দেবক বন্দ্যোপাধ্যায় :
দু’দিন আগে কথা হচ্ছিল জয় গোস্বামীর সঙ্গে। বাদুড়িয়া কাণ্ডের নিন্দে করলেন জয় দা, নিজের মতো করে। কথায় কথায় জানতে চাইলাম নন্দীগ্রামের পর আপনি কয়েকটা সাংঘাতিক কবিতা লিখেছিলেন। বাদুড়িয়া কি আপনাকে কবিতা দিচ্ছে? জয় দা বললেন, সব ঘটনাতেই কবিতা আসবে তার কোনও মানে নেই। মনে দাগ কাটবে। কষ্ট হবে। হয়তো পরে কোনওদিন কবিতা আসবে বা আসবেই না। কবিতা যাঁরা লেখেন, পড়েন তাঁরা এটা বোঝেন।
ফেসবুকে কবিতা লেখার একটা সুবিধে আছে। লহমায় অনেক পাঠক পাওয়া যায়। তাঁরা কতজন কবিতার পাঠক তা নিয়ে ভাবনার বিস্তর অবকাশ আছে তবু মোটের ওপর তাঁরা পাঠক।
কিছুদিন আগে শ্রীজাতর একটি কবিতা খুব হইচই ফেলে দিয়েছিল। ধর্মের ত্রিশূলে কন্ডোম পরাতে চেয়ে শ্রীজাত নিজের বিপদ বাড়িয়ে ছিলেন। একই সঙ্গে শাপে বরের মতো তাঁর পরিচিতিও বিস্তৃত হয়ে ছিল অনেকটা। এমনিতে নিবিড় কবিতার জগতে শ্রীজাতর নাম অনেক আগেই সাগর পাড়ি দিয়েছে। তবে সাধারণ্যে এবার শ্রীজাতর সীমারেখা আরও বিস্তৃত হল। তবে কয়েকটা দিন শ্রীজাতকে যে অবস্থার মধ্যে কাটাতে হয়েছিল তা কহতব্য নয়। শ্রীজাতর কবিতাটি হিন্দু ভাবাবেগে আঘাত করেছিল বলে একটা রব উঠেছিল তখন। যে পঙক্তি নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল, আমার মত অতি সাধারণ কবিতার পাঠক, সেই পঙক্তিতে তেমন কোনও বিষ খুঁজে পাইনি। তোমার ওই ধর্মের ত্রিশূল বলতে শ্রীজাত হিন্দু ধর্মকে বুঝিয়েছেন মনে হয়নি। পরধর্ম নিধনের যে ধর্ম, রবীন্দ্রনাথ যাকে মোহ বলেছেন, সেই ধর্মের ত্রিশূলেই কবি কন্ডোম পরাতে চেয়েছেন বলেই আমার মনে হল। যদিও আমি কবিতার সমঝদার নই, অতি সাধারণ পাঠক মাত্র।
তবু শ্রীজাত যদি ত্রিশূল না লিখে শুধুমাত্র শূল লিখতেন তাহলেও কবিতার অর্থ বা ভাবের বিন্দুমাত্র হেরফের হত না। তবু শ্রীজাত ত্রিশূল লিখলেন ও বিতর্কের জন্ম দিলেন। সনাতন ধর্মের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে এই ত্রিশূল চিহ্নটি। কবি অবলীলায় পাঁচ হাজার বছরের ভাবাবেগে সেদিন কন্ডোম পরিয়েছিলেন। যাঁরা চিৎকার করেছিলেন তাঁরা কবিতায় যে নেই তা পরিস্কার ধর্মেও আছেন বলে মনে হয় না। যে সনাতন ধর্ম মন্দিরগাত্রে মৈথুন মূর্তি বসাতে পারে সেই ধর্মকে অনুধাবন করা হল্লাবাজদের কাজ না। তবু শ্রীজাতর সেদিন সংযমী হওয়া, শব্দচয়নে সচেতন হওয়া উচিত ছিল। তিনি মনে রাখলে ভাল করতেন এখানে যাঁরা পড়বেন তাঁরা অনেকেই কবিতার কেউ না। শ্রীজাত সেদিন তা মনে রাখেননি, যেমন মনে রেখেছেন বাদুড়িয়া নিয়ে লিখতে গিয়ে। সংযত, শালীন, মার্জিত। প্রথমেই খুব সহজ করে বুঝিয়ে দিয়েছেন দাঙ্গা যাদের ধর্ম তারা কবির পড়শি না। এখানে সংযত আবেগ শিল্পের সুষমা বাড়িয়েছে। এবার আর বিতর্কের ভয় নেই।