ওয়েব ডেস্ক :
২২ মে সাংবাদিক নিগ্রহের প্রতিবাদে আমরা কবি, সাহিত্যিক, ফোটোগ্রাফার, নাট্যব্যক্তিত্ব, শিল্পী, সাংবাদিকদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম তাঁদের প্রতিক্রিয়া। তাঁরা কী বললেন।
মিরাতুন নাহার, সমাজসেবী : গতকালের সাংবাদিক নিগ্রহের ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। সাংবাদিকদের ভূমিকা পালন করতে দেওয়া হয়নি। সাংবাদমাধ্যমের ওপর নিজের দাবি চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়।
সুনীল কে দত্ত, ফোটোগ্রাফার: আমি একটি শব্দই বলবো— অত্যন্ত দুঃখজনক।
প্রণবকুমার মুখোপাধ্যায়, কবি: ওরা তো বলেকয়েই গেছে। কিন্তু এভাবে ঠেকানো ঠিক নয়। গণতন্ত্রে যে- ব্যবহার করা উচিত, এরা করছে না। এরা ভয় পাচ্ছে।
বিভাস চক্রবর্তী, নাট্যব্যক্তিত্ব : শুধু সাংবাদিক নয়, যে-কোনও কাউকে নিগ্রহ করা অগণতান্ত্রিক। সাংবাদিকদেরও বোঝা উচিত সবাই যদি মার খায় তাহলে সাংবাদিকরাও তার বাইরে যাবে না। কখন কে, কেন, কাকে মারছে, সেটা যে মারছে তার ওপর নির্ভর করে। যে মার খাচ্ছে তার ওপর নয়
রমানাথ রায়, সাহিত্যিক: সাংবাদিকদের কাজই হচ্ছে খবর সংগ্রহ করা। সেখানে পুলিশ বাধা দিলে বা নিগ্রহ করলে সেটা বেআইনি কাজ। পুলিশ যে এই কাজ করছে তা সরকারের মদতে। সরকারের প্রশয় ছাড়া পুলিশ এই কাজ করতে পারবে না। সরকার যখনই বিরোধী পক্ষকে ভয় পায়, তখন তাঁদের প্রতিবাদ রুখে দেওয়ার জন্য এই ধরনের রাস্তা বেছে নেয়। আসলে সরকার যত দুর্বল হতে থাকে, সে তত ভয় পেতে থাকে এবং এই ধরনের কাজ করায়। সরকারের মদত না থাকলে স্বেচ্ছায় পুলিশ এই ধরনের কাজ করতে পারবে না। পুলিশের সমালোচনা বা সরকারের সমালোচনা দরকার। এই ঘটনার ভয়ংকর নিন্দা করছি।
রথীন্দ্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ষীয়ান সাংবাদিক: সাংবাদিকরা মার খাচ্ছেন, এটা কঠোরভাবে নিন্দা করা উচিত। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, যে রাজনৈতিক মতবাদের সরকারই থাকুক না কেন, সাংবাদিকদের সঠিক ভাবে কাজ করতে দেওয়া উচিত। সেই কাজে কোনও ভাবে বাধা সৃষ্টি করা অন্যায়।
সমীর আইচ, শিল্পী: মুখ্যমন্ত্রী কখন সাংবাদিকদের মিষ্টি খাওয়াচ্ছেন, বাসের ভাড়া ফ্রি করে দিচ্ছেন। আবার তাঁর পুলিশ সাংবাদিকদের লাঠি পেটা করছে। মুখ্যমন্ত্রীর কোনটা মুখ আর কোনটা মুখোশ বোঝা মুশকিল। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তাঁর ভাল সম্পর্ক বলেই জানি। তাহলে কী এসবই লোক দেখানো নাটক! মুখ্যমন্ত্রী বলছেন আমায় চমকাবেন না এদিকে নিজেই সকলকে চমকে বেড়াচ্ছেন।
বিভাস রায়চৌধুরী, কবি : জীবিকার প্রয়োজনে প্রত্যক্ষভাবে সাংবাদিকদের যে-কোনও ঘটনার মধ্যেই থাকতে হয়। তাই কোনও দুর্ঘটনা এড়িয়ে যাওয়ার উপায় থাকে না। এইজন্যই সাধারণ মানুষ জানতে পারে। সাংবাদিকদের সারা বিশ্বেই মান্যতা করে এই কাজের জন্য। আজ মুখ বন্ধ, চোখ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য ভয় দেখানো হয়। সমাজের পক্ষে এটা খুবই ভয়ের ব্যাপার।
যে মারবে
সে হারবে
কাবেরী রায়চৌধুরী, সাহিত্যিক : সংবাদপত্রের স্বাধীনতাতে হস্তক্ষেপ করা অত্যন্ত নিন্দনীয়। যখন যে দল ক্ষমতায় তাদের হয়েই পুলিশ কাজ করবে। আমি এর তীব্র নিন্দা করছি।
ইন্দ্রনীল সান্যাল, সাহিত্যিক : সাংবাদিকদের গায়ে হাত দেওয়া অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং ন্যক্কারজনক। যখন যে ক্ষমতায় আসে, পুলিশ তাদের কথাই শোনে। অতীতে হয়েছে, বর্তমানে হচ্ছে, ভবিষ্যতেও হবে। সাংবাদিকদের সঙ্গে আছি। পুলিশের নিন্দা করছি।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়, শিক্ষামন্ত্রী : সাংবাদিক নিগ্রহের ঘটনায় আমরা দুঃখিত। তবে পুলিশের মার খাওয়ার ঘটনাও সমর্থনযোগ্য নয়।
অভিমন্যু মাহাত :
আমার তো গিয়েছিলাম পেটের জন্য
কিছুটা স্বেচ্ছাসেবী, সত্যের সকালে
তোমরা এলে গুপ্তিমন্ত্রে ক্যাডার হয়ে
উর্দি ছাড়া, উর্দি পরে সন্ত্রাস চালালে।
সত্যের ছবি তোলা যাবে না, অপরাধ
লাঠি-রাইফেলের ঘায়ে রক্তাক্ত কাঁধ
নীতি শাসন যদি মুঠোয় ধরা দেয়
কোথায় থাকে উর্দির সব রত্নাবলি?
যখন তুমি টেবিল তলায় লুকোও
আজকে বঙ্গভূমে তোমার বাহুবলী!
পিঠে কালসিটে তুবড়ে যাওয়া মুখ
কাল ঝলসাবেই কলমের সন্ত্রাস
উর্দি তোমার মুদ্রাদোষ , চির হারেম
শিরদাঁড়া কোথায় তোমার দলদাস?
যতই তুমি মারো, পক্ষে জনতার রায়
বাজে গিরিধারী ঢাক, গঙ্গাজল গড়ায়!
(সাংবাদিক নিগ্রহের প্রতিবাদে ছবিটি একেছেন কার্টুনিস্ট উদয় দেব । ওঁর সম্মতি নিয়ে ছবিটি আমরা ব্যবহার করলাম । )
https://youtu.be/VhVEkw92L38