ঈষানিকা ভোরাই
বিজেপিকে আটকাতে এবার সুচারু কৌশল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বিজেপিকে আটকানোর এই কৌশল দেশের রাজনীতিতে পুরনো হলেও সম্প্রতি গুজরাত নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে এই পুরনো কৌশল আবার নতুন হয়েছে।
বিষয়টি খুলে বলা দরকার। মণ্ডল কমিশন দিয়ে বিজেপিকে আটকানো ও বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহের প্রধানমন্ত্রী হওয়া এখন ইতিহাস। তারপর গঙ্গা-যমুনা-গোমতী-সবরমতী দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহর নেতৃত্বে বিজেপি এখন দেশের সিংহভাগ অঞ্চল গেরুয়া রঙে রাঙিয়ে দিয়েছে। সাম্প্রতিক গুজরাত নির্বাচনেও প্যাটেল-পলিটিক্সের মত নয়া-সংরক্ষণ রাজনীতির সামনাসামনি করে বিজেপি কিছু আসন খুইয়েছে আর কংগ্রেস কিছু আসন বাড়িয়েছে। গুজরাতের এ হেন ফলাফলে কেউ কেউ বিজেপি বধের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েকদিন আগেই গুজরাতের প্যাটেল-পলিটিক্সের মুখ হার্দিক প্যাটেলকে ফোন করেন। সংরক্ষণের রাজনীতিতে সম্ভাবনা দেখছেন সম্ভবত মমতাও! তবে সরাসরি সংরক্ষণের রাজনীতি না হলেও ঘুরপথে এক প্রকার জাতপাতের রাজনীতির আমদানি কী এই রাজ্যেও করতে চাইছেন মমতা! নবান্নের একটি সিদ্ধান্ত এখন এই প্রশ্নই তুলছে। কি সেই সিদ্ধান্ত?
শুধুমাত্র ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন বা ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনই নয়, ২০২১ এর রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল সরকার। এই লক্ষ্যে সেডিউল কাস্ট আ্যডভাইসরি কাউন্সিল গঠন করেছে রাজ্য। গত ১১ অগষ্ট রাজ্য বিধানসভায় এই বিষয়ে বিল পাস করানোর পর ১৩ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই কাউন্সিলের গঠনতন্ত্রের অনুমোদন দেয়। তবে ২ মাস পার করার পর অবশেষে এই কাউন্সিলের প্রথম বৈঠক হল বৃহস্পতিবার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৌরহিত্যে এই বৈঠক হয়। এই রাজ্যে ২৯৪ টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৬৬ টি আসনে তফসিলি জাতি নির্ধারক ভূমিকা পালন করে থাকে। এই কাউন্সিল গঠন সেই আসনগুলির কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছে বলে মনে করছে তথ্যাভিজ্ঞ মহল । প্রসঙ্গত: শুধু তফশিলি জাতি নয়, তফশিলি উপজাতিদের জন্যেও ইতিমধ্যেই এই ধরনের কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে ।
মঙ্গলবারের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব মলয় দে, অনগ্রসর শ্রেণী কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী চূড়ামণি মাহাতো, একই দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস কুজুর সহ উপেন বিশ্বাস ও উপদেষ্টা কাউন্সিলের একাধিক সদস্য । মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, “তপশিলি জাতি উপদেষ্টা পরিষদ ভারতবর্ষের মধ্যে প্রথম গঠন করা হল পশ্চিমবঙ্গে। আমরা আইন করে এটা পাস করেছি। তপশিলী উপজাতিদের জন্য যেমন ভারতবর্ষে পরিষদ রয়েছে, তেমনই আমাদের রাজ্যেও রয়েছে। তবে তপশিলী জাতিদের জন্য এই ধরনর উপদেষ্টা পরিষদ আমাদের রাজ্যেই প্রথম।” এদিন মুখ্যমন্ত্রীর পৌরহিত্যেই এই কাউন্সিলের প্রথম বৈঠক হয়। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রতি ৬ মাস অন্তর এই পরিষদের বৈঠক হবে। প্রসঙ্গত,
পশ্চিমবঙ্গের মোট জনসংখ্যার ২৩ শতাংশই তপশিলি জাতি। সংখ্যার হিসাবে ৯ কোটি ১৪ লক্ষ জনসংখ্যার মধ্যে ২ কোটি 14 লক্ষ তফসিলি জাতির অন্তর্ভুক্ত। এই কাউন্সিল তফসিলি জাতির মানুষদের সামাজিক, শিক্ষাগত এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়টি দেখবে। পরিষদ সরকারি বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে আলোচনা ও পরামর্শ করে এই তপশিলি জাতির জনসাধারনের সামগ্রিক উন্নয়নের বিষয়ে পরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়ন করবে।
পরিষদে কুড়িজন বিধায়ক ও তিন জন সাংসদ রয়েছেন।
বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
https://www.youtube.com/channelhindustan
https://www.facebook.com/channelhindustan