পার্থসারথি পাণ্ডা
পঞ্চবটীর কুটিরের নিরাপদ গণ্ডি থেকে রাবণ অতিথির ছলনায় বাইরে আসতে বাধ্য করেছিলেন সীতাকে। সীতাও আজন্ম সংস্কারে ভুলে গিয়েছিলেন যে, সব অতিথি দেবতা হয় না। সোনার হরিণরূপী মারীচের পিছু নিয়ে রাম-লক্ষ্মণ বুঝেছিলেন যে, সোনার হরিণ বলে কিছু হয়না। আসলেই সোনার হরিণ নেই। বুঝেছিলেন সংসারে কিছুতেই সুখ যাপন করা যায় না, সে চকিত হরিণের মতোই চপল, সোনার হরিণের মতোই মায়া। তবু তার প্রতি অদম্য আকাঙ্ক্ষা থাকে, থাকে অদম্য ইপ্সা। সেই ইপ্সার বশেই রাবণ বরণ করলেন, হরণ করলেন সাক্ষাৎ মৃত্যুরূপী সীতাকে। আর সীতা বরণ করলেন দীর্ঘ বিচ্ছেদ, সতীত্বের পরিপ্রশ্ন। সেই প্রশ্নপর্ব বারবার অগ্নিপরীক্ষার পরও কোনদিন থামেনি।
মারীচ বধ করে রাম লক্ষ্মণ যখন কুটিরে ফিরলেন তখন কুটির শূন্য। সেখানে সীতা নেই। স্ত্রীর প্রতি অগাধ ভালবাসায় শ্রীরাম কোনকিছু না-বুঝেই অলীকের পেছনে ছুটেছিলেন। বউদির পিড়াপীড়িতে লক্ষ্মণও মিথ্যে ডাকে বিহ্বল হয়ে ছুটেছিলেন রামের সন্ধানে। অবতার হয়েও তাঁরা ভুল করেছিলেন। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন মানুষই ভুল করে। কারণ, তাঁদের এ অবতার মানব অবতার।
সীতাকে হারিয়ে বিলাপের কাল পেরিয়ে দুই ভাই তাঁকে খুঁজতে বেরলেন। খুঁজতে খুঁজতে শেষে পঞ্চবটী ছেড়ে হাজির হলেন দণ্ডক অরণ্যে। একদিন সেই বনে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত শ্রান্ত দুই ভাই বিশ্রাম নিতে বসলেন। তাঁরা পথ চলে ক্লান্ত, সীতা উদ্ধারের কোন উপায় না-দেখে হতাশায় শ্রান্ত। দুজনেই বিষণ্ণ। এমন সময় সেই পথে শিব আর পার্বতীকে দেখা গেল। তাঁরা বেরিয়েছিলেন অরণ্য ভ্রমণে। শিব দূর থেকে দেখলেন দুই দিব্যপুরুষ পথের পাশে বসে আছেন। এরা কারা? কাছে এসেই চিনতে পারলেন শ্রীরাম ও লক্ষ্মণকে। দুজনেই বসে আছেন আনমনা, গভীর কোন ভাবনায় মগ্ন, বাইরের প্রকৃতিতে কি ঘটছে, দুজনের সেদিকে কোন হুঁশই নেই যেন। শিব বসলেন শ্রীরামের পদতলে, উত্তরীয় দিয়ে মুছিয়ে দিলেন পায়ের ধুলো। বুনো ফুলে নিবেদন করলেন অর্ঘ্য, জানালেন প্রণতি। তখন যেন হুঁশ ফিরল রামের। চেয়ে দেখলেন পদতলে স্বয়ং স্বয়ম্ভূ শিব। তখন শিবকে তুলে জড়িয়ে ধরলেন বুকে, বললেন, পদপ্রান্তে নয় প্রভূ আপনার আসন হৃদয় জুড়ে। বক্ষলগ্ন শিবের মুখে ছড়াল তৃপ্ত ভক্তের স্মিত হাসি। শিব বললেন, হতাশ হবেন না প্রভু, নিরাশ হবেন না। হনুমানের অবতার নিয়ে এই ভক্ত আপনারই অপেক্ষা করছে প্রভু। জগতে যারা তুচ্ছ, যারা সকলের কাছে হেয়, সেই অন্ত্যজদের নিয়ে আপনারই প্রতীক্ষায় আছে। তাদের দিয়েই হবে সীতামায়ের উদ্ধার, তারাই হবে আপনার রামসেনা।
তারপর লক্ষ্মণের সাথে নমস্কার ও প্রীতি বিনিময় করে শিব বিদায় নিলেন। শিব যখন শ্রীরামের পদসেবা ও পুজো করছিলেন, তখন অত্যন্ত অবাক হয়েছিলেন পার্বতী। বুঝতে পারছিলেন না, সর্বদেবতার পূজ্য দেবাদিদেব মহাদেব সামান্য একজন মানবের পুজো করছেন কেন! এর মধ্যে প্রভূর কি কোন লীলা আছে? প্রশ্নটা তাঁকে পীড়িত করছিল অনেক্ষণ ধরে। এবার স্বামীকে একান্তে পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন সে-কথা। শিব হেসে মায়াদেবী তোমাকে প্রভাবিত করেছেন বলেই তুমি তাঁকে চিনতে পারনি দেবী। তিনি সামান্য মানবমাত্র নন, তিনি স্বয়ং বিষ্ণু। আমি প্রলয় ঘটাতে পারি, তিনি করেন রক্ষা। আমি বিষ ধারণ করতে পারি, তিনি করেন অমৃতের রক্ষা। তাই তিনি জগতের প্রণম্য তো বটেনই, আমারও প্রণম্য। তাই ভগবান রামের সেবার অধিকার লাভের জন্যই আমি এই যুগে নিয়েছি হনুমানের অবতার। অচিরেই মর্ত্যবাসী দেখবে ভক্ত ও ভগবানের মিলন।
বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
https://www.youtube.com/channelhindustan
https://www.facebook.com/channelhindustan