মধুমন্তী :
ইদানীং একাধিক বায়পিক তৈরি হচ্ছে। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে বেশীরভাগ বায়োপিকই হচ্ছে কোনও-না-কোনও খেলোয়াড়ের জীবনকে কেন্দ্র করে।
আগে বায়োপিক হত অন্ধকার জগতের ডনদের নিয়ে। শোনা যায়, ‘দিওয়ার’ নাকি ছিল হাজি মস্তানের জীবননির্ভর। হাজি মস্তান ছিল মুম্বইয়ের অন্ধকার জগতের বাসিন্দা। এও শোনা যায়, তাঁর টাকাতেই নাকি তৈরি হয়েছিল ‘দিওয়ার’। অমিতাভ বচ্চন অভিনীত চরিত্রটাই তারই। এমন বহু ছবি তৈরি হয়েছে বলিউডে।
খেলোয়াড়দের নিয়ে বায়োপিকের শুরু সম্ভবত ২০০৭-এ ‘চক দে ইন্ডিয়া’ থেকে। ভারতীয় হকি দলের এক গোলকিপারকে কেন্দ্র করে ছবিটি। যে-ভূমিকাটি ছিল শাহরুখের। কিছুদিন আগে মুক্তি পেল ‘সচিন: আ বিলিয়ন ড্রিমস’ও বক্স-অফিস চূড়ান্ত সফল। এই জনারের ছবি ‘ভাগ মিলখা ভাগ’ ভীষণই মুগ্ধ করেছিল দর্শকদের। হলিউড কিংবা বলিউডে একাধিক খেলোয়াড়দের নিয়ে বায়োপিক তৈরি হলেও টলিউডে এখনও সেইভাবে কাজ শুরু হয়নি।
তবে শুধুই খেলোয়াড়দের নিয়ে বায়োপিক কেন! এ ব্যাপারে পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, “স্পোর্টস পার্সনদের নিয়ে বায়োপিক তৈরি হওয়ার কারণ খেলোয়াড়দের জীবনে অনেক স্ট্রাগল থাকে অ্যাচিভমেন্টের একটা বিষয় থাকে। মানুষ দেখতে চান সে কারণেই। একদম মিনিংলেস যে-ধরনের ছবি তৈরি হচ্ছিল,তার থেকে এইসব ছবি তৈরি হচ্ছে এটা খুব ভাল ব্যাপার।”
অন্যদিকে টলিউডে হাতে গোনা বায়োপিক সম্পর্কে কমলেশ্বর বাবু জানান, ‘কোনি’ এবং তাঁর নিজের পরিচালিত ‘মেঘে ঢাকা তারা’ বায়োপিক।
‘কোনি’কে বায়োপিক হিসেবে চিহ্নিত করলেও ছবিটি তৈরি হয়েছিল মতি নন্দীর উপন্যাস থেকে। মতি নন্দীর কাছ থেকে জেনেছিলেন আমার এক সহকর্মী, ‘কোনি’র ক্ষিতদার চরিত্রটা উনি লিখেছিলেন কলকাতার নামী সাঁতার ক্লাবের এক কোচের জীবন দেখে। আর কমলেশ্বরের ‘মেঘে ঢাকা তারা’ তো ঋত্বিক ঘটকের জীবন থেকে নেওয়া।
বায়োপিক ছবি প্রসঙ্গে বর্তমানের বাণিজ্য-সফল পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেছেন, “খেলোয়াড়রা মানুষের কাছে এমনিই জনপ্রিয়। যাঁরা সফল হয়েছেন তাঁদের জীবনকাহিনি পড়তে আমাদের সকলেরই ভাল লাগে। টলিউডে সেভাবে খেলোয়াড়দের নিয়ে কাজ শুরু না হলেও ভবিষ্যতে সেই কাজ নিশ্চয় হবে। পাশাপাশি একটা বড় বিষয় হল ছবির বাজেট, এটা মাথায় রাখতে হবে। খেলোয়াড়দের নিয়ে কাজ করতে গেলে অনেক বাজেটের প্রয়োজন হয়। তাই আমাদের এখানে
যে-বাজেটে কাজ হয় সেখানে কাজ করাটা সমস্যার। তবে ব্যক্তিগতভাবে সাধারণ মানুষের জীবন আমায় অনেক বেশি অনুপ্রেরণা দেয়। আমার মায়ের জীবনটা আমার কাছে অনেক বেশি ইন্সপায়ারিং। আমার দিদির জীবন, আমার চারপাশের সাধারণ মানুষের জীবন, যে-মানুষগুলোকে দেখে আমি বড় হয়েছি, সেই মানুষগুলোর জীবন আমাকে অনেক বেশি ইন্সপায়ার করে। আমার সিনেমাতেও তাঁদের কথাই বেশি এসেছে। ‘ইচ্ছে’ ছবিটাও তেমনই, আমার বন্ধুর মায়েদের যেরকম দেখেছি, সেটা নিয়ে ছবি করেছি। যেরকম অলকানন্দাদি (রায়)-কে আমার সুপার উওম্যান মনে হয়। তিনি যেভাবে একা মহিলা হিসেবে একটা সংশধোনাগারের ভিতরে গিয়ে দু’হাজার আবাসিককে শিক্ষিত করার চেষ্টা করছেন কালচার থেরাপির মধ্যে দিয়ে, এটা একটা অবিশ্বাস্য ঘটনা। বিডি শর্মাকে আমার সুপার হিরো মনে হয়। উনি আইজি-র চেয়ারে বসে যে সিদ্ধান্ত নিতেন তা অসাধারণ! ব্যক্তির থেকে ব্যক্তিত্ব অনেক আলাদা হয়। এইসব মানুষের জীবনব্যথা বা জীবনচর্চা আমায় অনেক বেশি ইন্সপায়ার করে। পরিচালক মুহূর্তে মুহূর্তে পরিবর্তন হয়, আমি মানুষ হিসেবে সকালে একটা সিনেমা ভাবি, দুপুরবেলা একটা সিনেমা ভাবি। আবার রাত্রিবেলা অন্য একটা সিনেমা ভাবি। কেউ কিছু বলতে পারে না। আজ যা বলছি, পরশুদিন গিয়ে হয়তো কোনও-একটা মানুষের জীবন আমায় এতটাই ইন্সপায়ার করল, আমি তাঁকে নিয়ে ছবি বানাব।”
বাংলা ছবিতে যে বায়োপিক যে একদম হচ্ছে না, তা নয়। নবীন দাসকে হচ্ছে ‘রসগোল্লা’। কবি জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে ছবি হচ্ছে। জীবনানন্দ হচ্ছেন ব্রাত্য বসু। মহিলা ফুটবলার কুসুমিতাকে নিয়েও ছবি হচ্ছে, ছবির নামও ‘কুসুমিতা’। যে-ভূমিকায় অভিনয় করছেন উষসী।
লাইক ও শেয়ার করুন