Breaking News
Home / TRENDING / ববি কেন নবী হতে চান? নেপথ্যে কোন রাজনীতি?

ববি কেন নবী হতে চান? নেপথ্যে কোন রাজনীতি?

দেবক বন্দ্যোপাধ্যায়

ববি কেন নবী হতে চান?

মিলিয়ে মিলিয়ে লেখা হলো বটে! তবে ইসলাম, ইহুদি, খ্রীষ্ট , জরথ্রুস্ট; সব ধর্মেই নবী হলেন তিনি, যিনি ঈশ্বরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখেন। যিনি পয়গম্বরের বার্তা শুনতে পান। যিনি সেই বাণী সাধারণ মানুষকে শোনান।

না। এমন কোনও দৈবী অবস্থানে ববি পৌঁছননি। এমনটা দাবিও করেননি। যা করেছেন তা আরও সাংঘাতিক। তিনি ধর্মান্তরে প্রশ্রয় দিয়েছেন! তিনি অ-মুসলিমদের দুর্ভাগা বলেছেন!

এই পর্যন্ত লিখলেই, রচনাটি সম্পূর্ণ হয়ে যেতে পারত। কিন্তু জনাব ফিরহাদ ববি হাকিম কে যাঁরা চেনেন, তাঁরা জানেন, ববি আর যাই হোন সাম্প্রদায়িক নন। তাই খুব সহজে কোনও সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব নয়। তিনি আর যাই হোন মৌলবাদী নন। খোলা মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করতে করতে ‘মুসলিম’ ববি অবলীলায় বলতে পারেন, মা কালীর দিব্যি। দুর্গা পুজোতে তিনি জমিয়ে আনন্দ করেন। প্রসাদ খান। কালী পুজোতেও তাই। আবার ঈদ-মহরমেও যা যা করার তাই করেন। আরও পাঁচটা সাধারণ বাঙালির মতোই পুজো এলে নিজের মেয়েদের নতুন পোশাক কিনে দেন। তাঁর জীবন যাপনে কোনও রকম কট্টর পন্থা নেই। ববি হাকিম যে একদা বলেছিলেন, মিনি পাকিস্তান। যাঁরা জানেন তাঁরা জানেন, সে কথাও উনি প্রশংসাসূচক বলেননি। বলা ভাল, মৃদু রসিকতা করে বলেছিলেন। তাহলে প্রশ্ন, ববি কোন আক্কেলে বলতে গেলেন যে অমুসলিমরা দুর্ভাগা? কী ভেবে বললেন, অ-মুসলিমদের দাওয়াত দিতে হবে। এতো এক প্রকার জেহাদ! হিংসা নেই ঠিকই, তবু তো জেহাদ। নিজের ধর্মকে অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া। এই রকম ধর্মগুরু অবতারে কেন অবতীর্ণ হলেন হিন্দু মায়ের পুত্র, হিন্দু পত্নীর স্বামী আর ধর্মমতে হিন্দু নেত্রীর অনুগামী ববি হাকিম?

বিষয় টা ধর্ম সম্বন্ধীয় নাকি রাজনৈতিক।
রাজনৈতিক মহলে প্রধানত দুটো কথা শোনা যাচ্ছে।
এক, সম্প্রতি কলকাতার মেয়র পদ ববির হাত থেকে চলে যাবে বলে যে রটনা রয়েছে, সেই রটনা যাঁরা সত্য বলেই মনে করছেন, তাঁদের ব্যখ্যা, দলের মুসলিম অংশকে সঙ্গে নিয়ে লবি করার উদ্দেশ্যেই ববি এমন সব কথা বলেছেন।

দুই, আর একটি মহল শোনাচ্ছে অপেক্ষাকৃত বেশি যুক্তিগ্রাহ্য কথা। তাদের বক্তব্য, লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল খুব ভালো ফল করলেও, ছাব্বিশে খেলা এতটা সহজ হবে না! তাঁরা মনে করছেন, চব্বিশে ছিল দিল্লির ভোট। মোদিকে হারাতে মুসলিমরা ঢেলে মমতাকে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু ছাব্বিশের ভোট হবে রাজ্যের। সেখানে মোদিকে তাড়ানোর দায় কারও থাকবে না। মুসলিমরা বেঁকে বসলে সমূহ বিপদ! এই মহলটির মতে কট্টর মুসলিমদের বার্তা দিতেই এ হেন অবতারে অবতীর্ণ হলেন ববি। এটা কোনও বিচ্ছিন্ন উদ্যোগ নয়। বরং শোচা-সমঝা রাজনৈতিক পদক্ষেপ। রাজ্যের বিধানসভা ডোট আর মাত্র দু’বছর বাকি। মমতা যে ধরনের পলিটিসিয়ান, তাতে করে তাঁর ছাব্বিশের হোম ওয়ার্ক শুরু হয়ে গেছে।

লোকসভা নির্বাচনের ফল বেরোনোর পর, নাম না করে একটি দলের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট বার্তা ছিল, কী লাভ হলো বিজেপিকে জিতিয়ে? এখনও পর্যন্ত মুসলিম ভোট নির্ভর একটি দল, যে দল লোকসভা নির্বাচনে একটি মাত্র কেন্দ্রে তৃণমূলকে হারাবার মতো ভোট কেটেছে, সেই দলকেও হালকা ভাবে নিচ্ছেন না মমতা। চব্বিশ ঘন্টার রাজনীতিবিদ মমতা কি তাহলে আইএসএফ এর জায়গা রাজনৈতিক ভাবে দখল করতে শুরু করে দিলেন? ববির আপাত বাড়াবাড়ির পিছনে কি এই কৌশলটাই কাজ করছে? দ্বিতীয় মহলটি এইসব প্রশ্ন তুলছে।

সত্যিই যদি এমনটা হয়, তাহলে আর একটা প্রশ্ন এসে পড়ছে। কট্টর, সে যে ধর্মেরই হোক, তাঁদের খুশি করতে, নিজের সহজাত স্বভাব বিসর্জন দেওয়া, একজন নেতার পক্ষে কতটা ভালো আর তাঁর দলের পক্ষেই বা কতটা ভালো?

দেশ ও সমাজের কথা আপাতত উহ্য রাখাই হলো!

Spread the love

Check Also

চোরেদের মন্ত্রীসভা… কেন বলেছিলেন বাঙালিয়ানার প্রতীক

ডঃ অরিন্দম বিশ্বাস : আজ বাংলার এবং বাঙালির রাজনীতির এক মহিরুহ চলে গেলেন। শ্রী বুদ্ধদেব …

আদবানি-সখ্যে সংকোচহীন ছিলেন বুদ্ধ

জয়ন্ত ঘোষাল : লালকৃষ্ণ আদবানির বাড়িতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মধ্যাহ্ন ভোজে আসবেন। বাঙালি অতিথির আপ্যায়নে আদবানি-জায়া …

নির্মলার কোনও অর্থনৈতিক চিন্তা-ভাবনা নেই

সুমন ভট্টাচার্য এবারের বাজেটটা না গরিবের না মধ্যবিত্তের না ব্যবসায়ীদের কাউকে খুশি করতে পারলো। দেখে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *