জ্যোতিস্মিতা রায় :
দিল্লি থেকে বৃন্দাবন যাওয়ার পথে ছোট্ট গ্রাম বরসানা। লোকমুখে এর পরিচিতি ‘রাধাগ্রাম’ নামে। শোনা যায় এই গ্রামেই নাকি জন্মেছিলেন রাধা রানি। লোকমুখে শোনা যায়, পাশের নন্দগ্রাম থেকে শ্রীকৃষ্ণ বরসানায় আসতেন প্রিয় সখী রাধার সঙ্গে দেখা করতে। একবার দোলের আগে, বরসানায় এসে রাধা ও তাঁর সঙ্গীনীদের সঙ্গে ঠাট্টা-তামাসা করেছিলেন কান্হা। ব্যস! আর যায় কোথায়। কৃষ্ণের কৌতুকে রাগ করে তাঁকে নাকি লাঠি হাতে তাড়া করেছিলেন রাধা ও তাঁর সখীরা। পূরাণের সেই গল্প মাথায় রেখেই বরসানায় খেলা হয় ‘লঠমার হোলি’। সাধারনত দোলের এক সপ্তাহ আগে হয় লঠমার হোলি। এদিন নন্দগ্রাম সহ আশপাশের গ্রাম থেকে আসা যুবকদের লাঠি পেটা করেন গ্রামের মহিলারা। যাঁরা লাঠি পেটা করতে চান না, তাঁরা ছাদ থেকেই ছেলেদের ওপর রঙ ভর্তি জলের বালতি, এবং আবির ছুঁড়ে দেন। অনেকে আবার রসিকতা করে পলাশ ফুলও ছোঁড়েন। এই সময়টা উত্তর ভারতে শীতের হাল্কা একটা আমেজ থাকে। ভোরের দিকে অল্প কুয়াশাও থাকে। তারই মধ্যে সকাল ৬টা থেকেই শুরু হয় হোরি খেলা। হিমেল হাওয়ার মধ্যে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে গিয়ে গায়ে ঠান্ডা জল পড়লেও রাগ করেন না কেউই। এদিন গ্রামের সকল পুরুষই সখীর অনুগত, পত্নী নিষ্ঠ। তিই এই সুযোগে সারা বছরের মনের ঝাল মিটিয়ে নেন অনেক মহিলাই। লঠমার হোলির আড়ালে বছরভর অত্যাচারের শোধ তোলেন বরের ওপর।
যাই হোক, লাঠালাঠির পর্ব শেষ হলে শুরু হয় মিষ্টিমুখ। এতক্ষণ যাঁর ওপর লাঠি চালাচ্ছিলেন, তাঁকে সাদরে মিষ্টি খাওয়ানো হয়। কোথাও আবার চলে মান ভাঙানোর পালা। বেলা বারোটার মধ্যে সব মিটিয়ে মন্দিরে পুজো দেন স্থানীয়েরা। গোটা ভারতে এই একটিই মন্দির রয়েছে রাধা রানির। সারাটা দিন হাসি-ঠাট্টা তামাসায় গ্রামটি সত্যি যেন পূরাণের সেই দিনটায় ফিরে যায়।
বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
https://www.youtube.com/channelhindustan
https://www.facebook.com/channelhindustan