স্বপনকুমার ঠাকুর :
অম্বুবাচি মানেই জলোৎসব। গ্রীষ্মের দাবদাহে ধরণী হয়ে ওঠে উত্তপ্ত। নিঃস্ব মাঠঘাট। আষাঢ়ের বৃষ্টিতে রুক্ষ মাঠঘাট প্রাণ ফিরে পায়। নদীতে ঢল নামে। গাছপালা হয়ে ওঠে সবুজ। রিমিঝিমি বৃষ্টি ধারায় পৃথিবী যেন সত্যিই ঋতুমতী হয়ে ওঠে। এরই নাম অম্বুবাচি।
নারী আর কৃষি— সমার্থক। এ ভাবনা আদিকাল থেকেই। নারী ঋতুমতী হলে যেমন সৃষ্টি সম্ভবা হয়ে ওঠে। তেমনই আষাঢ়ের প্রথম বর্ষণে ধরিত্রী হয়ে ওঠে রজঃস্বলা রমণীর মতো। এই সময় ভূমিকর্ষণ নিষিদ্ধ। নারী ঋতুমতী হলে যেমন আমাদের শাস্ত্রে সহবাস নিষিদ্ধ তেমনই এই চারদিন ধরিত্রীর গর্ভে লাঙল চালনা বা কোনওরকম কৃষিকার্য নিষিদ্ধ। মনে রাখারে প্রয়োজন লাঙল আর লিঙ্গ শব্দটি একই ধাতু থেকে আগত। লোকবিশ্বাস অনুসারে আষাঢ় মাসে মৃগশিরা নক্ষত্রের তিনটি পদ শেষ হলে ধরিত্রী ঋতুমতী হয়। বিধবা মহিলারা পরের জীবনে ঋতুমতী অর্থাৎ সন্তানলাভের আশায় এই অম্বুবাচি ব্রত নিষ্ঠা ভরে পালন করেন তিন দিন ধরে। তাঁরা ঠান্ডা নিরামিষ খাবার খান। মাটিতে নামেন না। ফলমূল খান, পবিত্র জীবনযাপন করেন— যা ব্রতের অন্যতম অঙ্গ।
অম্বুবাচি বললেই অসমের কামরূপ কামাখ্যা দেবীর কথা মনে আসে। ৫১ সতীপীঠের অন্যতম এই দেবী। কথিত আছে এখানে দেবীর যোনি পড়েছিল। এই চারদিন দেবীর মন্দির বন্ধ থাকে। কোনওরকম মাঙ্গলিক কাজ হয় না। ধরিত্রীর মতো দেবীও এইসময়ে ঋতুমতী হয়ে ওঠেন। রাঢ় অঞ্চলে বিশেষ করে কাটোয়া থানার মুলটি কিংবা পূর্বস্থলী থানার পাটুলি নারায়ণপুরের জনপ্রিয় লোকোৎসব এই অম্বুবাচি। এইদিন কামাখ্যারূপী কালিকা দেবীর পুজো হয়। কোনও মূর্তি নেই। বৃক্ষকে কামাখ্যা বা কালিকা জ্ঞানে পুজো হয়। মেলা বসে। প্রচুর পাঁঠা বলি হয়। প্রচুর জন সমাগম হয়। কাটোয়ার সুদপুরে অম্বুবাচির দিনে ক্ষেত্রপালের পুজো হয়। এই উপলক্ষে মাটির পুতুলের মেলা বসে। কুস্তি প্রতিযোগিতাও দেখার মতো ছিল একসময়।
লাইক ও শেয়ার করুন