Breaking News
Home / TRENDING / ঝড়ের ঠিকানা – পর্ব ৭

ঝড়ের ঠিকানা – পর্ব ৭

মমতা পরলেন সাংবাদিকের চশমা

সঞ্জয় সিংহ  

(জনপ্রিয় এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক  সঞ্জয় সিংহের স্মৃতিসরণিতে অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ) 

আন্দোলন ছাড়া তিনি যে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না তা তাঁর রাজনৈতিক বিপর্যয় থেকেই বারে বারে বুঝেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠিক যেভাবে সিঙ্গুরের কৃষি জমি রক্ষার আন্দোলনকে তিনি ২০০৬ সালের বিধানসভা ভোটে পরাজয়ের পর ঘুরে দাঁড়ানোর মঞ্চ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন, ঠিক ১৯৮৯ সালের লোকসভা ভোটে যাদবপুরে পরাজয়ের পরও সিপিএমের বিরুদ্ধে একের-পর-এক ‘গণসংগ্রাম’ সংগঠিত করে নিজের পায়ের তলার রাজনৈতিক জমি মমতাদি শক্ত করেছেন।
পাঁচ বছর আগে যে-যাদবপুর কেন্দ্র তিনি ‘জায়েন্ট কিলার’ হয়েছিলেন, সেখানেই ১৯৮৯ সালে মমতাদি পরাজিত হয়েছিলেন সিপিএমের মালিনী ভট্টাচার্যের কাছে। এই পরাজয় মমতাদির রাজনৈতিক জীবনে শাপে বর হওয়া বলেই আমি মনে করি। কারণ, সিপিএম তথা বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিষয়ে একের-পর-এক বহু আন্দোলন তিনি ১৯৮৯-এর পর থেকে সংগঠিত করেছেন। এই সমস্ত আন্দোলনে মমতাদিকে যতটা ‘অ্যাগ্রেসিভ’ দেখেছি তা আগে কখনও দেখা যায়নি।
পুলিশ তখন কড়া নজর রাখছে মমতাদির ওপর। মমতাদিও নানাভাবে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে কংগ্রেস সংগঠনকে মজবুত করছেন। সবসময় চেষ্টা করছেন কীভাবে মানুষের পাশে থাকা যায়। এভাবে ১৯৯০ সালের ১৬ অগস্ট এসে গেল।
দলের তিন কর্মী আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ায় সেদিন কংগ্রেস বাংলা বনধ ডেকেছিল। সেদিন শহরের বিভিন্ন প্রান্তে কংগ্রেসের প্রতিবাদ মিছিল হবে। দক্ষিণ কলকাতাতেও প্রতিবাদ মিছিল বেরোনোর কথা ছিল। কিন্তু ১৬ অগস্টের দু’তিন দিন আগে মমতাদি সাংবাদিক বৈঠকে জানালেন, সিপিএম এবং পুলিশের একাংশ তাকে খুন করার পরিকল্পনা করেছে। কালীঘাটে তাঁর বাড়িতেও বেশ থমথমে পরিবেশ। মমতাদি নিজে আমাদের জানিয়েছেন, তাঁর মা গায়ত্রী দেবী আঁচ করেছেন মেয়ের কোনও বিপদ ঘটতে পারে। তাই ১৬ অগস্ট বাড়ি থেকে মেয়েকে বেরোতে বারণ করে দিয়েছেন মা গায়ত্রী দেবী। মমতাদি এখন গল্প করতে গিয়ে হাসতে হাসতে বলেন, “আমি তো প্ল্যান করেই রেখেছিলাম। মাকে একটা কিছু বলে মিছিলে যাবই!”
ছোটবেলা থেকে একটু ডানপিটেই ছিলেন মমতাদি। তাই, ১৬ অগস্টও মাকে এড়িয়ে তখনকার তাঁর দুই বিশ্বস্ত সঙ্গী অনিল মুখোপাধ্যায় (পরে কলকাতা পুরসভার চেয়ারম্যান হয়েছিল) এবং দিলীপ মজুমদারকে (পরে কাউন্সিলার) সঙ্গে নিয়ে সোজা মিছিলে হাজির হলেন।
আমি তখন ‘আজকাল’ পত্রিকায় কাজ করি। বনধ বলে সকাল থেকে রাস্তায় ডিউটি পড়েছে। সম্ভবত, তখন ধর্মতলায় বনধের সমর্থনে কংগ্রেসের একটা মিছিল ‘কভার’ করছিলাম, পরিচিত এক পুলিশ অফিসার খবর দিলেন— মমতার ওপর আক্রমণ হয়েছে। হাজরায় গুরুতর আহত হয়েছেন মমতা। ওঁকে পিজি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সঙ্গেসঙ্গে সঙ্গী ফটোগ্রাফার নিয়ে পিজি হাসপাতালে ছুটলাম।
ঘটনার বিবরণে শুনলাম, সিপিএম-এর বাদশাহ আলমের ভাই লালু আলম মমতাদিকে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে। প্রথমে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে মমতাদি পরে আমাদের বলেছিলেন, মাথা বাঁচাতে গিয়েছিলেন হাত দিয়ে। লোহার রড দিয়ে আঘাত করে দুষ্কৃতীরা মমতাদির হাতও ভেঙে দেয়।
এস এস কে এম হাসপাতাল (পি জি) থেকে পরে মমতাদিকে একটি নার্সিং হোমে ভরতি করা হয়েছিল। কারণ, ওঁর পরিবারের লোকেদের সন্দেহ ছিল, সরকারি হাসপাতালে ওঁকে খুন করা হতে পারে! একটু সুস্থ হয়ে মমতাদি বাড়ি ফিরলেন। আমরা বেশ কয়েকজন সাংবাদিক বিকেলে কালীঘাটে মমতাদির বাড়িতে যেতাম। তাঁর মাথায় হাতে তখনও ব্যান্ডেজ। মাথায় আঘাতের ফলে চোখেও বোধহয় দেখতে আসুবিধা হত। আমাদের বলতেন কাগজ বা কোনও লেখা পড়তে অসুবিধা হয়। একদিন সাংবাদিক প্রবীর ঘোষালের(এখন বিধায়ক) চশমাটা চেয়ে নিয়ে কাগজ পড়লেন। তারপর হেসে বললেন, “ওমা, এখন তো অক্ষরগুলো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি!” আশ্চর্যের ঘটনা, আমরা যখন মমতাদির সঙ্গে দেখা করতে যেতাম তখন সিপিএমের মুখপত্র ‘গণশক্তি’র সাংবাদিকরাও ভিড়ে পড়ত। প্রবীরের চশমা মমতাদি পরেছিলেন, সেই ঘটনা কটাক্ষ করে পরের দিন ‘গণশক্তি’তে একটা প্রতিবেদন বেরিয়ে ছিল।
প্রতিবেদনটা পড়ে আমার খুব খারাপ লেগেছিল। আমি মমতাদিকে বলেছিলাম, “ভেরি ব্যাড টেস্ট।” মমতাদি হেসে বলেছিলেন, “ওরা তো ভেবেছিল আমাকে মেরে ফেলবে। কিন্তু অগণিত মানুষের ভালবাসা আমার ওপর আছে। অত সহজে মরব না। তাই ওদের গায়ে জ্বালা ধরছে। ছাড়েন, ওসব! ওরা কুৎসা করবেই। করতে দিন।”
এরপর মমতা আবার পথে নামলেন, সে কাহিনি পরের বার।

Spread the love

Check Also

রাহুলের পাইলট প্রোজেক্ট, মুর্শিদাবাদ কংগ্রেসে আধিপত্য হারাতে পারেন অধীর

দেবক বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে রাহুল গান্ধির নতুন উদ্যোগে মুর্শিদাবাদের কংগ্রেস রাজনীতিতে খর্ব হতে পারে অধীর …

আমি আসছি! নাম না করে শুভেন্দুকে শাসালেন আনিসুর

চ্যানেল হিন্দুস্থান, নিউজ ডেস্ক: নাম না করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারিকে শাসালেন আনিসুর রহমান। একদা …

আগামী সপ্তাহে শতাধিক ট্রেন বাতিল হাওড়া-বর্ধমান শাখায়

চ্যানেল হিন্দুস্থান, নিউজ ডেস্ক: উন্নত পরিষেবা পেতে চলেছে পূর্ব রেল হাওড়া-বর্ধমান কর্ড শাখায়, আর তার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *