কমলেন্দু সরকার :
গাভির রূপ ধরে পৃথিবী একদিন হাজির হলেন ব্রহ্মার কাছে। তিনি বললেন, আমি আর পারছি না। রাজায় রাজায় হিংসা আর হানাহানিতে আমি বিপর্যস্ত। এর সঙ্গে রয়েছে ওদের সেনাদের দাপাদাপি, মারামারি। আপনি এর একটা বিহিত করুন।
পৃথিবীর এমন মানসিক অবস্থা আর কান্নায় থাকতে পারলেন না ব্রহ্মা। তিনি ধ্যানযোগে শরণাপন্ন হলেন পরমপুরুষের। ব্রহ্মার বলার আগেই পৃথিবীর কান্নার আওয়াজ পৌঁছেছিল ভগবানের কাছে। তিনি জানালেন, আমি অতিশিগগির আবির্ভূত হব ধরায়। জন্ম নেব বসুদেব ভবনে। ভগবানের আদেশে মহামায়াও মর্তে অবতীর্ণ হবেন। অন্যান্য দেবতারাও আসবেন মর্তে।
মথুরায় যদুবংশে বসুদেবের জন্ম। কংসের জ্ঞাতি বোন দেবকীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হল। বিয়ের পর বোন দেবকীকে নিয়ে রথে চলেছেন কংস। রথ তিনি নিজেই চালাচ্ছিলেন। এমন সময় অলক্ষ্যে দেবতার বাণী শোনা গেল—- কংস শোনো, তুমি যাকে নিয়ে রথে করে যাচ্ছ তার অষ্টমগর্ভের সন্তান তোমাকে হত্যা করবে। কংস তখনই অস্ত্র দিয়ে মারতে গেল দেবকীকে। বসুদেব তখন বললেন, দেখো তোমাকে দেবকী তো মারবে না হত্যা করবে ওর অষ্টমগর্ভের সন্তান। খামোকা দেবকীকে মেরে তুমি নারী হত্যার পাপ কেন নেবে! আমি কথা দিচ্ছি দেবকীর গর্ভজাত সন্তানদের তোমার হাতে তুলে দেব। কংস বুঝলেন। নিজেকে নিরাপদ মনে করলেন।
কংস আতঙ্কে ভুগে বসুদেব-দেবকীকে নিক্ষেপ করলেন কারাগারে। দেবকী একটি করে সন্তানের জন্ম দেন আর কংস তাদের হত্যা করেন। কংস ছিলেন ভীষনই নিষ্ঠুর। নিজের পিতা উগ্রসেনকে কারাগারে বন্ধ করে সিংহাসনে বসেছিলেন। তাঁর অত্যাচারে যদুবংসের বহু মানুষজন পালিয়েছিলেন মথুরা ছেড়ে। এবার দেবকীর গর্ভে সপ্তম সন্তান বলরাম এলেন। ভগবান নির্দেশ দিলেন, দেবী তুমি এই ভ্রূণরূপী অনন্তকে রোহিণীর গর্ভে রেখে দেবে। তারপর আমি দেবকীর পুত্র হয়ে জন্ম নেব। যোগমায়া ভগবানের কথামতো তাই করলেন। ভগবান বললেন, তুমি হবে যশোদা-কন্যা। রোহিণীর গর্ভে জন্ম হল বলরামের।
এক বর্ষণমুখর রাতে ভূমিষ্ঠ হলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। বসুদেব-দেবকী দেখলেন অদ্ভুত এক আলোয় ভরে উঠেছে কারাগার! সেই আলোর মধ্যে থেকে বেরিয়ে এলেন বিষ্ণু। তাঁর হাতে শঙখ, চক্র, গদা, পদ্ম! দু’জনে প্রণাম জানালেন। বিষ্ণু ওঁদের ভক্তি দেখে তুষ্ট। তিনি মানব শিশুর রূপ ধারণ করলেন।
মানব শরীর ধারণ করে ভগবান আবির্ভূত হলেন মর্তে। বাস্তবে তিনি শিশু। ওই শিশুকে রক্ষা করতে হবে। দেবতাদের নির্দেশে ওই শিশুকে নিয়ে বসুদেব চললেন ব্রজধামে। প্রচণ্ড বৃষ্টি মাথায় নিয়ে শিশু কোলে করে রওনা দিলেন ব্রজের পথে। ওদেকে ব্রজে যশোদার কোলে জন্ম নিয়েছে যোগমায়া। বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য অনন্তনাগ তাঁর ফণা মেলে দিয়েছেন ছাতার মতো। বসুদেব পৌঁছে গেলেন। পুত্রকে রেখে যশোদা-কন্যাকে নিয়ে আবার রওনা দিলেন মথুরায়। কারাগারে এসে ওই মেয়েকে তুলে দিলেন দেবকীর কোলে।
কংস খবর পেলেন কারাগারে শিশু কান্নার শব্দের। দেবকীর কোল থেকে কেড়ে নিলেন শিশুটিকে। তাঁকে আছড়ে মারতে যাবেন, এমন সময় ঘটল সেই অদ্ভুত কাণ্ড। কংসের হাত থেকে পিছলে গিয়ে ওই শিশু অষ্টভুজার রূপ নিলেন। বললেন, তোমাকে বধ করবে সে গোকুলে বাড়ছে। অযথা শিশুহত্যা কোরো না।