কমলেন্দু সরকার :
ইন্দু সরকার আসছে। ২১ জুলাই। ইন্দু সরকার কোনও রক্তমাংসের নারী নন, পরিচালক মধুর ভান্ডরকরের ছবির চরিত্র। মধুর এই প্রথম পিরিয়ড পিস নিয়ে ছবি করলেন।
‘ইন্দু সরকার’ ছবির বিষয় কংগ্রেসকে বিড়ম্বনায় ফেলবে এমনটাই মনে করছেন অনেকেই। ২৫ জুন ১৯৭৫। সারা ভারতে জারি হয়েছিল এমারজেন্সি। এই এমারজেন্সি চালু ছিল ২১ মার্চ ১৯৭৭ পর্যন্ত। স্বাধীনতার পর দেশের সবচেয়ে কালো অধ্যায়। দীর্ঘ ২১ মাস ভারতের ইতিহাসে সবথেকে কালোদিন বলে চিহ্নিত। এমার্জেন্সি চালু করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। রাষ্ট্রপতি ছিলেন ফখরুদ্দিন আলি আহমেদ। মিসেস গান্ধীর পরামর্শদাতা ছিলেন সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়।
মধুর ভান্ডকরের ছবি এমনই এক বিষয় নিয়ে। এই প্রজন্ম জানে না এমার্জেন্সি সম্বন্ধে। জানার কথাও নয়। মাঝে ৪২টা বছর কেটে গেছে। আমার মতো যাঁরা ওইসময় যুবক ছিলেন, এমার্জেন্সির মুখোমুখি হয়েছিলেন, তাঁরা জানেন কী ভয়াবহ ছিল দিনগুলো! বাক স্বাধীনতা ছিল না। ছিল না অন্য রাজনীতি করার অধিকার। মিছিল-মিটিংও করা যেত না। সংবাদপপত্রের স্বাধীনতা ছিল না। সারা দেশ জুড়ে ধরপাকড় চলত। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা লুকিয়েচুরিয়ে বেড়াতেন। কলকাতাবাসীও লক্ষ করেছিলেন এমার্জেন্সির কালা নিয়মকানুন। গৌরকিশোর ঘোষ, বরুণ সেনগুপ্ত-সহ একাধিক সাংবাদিক গ্রেফতার হয়েছিলেন। গৌরকিশোর ঘোষ এমার্জেন্সির প্রতিবাদে দাড়ি রাখা শুরু করেছিলেন।
ভংয়কর ছিল এমার্জেন্সির দিনগুলো। ইন্দিরা-পুত্র সঞ্জয় গান্ধীর তখন প্রবল প্রতিপত্তি। তাঁরই নির্দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষকে বন্ধাত্ব্যকরণ করা হয়েছিল এবং রাজনৈতিক নেতাদের জেলে ঢোকানো হয়েছিল। পুলিশের অত্যাচারে ভীত ছিল মানুষ। এমনই অগণতান্ত্রিক ছিল তৎকালীন কংগ্রেস সরকার।
মধুরের ছবির বিষয় যখন এমনি তখন কংগ্রেস যে বিপাকে পড়বে তা নির্দ্বিধায় বলা যেতে পারে। তার ওপর মোদীর বিকল্প হিসেবে যখন রাহুল গান্ধীকে খাড়া করার চেষ্টা চালাচ্ছে কংগ্রেস। রাহুল তো গান্ধী পরিবারেরই প্রতিনিধিত্ব করছেন। তাই বিজেপিকে যখন অগণতান্ত্রিক বলবে কংগ্রেস তখন বিজেপিও কী ছেড়ে কথা বলবে এমার্জেন্সির প্রসঙ্গ তুলে! বিশেষ এই প্রজন্মের যুবাদের এমার্জেন্সির কুফল এবং অন্ধকারের দিকের কথাও বলবে। কেননা, বিজেপি এই নতুন প্রজন্মকে নিজেদের দিকে টানার চেষ্টা চালিয়ে যাবে। যুবকদের অনেকেই বর্তমানে বিজেপি-র দিকে ঝুঁকে আছেন। বাকিদেরও দলে টানার চেষ্টা চালিয়ে যাবে।
মধুর ভান্ডরকরের ‘ইন্দু সরকার’-এ যেমন সেইসময়কার রাজনীতিকদের দেখানো হয়েছে, তেমনই রয়েছে ফিকশনাল চরিত্র। ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকায় আছেন সুপ্রিয়া বিনোদ। সঞ্জয় গান্ধীর চরিত্রে নীল নীতিন মুকেশ। ক্ষমতাশালী মহিলা চরিত্র ইন্দু সরকার চরিত্র করছেন কীর্তি কুলহারি। ছবির জন্য তাঁকে শিখতে হয়েছে স্পিচ থেরাপি। এই ছবিতে কাজ করেছেন কলকাতার টোটা রায়চৌধুরী। এই ছবিতে বলিউডের বর্ষীয়ান অভিনেতা অনুপম খের। তিনি তো এমন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ছবি করে বেজায় খুশি। তাঁর খুশি হওয়ারই কথা। কেননা, তিনি যে গেরুয়া শিবিরের তা আর নতুন কথা কী!
ভাল লাগলে লাইক এবং শেয়ার করুন