চিরজিত পাল :
বাবা ঋষি কাপুর আছেন, ছেলে রণবীর কাপুর নেই, ছেলের বান্ধবী ক্যাটরিনা কইফ ছিলেন এবং আছেন যদিও এখন আর বান্ধবী নেই। গায়ক অভিজিৎ ভট্টচার্য কে বার করে দেওয়া হয়েছে, সোনু নিগাম নিজেই বেরিয়ে গেছেন, অভিনেতা পরেশ রাওয়ালকে বার করে দেবার হুমকি দেওয়া হয়েছে, যদিও এই যাত্রায় মনে হচ্ছে তিনি টিকে গেলেন। নবীন পাঠকরা নিশ্চই বুঝে গেছেন এতক্ষনে কোথায় আসা যাওয়া নিয়ে এতো কথা হচ্ছে। প্রবীণরা যারা এখনো উত্তরটি খুঁজছেন তাদের জানাই এটা টুইটার বলে একটা (ভাব আদানপ্রদানের) সামাজিক মাধ্যম (social media platform). রেলের প্লাটফর্মের সাথে একে গুলিয়ে ফেললে চলবে না, এটা সম্পর্ণ অন্য জিনিস। এখানে আপনি থাকবেন আবার থাকবেনও না , মানে সশরীরে থাকবার কোনো বন্দোবস্ত নেই. সবই মেঘের আড়াল থেকে। আবার আপনার নাম করে কেউ থাকলে সেটা যে আপনি তার কোনো মানে নেই, আপনার কোনো শত্রু আপনার নাম করে অশান্তি ছড়াচ্ছে সেটাও হতে পারে। সেই অশান্তির মোকাবিলায় পুলিশ যদি আপনার দুয়ারে পৌঁছে যায় তাহলে যে মেঘের আপনি সত্যিকারের আপনি নয়, বরং অন্য কেউ সেটা প্রমান করতে আপনার কালঘাম ছুটতে বাধ্য।
যাইহোক আপনি যদি কেউকেটা না হন বা আপনার মতন ভালোমানুষ বাঙালির কোনো শত্রু না থেকে থাকে তাহলে আপনার নাম ভাঁড়িয়ে অপরাধ করার কারুর কোনো অভিপ্রায় থাকার কথা নয়. সেই ক্ষেত্রে আপনি রাতের ঘুম খারাপ করবেন না. বরং যদি এই প্লাটফর্মটা নিজে ব্যবহার করতে চান তার জন্যে কিছু খুঁটিনাটি জেনে রাখুন। এখানে ১৪০তা অক্ষরের মাধ্যমে আপনার মনের ভাব প্রকাশ করতে হয়. যারা আমার মতন লিখতে ভালোবাসেন তাদের কাছে ইটা একটা মাউন্ট এভারেস্ট-এ ওঠার মতোই কঠিন কাজ. কিন্তু যখন আপনি ভাববেন যে ইটা আবিস্কার করা হয়েছে মোবাইল ফোন থেকে ব্যবহার করার জন্যে তখন আপনার এই সংখ্যাটি বাড়াবাড়ি রকমের কম বলে মনে নাও হতে পারে। যদিও টুইটারের প্রযুক্তিবিদরা এই সংখ্যাটা টেনেটুনে বারবার জন্যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এই মাধমে আপনি কি কি করতে পারেন সেটা জানতে হলে আপনাকে জানতে হবে ইটা নিয়ে জনগণ ঠিক কি কি করে থাকেন। আগেই বলেছে এখানে আপনার মনের ভাব ব্যক্ত করা যায়, এর মাধ্যম কোনো ছবি (স্থির বা চলমান) ভক্তকুলের (follower) সাথে ভাগ করে (share) নেওয়া যায়। আধুনিক যুগে এই share ব্যাপারটা খুব চলছে , ঠিক যেমন আমরা যৌবনে কাউন্টার করে সিগারেট খেতাম বন্ধুদের সাথে, ঠিক তেমন। আপনার জীবনে ঘটা গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঘটনা বা আপনার মনের কোনো সুক্ষ অনুভূতি, অথবা চায়ের দোকানে শেষ না হয় কোনো যুক্তিগ্রাহ্য বক্তব্য সবই আপনি মেঘের আড়াল থেকে ভাসিয়ে দিতে পারেন।
এর মাধ্যমে প্রধান মন্ত্রী দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানান, এর মাধ্যমে এক মুখ্যমন্ত্রী সিনেমার সমালোচনা প্রকাশ করে থাকেন, এর মাধ্যমে কোনো শিল্পী তার ঢাক পেটানোর ব্যবস্তা করতে পারেন, আবার এর মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিক কাজ সেরে নিতে পারেন।
এর মাধ্যমে আবার খুব সহজেই অন্যকে চোদ্দ পুরুষ তুলে গালাগাল দেওয়া যায়। মেঘের আড়ালের ব্যাপার হওয়ায় কেউ আপনার কান টেনে মাথা পাকড়াও করার সুযোগ পাবে না। এর মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষ এবং সাম্প্রদায়িক শিবিরের মধ্যে নিত্যদিনের অশান্তি লেগে থাকে, যেন রাম রাবনের যুদ্ধ। কোন পক্ষ রাম আর কেই বা রাবন সেটা আপনি আপনার সুবিধে মতো ভাবে নিন। আর মনে মনে কষে ফেলুন আপনি কি ভাগ করে নিতে চান আপনার ভক্তকুলের সাথে। অথবা আপনিই বা কার ভক্ত হতে চান। ঝামেলায় থাকতে না চান বারান্দার টবে যে গোলাপটা সদ্য ফুটিয়েছেন সেটার একটা ছবিই নাহয় দিয়ে দিন. মন্দ হবে না ব্যাপারটা। শুভেচ্ছা রইলো।
চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, প্রযুক্তিবিদ এবং লেখক