Breaking News
Home / TRENDING / রাজ্যপালের ওপর গোসা করে মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়তে চেয়েছিলেন মমতা, এই অভ্যাস তাঁর আজকের নয়

রাজ্যপালের ওপর গোসা করে মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়তে চেয়েছিলেন মমতা, এই অভ্যাস তাঁর আজকের নয়

ঝড়ের ঠিকানা – পর্ব-৯ :

সঞ্জয় সিংহ       :

(জনপ্রিয় এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক  সঞ্জয় সিংহের স্মৃতিসরণিতে অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ) 

তিনি কখন কি পদক্ষেপ করেন একসময়ে তাঁর দলের অনেক নেতা কর্মীই বুঝতে পারতেন না। কংগ্রেসে থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে দলের অনেক নেতাই মনে করতেন, তিনি ‘আনপ্রেডিক্টটেবল’ কথাটা একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতো ছিল না।
মহারাষ্ট্র নিবাস হলে দলের সভাপতি নির্বাচনে তিনি হেরে যাওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কোণঠাসা করতে উঠে পড়ে লেগেছিলেন দলে তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর নেতারা। ব্যাপারটা দাঁড়িয়েছিল, নিজেদের নাক কেটে মমতার যাত্রা ভঙ্গ করার মতো! ১৯৯২ সালের ৮ এপ্রিল মহারাষ্ট্র নিবাসের চক্রব্যূহ থেকে মমতাদির বেরিয়ে আসার ঠিক দু’মাস বাদেই ছিল বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। সেখানে প্রার্থী হয়েছিলেন মমতা-ঘনিষ্ঠ আইনজীবী দিব্যেন্দু বিশ্বাস। তাঁকে জয়ী করার জন্য মমতাদি নিজে তো বটেই, সাধন পান্ডে, সৌগত রায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের মতো নেতারাও খুবই সক্রিয় ছিলেন। ভোটের দিন ব্যাপক গোলমালও হয়েছিল। সেই গোলমালের মধ্যে পড়ে স্বপন চক্রবর্তী নামে এক ব্যক্তি পুলিশের গুলিতে মারাও যান। দিব্যেন্দুবাবু ভোটে জিততে পারেননি। ভোটের পর মমতাদি অভিযোগ করেছিলেন, “ওটা ভোট ছিল না। সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের কয়েকজন নেতার গটআপ হয়েছিল। রাজনীতির ময়দানে দেওয়া-নেওয়া পালা ছিল।”
কেন্দ্রের ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী থাকলেও মমতাদি বুঝতে পারছিলেন, খোদ দক্ষিণ কলকাতেই তাঁর রাজনৈতিক ‘ক্ষমতা ও জনপ্রিয়তা’ খর্ব করার চেষ্টা চলছে। আমি আগেও লিখেছি, বিপর্যয় কাটাতে লড়াইকেই হাতিয়ার করেন মমতাদি। এই সময়েই মমতাদি আওয়াজ তোলেন, ‘সচিত্র পরিচয়পত্র’ ছাড়া ভোট দেওয়া যাবে না। বস্তুত, ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই এই দবিতে ‘মহাকরণ অভিযান’ কর্মসূচির সলতে পাকানো শুরু হয় এই সময় থেকেই।
তবে ২১ জুলাই কর্মসূচির আগেই মমতাদি যে আরও বড় চমক দিতে চলেছেন সেটা অনেকেই টের পাননি। ওই যে কংগ্রেসের কোনও কোনও নেতা তাঁর সম্পর্ক ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ বলতেন, সেটা বোঝা গেল ১৯৯২ সালের ২৫ নভেম্বর! কী হয়েছিল সেদিন তা জানানোর আগে প্রেক্ষাপটটা বলে দিই।
