দেবক বন্দ্যোপাধ্যায় :
হিন্দু ভাবাবেগে আঘাত লাগার অভিযোগ তুলে বজরং দল আর বিশ্বহিন্দু পরিষদের ঘেরাও অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে সামলে দিল লালবাজার।
একই সঙ্গে প্রশ্ন তুলে দিল কয়েক বছর আগের আর একটি ভাবাবেগে আঘাত ও সেই আঘাতজাত বিশ্বৃঙ্খার ঘটনা কী সামলে দিতে পারত না পুলিশ! কয়েকবছর আগে এমনই একটি ঘটনার ফলশ্রুতি হিসেবে তসলিমা নাসরিনকে রাজ্য ছাড়তে হয়েছিল।
পুলিশ সুত্রের খবর বৃহস্পতিবারের বজরং দলের কর্মসুচির মোকাবিলা করতে বুধবারই বিশেষ নির্দেশ পাঠিয়েছিল নবান্ম। পুলিশ ডিপার্টমেন্টের সব ক্যামেরাম্যানকে এদিন নামানো হয়েছিল চাঁদনি-ধর্মতলা চত্বরে। তাঁদের সঙ্গে ব্যাগপ্যাকও ছিল যার ফলে তাঁরা সমস্ত ফুটেজ তখনই পাঠিয়ে দিচ্ছিলেন হেডকোয়াটার্সে। ছবি দেখে প্রয়োজনীয় নির্দেশও পাঠাচ্ছিলেন দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্তারা। গোয়েন্দাবিভাগ এদিন পুরো সময় সজাগ দৃষ্টি রেখেছেন বজরং বা ভিএইচপির কোন নেতা চাঁদনী অঞ্চলে আসছেন তার ওপর। দায়িত্বে থাকা গোয়েন্দারা চিনিয়ে দিয়েছেন আর পুলিশ দেখামাত্রই তাঁদের গ্রেফতার করেছে। এমনকি একদিন আগে থেকে নেতাদের ঘোরাফেরার ওপর নজর রেখেছিলেন গোয়েন্দারা। হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশনেও গোয়েন্দাদের উপস্থিতি এদিন ছিল বলে খবর। জেলা থেকে কেউ আসছে কিনা সেদিকে নজর ছিল তাঁদের। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গা পুজো। সেই বাঙলির রাজ্যেই দুর্গার অসম্মানের কারণ দেখিয়ে শান্তিপুর্ণ অবস্থান কর্মসুচি রুখে দিতে পুলিশের ভুমিকায় অনেকে অবাক হয়েছেন। কারও মনে পড়েছে তসলিমার চলে যাওয়ার দিনটা। কলকাতায় তসলিমার ঘনিষ্ঠরা আফসোস করেছেন। বলেছেন, সেদিন যদি পুলিশের এমন ভুমিকা থাকত! যদি থাকতো তাহলে হয়তো ছবি-কবিতার শহর কলকাতার, বিশ্বের সামনে আরও সম্মান বাড়ত। সমীর আইচ, শুভাপ্রসন্নর মতো শিল্পিরা যাঁরা এদিন আন্দোলনকারীদের ওপর বিষোদগার করেছেন এবং শিল্পীর স্বাধীনতার পক্ষে সওয়াল করেছেন তাঁরাও হয়ত আরও সম্মানিত বোধ করতেন। ছবির শহর প্যারিসের সঙ্গে উচ্চারিত হত কলকাতার নাম। শিল্পীর স্বাধীনতা, লেখকের স্বাধীনতার বিষয়টা আংশিক হত না। সব অবস্থাকেই লেখক-শিল্পীরা স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারতেন।
কোনও বুদ্ধিজীবী, কোনও রাজনৈতিক দল সেদিন শিল্পের স্বাধীনতার কথা বলেননি। বরং ভাবাবেগে আঘাতটাই তাঁদের কাছে বড় হয়েছিল।
সে যাই হোক এদিন পুলিশের ওপর কড়া নির্দেশ ছিল যেন লাঠি না চলে।