বিশ্বনাথ চক্রবর্তী, অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক :
সংবিধানের ২৪৩-এর কে এবং জেড এ ধারায় কমিশনারকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না কমিশনারের ব্যবহার। সারাদিন দরজা বন্ধ করে থেকে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং সাংবাদিকের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ না করাও যথেষ্ট নিন্দনীয়। জাতীয় নির্বাচন কমিশন-এ যাঁরা কাজ করেন তাঁরা সবসময় চান মানুষের সঙ্গে যোগসাজশ রাখতে, ওয়ার্কশপ করেন, জাতীয় স্তরে এ বিষয়ে বিতর্কও করেন। সেখানে অমরেন্দ্র সিং-এর দরজা বন্ধ করে দেওয়া ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশনের বিরুদ্ধে এমনকি ভারতের নির্বাচন প্রক্রিয়ারও বিরুদ্ধে। যদিও ভারতের নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কোনও সম্পর্ক নেই। জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে সবাই রোল মডেল ভাবে সারা পৃথিবী জুড়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার নির্বাচনের সময় সময় ভারতের নির্বাচন কমিশনকে ডাকা হয়েছিল। ফলে, সেই নির্বাচন কমিশন মানুষের সঙ্গে যোগসাজশ রেখে উন্মুক্ত হয়ে যে-ধরনের কাজকর্ম করে অংশগ্রহণের মাধ্যমে, রাজনৈতিক দল তাদের সবচেয়ে বড় স্টেক হোল্ডার তাদের সঙ্গে আলাপচারিতার মাধ্যমে, সেই স্পিরিটটাই গতকালকে ছিল না ইলেকশন কমিশনারের ভূমিকায়। রাজ্য নির্বাচন চলাকালীন আমি মহারাষ্ট্রে একাধিকবার গেছি। নির্বাচনের দিন মহারাষ্ট্রের নির্বাচন কমিশনার এতটাই ক্ষমতাশালী এবং এতটাই তাঁর উন্মুক্ত, টেলিভিশনেও সেটি দেখানো হয়েছে আজ থেকে ১০ বছর পর কোথায় কবে ইলেকশন হবে সেই তথ্য তাঁরা সর্বসমক্ষে হ্যান্ডবিল ছাপিয়ে দিয়ে দেন। ২০২২ সালে কোন জেলার কোথায় নির্বাচন হবে সেটাও ওঁদের বলে দেওয়া আছে। যেটা রাজ্যসরকার ডিকটেট করার কেউ নয়, এতটাই স্বচ্ছ। সেখানে কমিশনার যে-ভূমিকা নিল, স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে কথা বললেন না, মানুষ তাদের ভাবনা সম্পর্কে কিছুই জানতে পারল না, এটা গণতন্ত্র বিরোধী, কোনও প্রতিষ্ঠানের কোনও সংবিধানের কাজের ধরনের সঙ্গে মেলে না। এবং শুধু তাই নয়, যে-কোনও সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে যে-ভাবনাগুলো কাজ করে স্বচ্ছতা, দায়িত্ব, সেটারও বিরুদ্ধে। এবং সেটার থেকেও বড় কথা যেটা আমার আরও মনে হচ্ছে যে স্টেট ইলেকশন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের অভিযোগ জানাতে দিল না। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল এই পুরসভাগুলোতে তারা তো উৎসাহিত হবে। আগামী দিনে তারা আরও বেশি করে উৎসাহিত হবে এবং এই ধরনের অপরাধমূলক কাজ করতে উৎসাহ বোধ করবে, যে আমাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগই নেয় না। জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে মানুষের প্রতিবাদ করা উচিত। গতকালের ঘটনায় প্রত্যেকের সামনে এসে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা উচিত।