Breaking News
Home / TRENDING / অভিনেত্রী চপল ভাদুড়ি। মহানায়ক উত্তমকুমারও অবাক হয়েছিলেন তাঁর মহিলা চরিত্রে অভিনয় দেখে

অভিনেত্রী চপল ভাদুড়ি। মহানায়ক উত্তমকুমারও অবাক হয়েছিলেন তাঁর মহিলা চরিত্রে অভিনয় দেখে

কমলেন্দু সরকার 

১৯৪৫- এর কোনও একটা সময়। মায়ের সঙ্গে সপরিবারে চলে এসেছিলেন চপল ভাদুড়ি শ্রীরঙ্গম থিয়েটারের কাছে ১৩/১ সি ডালিমতলা লেনে। চপলের মা প্রভা দেবী সেকালের দাপুটে অভিনেত্রী। মঞ্চ এবং চলচ্চিত্র দুটোতেই ছিলেন সাবলীল। বাবা তারাকুমার ভাদুড়ি। তিনিও ছিলেন নাট্যজগতের। চপল ভাদুড়ির দিদি কেতকী দত্ত। তিনিও ছিলেন অসাধারণ অভিনেত্রী।
শ্রীরঙ্গম কাছাকাছি হওয়ার সুবাদে সেখানে প্রায়ই নাটক দেখতে যেতেন ছোট্ট চপল। মা চাইতেন না। তবুও চপল যেতেন। চুপচাপ বসে নাটক দেখতেন। ভাল লাগত। ওই সময় অর্থাৎ ১৯৪৫। যে-বছর চপলরা ৪ বালাখানা স্ট্রিট ছেড়ে চলে এসেছিলেন ডালিমতলা লেনে।
শ্রীরঙ্গমে হচ্ছিল ‘বিন্দুর ছেলে’। শিশির ভাদুড়ির সঙ্গে অভিনয় করছিলেন প্রভা দেবীও। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কাহিনিতে নাট্যরূপ দিয়েছিলেন দেবনারায়ণ গুপ্ত। একদিন এই নাটকের ছিল ডাবল শো। ডালিমতলা লেনের বাড়ির একটা ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন চপল। কেউ একজন ঘুম থেকে ঠেলে তুললেন। বললেন, ‘তোকে তোর মা ডাকছেন। উঠে পড় অভিনয় করতে হবে নাটকে। চপল গেলেন অভিনয় করতে। ছ’বছর বয়স তখন। শ্রীরঙ্গমে গিয়ে জানতে পেরেছিলেন ছোট অমূল্য আসেনি তার চরিত্র করতে হবে।

সেদিন খুব উত্তেজিত ছিলেন চপল ভাদুড়ি। নিমেষে হারিয়ে গেলেন মঞ্চে দাঁড়িয়েই। সম্বিত ফিরল মায়ের চিমটিতে! মাত্র একটি দৃশ্যই ছিল চপলের। বড় অমূল্য চরিত্র করতেন দিদি কেতকী দত্ত। কেতকী দত্ত তখন ছেলেদের ভূমিকা করতেন।
মায়ের মৃত্যুর পর আর্থিক কষ্টে পড়েছিলেন চপল ভাদুড়ি। তাঁর কথায়—- বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করি। কে দেবে চাকরি! অভিনয় ছাড়া কিছুই জানি না।
দেখতে দেখতে দিন চলে যেতে লাগল। সেইসময় চপলের এক আত্মীয় এসে জানলেন, মেয়ে সেজে পার্ট করতে হবে। চপল ঘাবড়ে গেলেও হাল ছাড়েননি। তবে অনেক বাঁকা কথা শুনতে হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু মর্জিনার গান শুনে চাকরি পাকা হয়েছিল চপল ভাদুড়ির। মহিলা চরিত্রে অভিনয় করার পাঠ দিয়েছিলেন তাঁকে রেণুমা। প্রথমেই ছিল নায়িকার ভূমিকা। সাফল্যের সঙ্গে উতরে ছিলেন চপল ভাদুড়ি। তিনি হয়ে উঠলেন চপলরানি। মাইনে মাসে পঁচাত্তর টাকা।

 
১৯৫৯-এ চপলরানি যোগ দিলেন নট্ট কোম্পানিতে। মাসে ১০০ টাকা মাইনে। প্রচুর ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ শুনতে হয়েছে। একটা সময় চপল ভাদুড়িকে ভেবে যাত্রাপালা লেখা হয়েছিল। ব্রজেন দে লিখেছিলেন ‘চাঁদবিবি’। এই পালাই চপলরানির সম্মান এনে দিয়েছিল। ‘চাঁদবিবি’-তে অরুণ দাশগুপ্তর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করতেন তিনি। এই পালা থেকেই নতুন করে প্রাণ পেয়েছিল নট্ট।
ষাট দশকের মাঝমাঝি নট্টতে মহিলা অভিনেত্রী নেওয়া হল। নট্ট ছেড়ে চপলরানি গেলেন নবরঞ্জন অপেরায়। আবার নট্টতেই ফিরেছিলেন তিনি। ষাটের শেষদিকে আবার গেলেন নবরঞ্জনে।
সত্তর দশকের শুরুতেই রবীন্দ্র সদনে ‘মাইকেল মধুসূদন’ দেখে উত্তমকুমার জাহ্নবীর ভূমিকা যিনি করেছেন তাঁর সঙ্গে আলাপ করতে ঢুকেছিলেন। চপল ভাদুড়ি সামনে যেতেই বিরক্তি নিয়ে বলেছিলেন। ‘আমি জাহ্নবির সঙ্গে পরিচয় করতে চাই।’ তখন চপল ভাদুড়ি বলেন, আমিই সে।


মহানায়ক জড়িয়ে ধরেন। বলেন, ‘বিয়ে করেছেন?’
চপলের কাছে ‘না’ কথাটা শুনে অবাক উত্তম বলেছিলেন, এমন মাতৃভাব ফোটালেন কী করে!
চপল ভাদুড়ির মা প্রভা দেবীর সেই কথাটারই প্রতিধ্বনি করেছিলেন, আমি যা নই তাকে ফুটিয়ে তোলাই তো অভিনয়!

চপল ভাদুড়ির জন্মদিনে চ্যানেল হিন্দুস্তানের শ্রদ্ধার্ঘ্য

 

লাইক শেয়ার ও মন্তব্য করুন

বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

Spread the love

Check Also

চোরেদের মন্ত্রীসভা… কেন বলেছিলেন বাঙালিয়ানার প্রতীক

ডঃ অরিন্দম বিশ্বাস : আজ বাংলার এবং বাঙালির রাজনীতির এক মহিরুহ চলে গেলেন। শ্রী বুদ্ধদেব …

আদবানি-সখ্যে সংকোচহীন ছিলেন বুদ্ধ

জয়ন্ত ঘোষাল : লালকৃষ্ণ আদবানির বাড়িতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মধ্যাহ্ন ভোজে আসবেন। বাঙালি অতিথির আপ্যায়নে আদবানি-জায়া …

নির্মলার কোনও অর্থনৈতিক চিন্তা-ভাবনা নেই

সুমন ভট্টাচার্য এবারের বাজেটটা না গরিবের না মধ্যবিত্তের না ব্যবসায়ীদের কাউকে খুশি করতে পারলো। দেখে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *