দেবক বন্দ্যোপাধ্যায় ও নীল বণিক :
অধীররঞ্জন চৌধুরীর কংগ্রেস ছাড়ার খবর যখন বাতাসে তখনই তাঁর চেয়ারের উওরাধিকার খোঁজার কাজে নেমে পড়েছে দিল্লির কংগ্রেস। এ আই সি সি সূত্রে এমনটাই খবর। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়-এর পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় পরবর্তী প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হতে চলেছেন বলে খবর। প্রশ্ন উঠেছে অধীরকে সরিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন হল কেন? কংগ্রেস নেতা দেবপ্রসাদ রায় অনেকদিন আগে মমতার সঙ্গে সমঝোতার পথে হাঁটার পরামর্শ দিয়েছিলেন দলকে। দেবপ্রসাদের এই লাইন সেই সময় ১০ জনপথের না-পসন্দ ছিল। বরং আবদুল মান্নানের বামেদের সঙ্গে জোটের ফর্মুলায় সিলমোহর বসিয়েছিলেন রাহুল গান্ধি। দেবপ্রসাদের মতামত দলে গুরুত্ব না-পাওয়ায় এবং প্রদেশ কংগ্রেসের মধ্যেই সমবেত বিরোধিতার মুখে পড়ায় দলের কাজ কমিয়ে দিয়ে নিজের এন জি ও-র কাজে বেশি মনোনিবেশ করেছিলেন অভিমানী দেবপ্রসাদ। এরপর বাম-কংগ্রেস জোটের পরীক্ষানিরীক্ষা শেষ হয়েছে। বিজেপিকে রুখতে দিল্লি আবার মন দিয়েছে মমতায়। সম্প্রতি সোনিয়া গান্ধির সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎ, মমতাকে নিয়ে রাহুল গান্ধির গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে গিয়ে সি অফ করার সৌজন্য—ইত্যাদি দেখেছে রাজনৈতিক মহল। সম্প্রতি বিধানসভায় বিরোধী বেঞ্চে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কুশল বিনিময়, মান্নানের স্বাস্থ্য সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া, এসবও অনুষ্ঠিত হয়েছে। তৃণমূল ভবনে দলের বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বেশি কিছু কথা বলার দরকার নেই। ওটা তিনিই সামলে নেবেন। এইসব দৃশ্যই কংগ্রেস-তৃণমূল সম্পর্কের সখ্যের বার্তা বহন করছে বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা। কংগ্রেসের মধ্যে এখন যাঁরা মার্কামারা মমতা বিরোধী তাঁদের মধ্যে অধীর একজন। পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে ১০ জনপথের রাজনৈতিক কৌশল যখন যেরকম হয় তখন সেরকম নেতাই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির চেয়ারে বসেন। ১০ জনপথ যখন আবার মমতার দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে সেসময় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদে তারা যে আর অধীরকে চাইবে না তা একপ্রকার নিশ্চিত। কংগ্রেস যদি মমতার সঙ্গে আপোশ করে তাহলে অন্য রাস্তা খোলা আছে, এইকথা প্রকাশ্যেই বলেছেন অধীর। তাঁর অন্য রাস্তা বাছতে কত সময় লাগবে একথা অধীরই জানেন। তবে ১০ জনপথ ইতিমধ্যেই ৩০বি হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের পথ বেছে নিয়েছে তা এখন পরিষ্কার। এইপ্রকার রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির আসনের দিকে যিনি দ্রুত এগিয়ে আসছেন তিনি প্রণবপুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়।