দেবক বন্দ্যোপাধ্যায়-
নিউজ ডেস্ক :
বেলা না যেতে খেলা কেন তব যায় টুটে…
না, এখনই এই কথা বলার সময় আসেনি। খেলার সময় এখনও আছে, বেলা এখনও পড়েনি। তবে এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই যে খেলা একটু হলেও কঠিনতর হয়েছে! (নাকি একটু বেশিই হয়েছে!)
রাহুল গান্ধিরও হয়েছে শাঁখের করাত। দলের সিনিয়রদের ওপর আস্থা না রাখলেও সমালোচনা আবার আস্থা রেখেও মধ্যপ্রদেশ! রাজস্থানকে এক পংক্তিতে বসালাম না, কারন পাঁচ বছর অন্তর পরিবর্তন, সেখানকার এক প্রকার দস্তুর। আর ছত্তিশগড়? পরে আসছি।
মধ্যপ্রদেশে হারের অন্যতম কারন সমাজবাদীর ডাকে সাড়া না দিয়ে কমলনাথের একাই এক’শ মনোভাব! ফলাফলের পর এই কথা আসমুদ্র হিমাচল বুঝে গেল শুধুমাত্র ঘোড়েল পলিটিসিয়ান কমলনাথ বুঝলেন না! এ কথা মেনে নেওয়া তো সহজ কথা নয়। অখিলেশের সঙ্গে দরাদরি করে ছয়টির জায়গায় চারটি দেওয়া যেত! কমলনাথ সরাসরি না করে দেওয়ায়, অখিলেশ তো ভোট কাটলেনই, রাজ্যের আট শতাংশ যাদব ভোট থেকে বঞ্চিত হলো কংগ্রেস। কমলনাথের এই তৈরি করা ক্ষতে নুন ছিটিয়ে দিতে দেরি করলেন না শিবরাজ। মামাজি বাড়িয়ে দিলেন কৃষ্ণ বন্দনা। ফলাফল, ‘মামা নে বানায়া কংগ্রেস কো মামু!’ আর ‘কমলনাথ খিলায়া কমল!’
না, কমলনাথের এই একটি মাত্র ভূলে কংগ্রেস কে হারতে হলো, এতটা সরলীকরণ কখনোই করা যায় না। আসলে পরিবর্তিত রাহুল যে কথা বলছেন বা বলতে চাইছেন তা তাঁর দলের নেতারা সবটা ঠিকঠাক বুঝেছেন কিনা সন্দেহ আছে! বিজেপিকে ঠেকাতে কমলনাথ মন্দিরে ঘন্টা বাজানো বাড়িয়ে দিলেন! খুব দরকার ছিল? কমলনাথের কি একবারও মনে হলো না যে ওই রাজনীতি করে তিনি হিন্দুত্বের ন্যারেটিভেই পা গলাচ্ছেন। হিন্দুত্বের রাজনীতিতে নাম ও ছবি সহ তাল মিছরি থাকতে কমলনাথের লজেন্স লোকে খাবে কেন বলুন তো? এই সহজ কথা টা বুঝতে এত অসুবিধে হলো ইন্দিরা-সঞ্জয়ের কাল থেকে রাজনীতি করে আসা কমলনাথের? বিশ্বাস করা কঠিন!
আর একটা কথা উঠছে ও আরও উঠবে। প্রণব মুখোপাধ্যায় যে ভাবে জোট রাজনীতির ক্ষেত্রে যত্নশীল ছিলেন (UPA), এখনকার কংগ্রেসে কি সেইরুপ কোনও নেতা আছেন? যিনি জোট রাজনীতির মর্ম বোঝেন ও শরিকদের সম্মান করেন? প্রশ্ন উঠছে ও আরও উঠবে, I.N.D.I.A জোট কে পাঁচ বিধানসভার আগে কার্যকর করতে কী অসুবিধা ছিল? লোকসভা নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকার কী দরকার ছিল? রাজস্থানে সিপিএম কে, মধ্যপ্রদেশে এসপি ও বিএসপি কে কেন ছাড়া গেল না? বাস্তব বুঝতে কেন এত অসুবিধা হলো কংগ্রেসের?
এই ফলাফলে শুধুমাত্র এই দুটি রাজ্যের ভাগ্য নির্ধারণ তো হলো না, লোকসভা ভোটেও বেড়ে গেল জোট জটিলতা। সুচারু রাজনীতিক মোদি সংসদে শীতকালীন অধিবেশন শুরুর আগে যে সদর্থক রাজনীতির আহ্বান বিরোধীদের প্রতি করলেন, তাতে ইন্ডিয়া শরিকদের কাছে মলাট দেওয়া যে বার্তা গেল, তার মানে একটাই…চব্বিশের আগে নিজেদের ভালো মন্দ বুঝে নাও, এটাই লাস্ট চান্স! রাজনীতির কারবারীদের কাছে এটাও কোনও দুর্বোধ্য কবিতা নয়। তাঁরাও কেউ কেউ ইতিমধ্যেই ভালো-মন্দ বুঝে ফেলেছেন; কেউ বা অচিরেই বুঝবেন।
আর বাকি রইল ছত্তিশগঢ়। তেলেঙ্গানায় হেরে কেশব রাওয়ের উপলব্ধি হয়েছে যে ভালো কাজ করলেই ভোটে ভালো হয় না। তিনি ও তাঁরা অনুন্নত তেলেঙ্গানা কে উন্নত রাজ্যে পর্যবসিত করেও হেরেছেন। ইতিহাস ঘাঁটলে এই রকম আরও উদাহরণ আছে। তাই তেলেঙ্গানায় বিআরএস- এর জন্য যা সত্যি হয়েছে, ছত্তিশগঢ়ে কাজ করেছে সেই একই সত্য।
সেলসম্যানসিপে আর সব কিছুর সঙ্গে কৌশলও লাগে। রাহুলের মহব্বতের দোকানের ক্ষেত্রেও তা সত্যি।
তিনটি রাজ্যে জয়ের পরেই ভোট এগিয়ে আসার খবর রয়েছে বাজারে। রাহুল তৈরি তো?