নিউজ ডেস্ক, সুমন ভূঁইয়া-
রাজ্য রাজনীতিতে তৃণমূলের নবীন-প্রবীণের দ্বন্দ্ব যত দিন যাচ্ছে, ততই যেন বেড়েই চলেছে, আর নতুন বছরেও তা অব্যাহত। কিন্তু অন্যদিকে বামেদের ক্ষেত্রে চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। প্রবীণ নেতারাই, তরুণ প্রজন্মের ওপরে ভরসা রেখেই এগিয়ে চলেছে, আর তার ফল আগামী ৭ জানুয়ারি ব্রিগেড, যার প্রধান মুখ হিসেবে দেখা যাচ্ছে DYFI নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জিকে। এবার কী মীনাক্ষীর হাত ধরেই পুরোনো জমি ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে নামবে লাল পতাকা ?
কিন্তু গত বিধানসভার পরিসংখ্যান খুব বেদনাদায়কই ছিল বামেদের কাছে। হাই ভোল্টেজ কেন্দ্র নন্দীগ্রাম থেকে মাত্র ৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বাম নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জি। যদিও অন্যদিকে তাবড় তাবড় নেতারা ছিলেন, একদিকে তৃণমূলের হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যদিকে বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। তবুও মীনাক্ষীকে সামনে রেখে বাজি খেলতে চাইছে কমরেডগণ।
কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়,বামেদের কাছে এতো তরুণ নেতৃত্বের মধ্যে মীনাক্ষীকে কেন সামনে সারিতে রাখা হয়, রাজনৈতিকমহলের অনেকেই মনে করেন, বাম আমলের যে ভাবে বিরোধীনেত্রী মমতা ব্যানার্জির জনগণের দাবি নিয়ে ঝাঁঝালো হয়ে উঠতেন,যেভাবে মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছেন। মানুষের দাবি নিয়ে শাসকদলকে আক্রমণ শানিয়েছেন, ঠিক সেইরকম নিজেকে তৈরি করেছে মীনাক্ষী, যদিও বাম নেতৃত্ব এইসব তত্ব নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া করেনি। শুধু মেনে নিয়েছেন এখন মীনাক্ষী বামেদের ক্যাপ্টেন।
৩৪ বছর শাসনের পর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে ২০১১ সালে ক্ষমতা হারিয়েছিল বামফ্রন্ট সরকার, সেবার বিধানসভায় ৪০ টা আসনেই জামানত জব্দ হয়েছিল বাম নেতৃত্বের। রাজনৈতিক মহলে কান পাতলে এখনও শোনা যায়, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম না হলে হয়তো তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষমতায় আসা এতো সহজ হতো না।
২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও যাদবপুর আসনে মুখ থুবড়ে পড়ে, অন্যদিকে ভবানীপুর থেকে জয় লাভ করে ক্ষমতায় আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবারও ২০১৬ তে বিধানসভা নির্বাচনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন কমরেড সূর্যকান্ত মিশ্র। কিন্তু ফলাফল আরো নিম্নমুখী, ৪০ টি জয়ী আসন নেমে দাঁড়ায় ২৬ এ।
কিন্তু মনে হয় সেগুলো যেন শুধু ট্রেলার ছিল, পিকচার টা ছিল২০২১ এ বিধানসভা নির্বাচনে। যার ফলাফল বামেরা স্বপ্নেও কল্পনা করেনি। ২০২১ এ ২৬ টি জয়ী সিট একটাও নিজেদের দখলে রাখতে পারেনি বামফ্রন্ট।
অন্যদিকে লোকসভা নির্বাচনে পরিসংখ্যান চিন্তায় শেষ রাখেনি বামেদের। গত ২০১৪ লোকসভায় ৪২ সিটে মাত্র দুটো লাল পতাকা ওড়াতে পারলেও ২০১৯ লোকসভায় তো খাতাই খুলতে পারেনি। মোদ্দা কথা বিধানসভায় হোক বা লোকসভা এখন শুন্যতে দাঁড়িয়ে বাম। এই ভরাডুবির পর কী প্রবীণরা, তরুণ প্রজন্মকে একটু বেশি এগিয়ে দেওয়া দিয়েছে ? তার উত্তর হয়তো কারুর কাছেই নেই। তাই কি মীনাক্ষী মুখার্জিকে এগিয়ে দিয়ে বাজিমাত করতে করতে চাইছে বামফ্রন্ট সরকার ? কিন্তু তার আগেই ব্রিগেড মঞ্চ বড়ো পরীক্ষা হতে চলেছে, বামনেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জির কাছে।