দেবক বন্দ্যোপাধ্যায় :
রবীন্দ্রনাথ থেকে রাখি সবই এখন রাজনীতির কারবারিদের রাজনৈতিক অস্ত্রস্বরুপ!
কীরকম!
যেমন ধরুন কোনও রাজনৈতিক দল একটি রাজনৈতিক জোটের শরিক। এনডিএ কিংবা ইউপিএ। এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হল দেখা গেল আর ওই জোটে থাকা যাচ্ছে না। উক্ত দলটি বেরিয়ে আসতে চাইছে জোট ছেড়ে। হঠাৎ করে ছেড়ে দিলে রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা কমে। সে দিকটাও মাথায় রাখতে হবে। এই সময় যদি একটা ইস্যু পাওয়া যায় তাহলে তখনই সুযোগের সদ্ব্যবহার করাটাই নিয়ম। কী বলে ছাড়া হবে জোট! যখন ভাষা যোগাবেন স্বয়ং কবিগুরু তখন আর ভয় কী! উক্ত দলটি সাংবাদিক ডেকে জানিয়ে দেবে, তারা ‘একলা চল’ নীতি গ্রহণ করেছে। এইভাবে কিছুদিন চলার পর ঝোপ বুঝে কোপ মেরে অন্য জোটে নাম লেখালেই হল!
রবীন্দ্রনাথের রাজনৈতিক ব্যবহার কম বেশি সব দলই করে থাকে। রবীন্দ্রনাথ বাঙালি ছিলেন বলে সম্ভবত এই রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলি তাঁকে বেশি ব্যবহার করে। এতো গেল রবীন্দ্রের কথা অরবিন্দেরও ছাড় নেই। জোট ছাড়ার ইস্যু পাওয়া গেলে তো রবীন্দ্রনাথের ‘একলা চল’ কিন্তু না পাওয়া গেলে! কুছ পরোয়া নেহি, পলিটিকাল প্লেয়ারদের দমানো অত সহজ নয়। আর যখন শ্রীঅরবিন্দ আছেনই তখন আর ভাবনা কী! শ্রীঅরবিন্দ তখন জেলে বন্দি। সে সময় হঠাৎই তাঁর ভাব পরিবর্তন হয়। আধ্যাত্মিক চেতনার উন্মেষ হয়। তিনি অন্তরাত্মার ডাক শুনতে পান। তাঁর দিব্য জীবন গ্রন্থে এর উল্লেখ আছে। কী ভাবছেন আর কেউ অন্তরাত্মার ডাক শুনতে পান না! পান বইকি! কোনও দল জোট ছাড়ার সময়, কোনও নেতা দল ছাড়ার সময় অন্তরাত্মার ডাক শুনতে পান যদি না জোট বা দল ছাড়ার উপযুক্ত কোনও ইস্যু মেলে!
এমন নয় যে রাজনীতিকদের কাছে শুধুমাত্র অজুহাতের অপর নাম রবীন্দ্রনাথ কিংবা শ্রীঅরবিন্দ বা অন্য কোনও মহাপুরুষ। প্রচারের ফেস্টুনও বটে। পঁচিশে বৈশাখ বা বাইশে শ্রাবণে দলীয় অফিসে অফিসে বেজে ওঠেন রবীন্দ্রনাথ। বাজবে নাই বা কেন? রবীন্দ্রনাথ কী তাঁদের নন! মোক্ষম প্রশ্ন। আপাতত এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে এটুকু বলা যায়, রবীন্দ্রনাথ আর রাজনৈতিক অভিসন্ধিযুক্ত রবীন্দ্র ব্যবহার এক নয়।
শক্তিশালীরা তো সবেতেই আছেন। পুজো থেকে শুরু করে, রাখি থেকে শুরু করে, ইদ, মহরম, ছটপুজো থেকে শুরু করে… রবীন্দ্রনাথকে আপনাদের জনসংযোগ আধিকারিক নাই বা বানালেন! বুড়ো মানুষটাকে ছেড়ে দিন দয়া করে!
লাইক শেয়ার ও মন্তব্য করুন
বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন