দেবক বন্দ্যোপাধ্যায়
বাংলার বাস্তব বুঝেছেন অধীর! বুঝেছেন বলেই, বিচারক অভিজিত গঙ্গোপাধ্যায় কে এই রাজ্যের ভবিষ্যত মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চেয়েছেন।
প্রশ্ন হলো, কী বুঝেছেন?
বুঝেছেন এটাই, মমতার শত সমালোচনার পরেও বঙ্গ রাজনীতিতে তাঁর পাশে দাঁড় করানোর মতো ব্যক্তি আর দুটি নেই। দ্বিতীয় কোনও মুখ নেই।
জ্যোতিবাবুর পরে বাংলার জননেতা বলতে এই একজনই। তা এই দুই মহীরুহের মধ্যে চলনে-বলনে, ধারে-ভারে, যতোই তফাৎ থাক কিংবা না থাক; আপনার পছন্দ হোক কিংবা না হোক, মিডিয়া ভ্যালু এখনও মমতারই বেশি।
অনেক যোগ্য রাজনীতিক এই সময়কালে এলেও মমতার জায়গায় কেউ পৌঁছতে পারেননি, সে যে কোনও কারনেই হোক। বরকত গনিখান চৌধুরীর পর থেকে বঙ্গ কংগ্রেসে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মতো ফাদার ফিগার, প্রিয় দাশমুন্সির মতো লিডার অফ দ্য লিডারস ইমেজ সম্বলিত নেতা, সোমেন মিত্রের মতো সুদক্ষ সংগঠক ও ডাকসাঁইটে নেতা, সকলকেই মমতাকে আশীর্বাদ করে ক্ষান্ত হতে হয়েছে। তাঁর জনপ্রিয়তার কাছাকাছি কেউ পৌঁছতে পারেননি।
অন্য দলের নেতাদের এই আলোচনায় টানছি না। কারন, অন্য কেউ নয়, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ও বাংলার মাটিতে শতাব্দী প্রাচীন দলটিকে এখনও খবরে রেখে দেওয়া অধীর চৌধুরী বিচারক অভিজিত গঙ্গোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে দেখতে চেয়েছেন! জানা গেছে, এ হেন দর্শন ইচ্ছার কারন জিজ্ঞেস করায় তিনি জানিয়েছেন, গঙ্গোপাধ্যায় মুর্শিদাবাদ যাওয়ার পর, তাঁকে দেখতে মানুষের ঢল নেমেছিল। মানুষের এই স্বতস্ফূর্ততা দেখেই অধীরের মনে হয়েছে, ইনি হলেন তিনি, যিনি ভবিষ্যতে মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসতে পারেন!
খুব সোজা কথা, মমতার বিকল্প মুখ হিসেবে অভিজিত গঙ্গোপাধ্যায়কেই সঠিক মনে হয়েছে অধীরের। এবার প্রশ্ন হলো, ছাব্বিশের বিধাসভা নির্বাচন মাথায় রেখে কংগ্রেস ও সিপিএম কি সত্যিই গঙ্গোপাধ্যায়ের বিষয়ে সিরিয়াসলি ভাববে? তাঁর সঙ্গে কথা এগোবে? যদি এগোয়, তাহলে কি গঙ্গোপাধ্যায় রাজি হবেন? তিনি যদি রাজনীতিতে আসেন, তাহলে বাংলায় এই মুহুর্তে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল বিজেপিতে না গিয়ে কংগ্রেসে যাবেন কেন? তিনি কি আদর্শগত ভাবে কংগ্রেসী বা বামপন্থী? এরকম অনেক জিজ্ঞাসা চিহ্ন এখনও আছে। কিন্তু বিচারক অভিজিত গঙ্গোপাধ্যায়ের নামটি সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বাজারে ভাসিয়ে দিয়ে অধীর যে বোড়ের চাল এক ঘর এগিয়েছেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। প্রশ্ন হলো, গঙ্গোপাধ্যায় বিচারক হিসেবে সমালোচনা ও সাধুবাদ দুটোই পেয়েছেন। অনেকে নাকি তাঁকে
ভগবান বলেও ডাকে। রাজনীতির প্রশ্নে হ্যাঁ না বললেও এখনও না বলেননি।
তারপর? তারপর, কখন কী ঘটে যায়, কিছু কি বলা যায়?