মমতাদির কথায়, “বহুদিন ধরেই সহকর্মীদের ইচ্ছে ছিল ব্রিগেডে একটা সমাবেশ করলে কেমন হয়? ” ব্যস, আচমকাই ধর্মতলায় এক সমাবেশ থেকে এক বিকেলে তিনি ঘোষণা করে দিলেন, ব্রিগেডে ২৫ নভেম্বর সমাবেশ হবে এবং সেখান থেকেই বামফ্রন্টের (পড়ুন সিপিএমের) ‘মৃত্যু ঘণ্টা’ বাজানো হবে। এ পর্যন্ত তো ঠিকই ছিল। কিন্তু সেই ব্রিগেড সমাবেশ থেকেই মমতাদি যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা ঘোষণা করে দেবেন এটা বেশির ভাগ মানুষই তা ভাবতে পারেননি!
মন্ত্রিসভা থেকে কেন ইস্তফা তা জানানোর আগে, সে দিন বিগেডে জলোচ্ছ্বাসের মতো মানুষের ঢলের কথা বলে নেওয়া যাক। দিল্লি থেকে তখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়, সন্তোষমোহন দেব প্রভূত সাহায্য করছেন মমতার ব্রিগেড সমাবেশ সফল করার জন্য। সমাবেশের আগের দিন অর্থাৎ ২৪ নভেম্বর প্রবল বৃষ্টি হল। কিন্তু ২৫ নভেম্বর সকাল হতে-না-হতেই ঝকঝকে রোদে ব্রিগেড ভেসে গেল। আর তারপরই হল ইতিহাস। বেলা যত বাড়ছে, ততই সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো মানুষের ঢেউ ব্রিগেড ভাসিয়ে দিচ্ছে। মঞ্চ প্রায় ভেঙে পড়ার মতো হয়েছিল!
আর সেই প্রবল জনজোয়ারে ভেসে মমতা বামফ্রন্টের মৃত্যুঘণ্টা তো বাজালেন। তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হল, তখন সেই মঞ্চে ছিলেন বামফ্রন্টের প্রাক্তন মন্ত্রী বিশিষ্ট বাম নেতা যতীন চক্রবর্তীও। কিন্তু আসল চমক ছিল একটু পরেই। মমতাদি সমাবেশ থেকে ঘোষণা করে দিলেন, তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করছেন।
পরে মমতাদি কারণটা ব্যাখ্যা করেছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, “সেদিন ব্রিগেডের সভায় দাঁড়িয়ে আমার মনে হয়েছিল, বাংলার এত মানুষ আমার ডাকে সাড়া দিয়েছেন। এখন দিল্লিতে মন্ত্রীর চেয়ারে বসে থাকা মানে এই মানুষদের আবেগ-ভালবাসাকে উপেক্ষা করা। তাই আর মন্ত্রী না থেকে এবার সিপিএমের দ্বারা অত্যাচারিত মানুষের রক্ত-ঋণ শোধ করতে মাঠে নেমে লড়তে হবে।”
শুধু কি এই কারণ? নাকি নিজের মুখোমুখি দাঁড়াতে চেয়েছিলেন মমতাদি? সে কথা পরের বার।

 

 

লাইক শেয়ার ও মন্তব্য করুন

বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

Spread the love

Check Also

নির্মলার কোনও অর্থনৈতিক চিন্তা-ভাবনা নেই

সুমন ভট্টাচার্য এবারের বাজেটটা না গরিবের না মধ্যবিত্তের না ব্যবসায়ীদের কাউকে খুশি করতে পারলো। দেখে …

শুধুমাত্র শুদ্ধিকরন আর বাংলাদেশ নয়, মমতার যে কথায় কান দিল না মেইনস্ট্রিম মিডিয়া

“ভর্সা যেন না পায় কোনও দাঙ্গামুখো হতচ্ছাড়া, সবাই মিলে বেঁচে থাকার ভর্সা তাদের করুক তাড়া’ …

কোন সাহসে দলের প্রধান স্লোগান কে চ্যালেঞ্জ করলেন শুভেন্দু? কপালে ভাঁজ বিজেপির

দেবক বন্দ্যোপাধ্যায় উফ্! শুভেন্দুর বক্তৃতা শুনে সেই যে গায়ে কাঁটা দিয়েছে সেই কাঁটা আর যায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *