দেবক বন্দ্যোপাধ্যায় :
অক্টোবরের ৮ তারিখ সাংবাদিক সম্মেলন করবেন মুকুল রায়। কী বলবেন তিনি! রাজ্য তথা দিল্লির রাজনৈতিক মহলের চোখ এখন সেদিকেই।
তিনি যে তৃণমূল ছাড়বেন, তা নিয়ে এখন আর কারও সন্দেহ নেই। ৮ তারিখ সেই ঘোষণা করবেন তিনি। তবে দল ছেড়ে নতুন দল না বিজেপি? এই প্রশ্ন এখনও ঝুলছে। দুটি সম্ভাবনার কথাই এখনও শোনা যাচ্ছে। প্রথম সম্ভাবনা, অর্থাৎ নতুন দল, সেই দিকেও যেমন জোরাল যুক্তি রয়েছে আবার দ্বিতীয় সম্ভাবনা, অর্থাৎ বিজেপিতে যোগদান, সেই দিকেও যুক্তির অভাব নেই। নতুন দলের পক্ষে প্রধান যুক্তি, রাজ্যের সুন্নি মুসলমান, যাঁদের সমর্থন এখন তৃণমূলের দিকে, এখনই তাঁদের সমর্থন বিজেপির দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয় বলেই মনে করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে মুকুল নতুন দল করলে, তাঁদের সমর্থন পাওয়া অনেকাংশেই সম্ভব। এমনকি তৃণমূল গঠন ও বেড়ে ওঠার সময়কালে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসমুখী এই ভোটারদের তৃণমূলের দিকে আনতে মুকুলের বড় ভূমিকা ছিল। দলের মধ্যে, যাঁদের কাজে লাগিয়ে মুকুল বাম ও কংগ্রেসের এই ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসিয়েছিলেন, তাঁর সেই সেদিনের অনুগামীদের অনেকেই এখনও তাঁর সঙ্গেই আছেন। সুতরাং মুকুল নতুন দল করলে সংখ্যালঘু কর্মী-সমর্থকদের তাঁর দিকে নিয়ে আসা অনেকটাই সহজ হবে। আবার তাঁদের দিয়ে সংখ্যালঘু সাধারণ ভোটারকে প্রভাবিত করাও সহজ হবে। এই কথা ঠিক দল বেড়ে ওঠার পিছনে মুকুলের সাংগঠনিক দক্ষতার যেমন ভূমিকা আছে, তেমনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৎ, লড়াকু, জনমোহিনী ভাবমূর্তির ভূমিকাও রয়েছে। মমতাহীন মুকুল কী আগের মত পারফর্ম করতে পারবেন! এই প্রশ্ন রয়েছে। উত্তরও রয়েছে। মনে করা হচ্ছে, ৯৮-এর মমতার ইমেজ আর তাঁর আজকের ইমেজ এক নয়। এমনকি ২০১১-র মমতার সঙ্গেও এখনকার মমতার বিস্তর ফারাক। মমতাকে নিয়ে মানুষের আবেগ এখন আর আগের মত নেই। ফলতঃ মমতা ছাড়া নতুন ইনিংস শুরু করতে মুকুলের কোনও অসুবিধা হবে না। সুতরাং নতুন দল গঠনই শ্রেয়। এটা একটা যুক্তি। নতুন দলের পক্ষে আরও যুক্তি আছে। প্রথমত নতুন দল হলে সেখানে বাম ও কংগ্রেস থেকেও অনেকে সহজে চলে আসবেন। রাজ্যে তৃণমূল বিরেধী অংশের একটা প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠতে পারে এই দল। যা কিনা বিজেপিতে গেলে সহজ হবে না। কিছু ক্ষেত্রে অসম্ভব হয়ে পড়বে।
উল্টোদিকে, সরাসরি বিজেপিতে যাওয়ার পক্ষে প্রধান যুক্তি হল, মুকুলের অনুগামীদের নিরাপত্তা। অনেকে মনে করছেন, একটি জাতীয় দলে না গিয়ে নতুন দল করলে, কর্মীদের শাসক দলের রোষের মুখে পড়তে হতে পারে। পুলিশি ধরপাকড়, মিথ্যা মামলা ইত্যাদি কোনও সম্ভাবনাই উড়িয়ে দিচ্ছেন না তাঁরা।
নতুন দল হোক বা বিজেপিতে যোগদান অক্টোবরের ৮ তারিখ তৃণমূল ছাড়ছেন মুকুল। নাড়ি ছেঁড়ার যন্ত্রণা আছে। নিজের হাতে তৈরি বাগান ছেড়ে বেরিয়ে আসার কষ্ট আছে। ভিড় করে আসা স্মৃতি আছে। আবার অপমানের জ্বালাও আছে, ব্রাত্য হয়ে যাওয়ার গ্লানিও আছে। সব কিছু চেপে রেখে জিজ্ঞাসা করলেই বলছেন, “এখন পুজোর আনন্দে মেতে আছি।”
যা বলার বলবেন ৮ তারিখে। অক্টোবরের ৮।
বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
https://www.youtube.com/channelhindustan
https://www.facebook.com/channelhindustan