্তব্য, কারও সম্পর্কে খোঁজ খবর যদি নিতেই হয় তাহলে সে কাজ তাঁরা নিজেরাই করতে পারেন কারও মুখে ঝাল খাওয়ার দরকার তাঁদের নেই।
বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
https://www.youtube.com/channelhindustan
https://www.facebook.com/channelhindustan