পার্থসারথি পাণ্ডা:
উনিশ শতকের কলকাতায় বড়লোক-অভিজাতদের বাড়ির চাকরবাকরদের একদম ক্লিন সেভ থাকতে হত, দাড়ি তো নয়ই, এমনকি গোঁফ রাখারও হুকুম ছিল না। সেকালের কেতাসর্বস্ব কলিকাতায় চাকর আর বাবুর এক কেতা তো আর হতে পারে না! কারণ, শৌখিন গোঁফ রাখার চল ছিল তখন বাবুদের। কেউ কেউ দাড়িও রাখতেন। প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের আমলে ঠাকুরবাড়িতে পুরুষদের শুধুই গোঁফ রাখার প্রথা ছিল, দাড়ি কেউ রাখতেন না। দ্বারকানাথ কোনদিন রাখেননি। ঠাকুরবাড়িতে দাড়ি রাখার প্রথা চালু করেছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেটাও চালু হয়েছিল বেশ নাটকীয়ভাবে নাটকের মধ্য দিয়ে।

ভবানীচরণ বন্দোপাধ্যায় তখন বেয়াড়া বাবুদের নিয়ে ব্যঙ্গ লেখা ‘নববাবু বিলাস’ লিখে ফেলেছিলেন। দেবেন্দ্রনাথের রোখ চাপল সেটাকেই প্রহসন হিসেবে গুছিয়ে নিয়ে বাড়িতে অভিনয় করাবেন। কিন্তু সাজপোশাকে নকল কিছুই থাকবে না, চুলদাড়িও আসল হতে হবে, একেবারে সেকেলে বাবুদের মতো। ফলে, হুকুম হল চালাও পানসি বেলঘরিয়া, বাড়াও নিজেদের দাড়িগোঁফ। অভিনয়টা যেহেতু বাড়িতেই হবে এবং অভিনয় করবেন বাড়ির ছেলেরা, কর্মচারীরা ও পারিবারিক বন্ধুরা—তাঁরা সবাই চুলদাড়ি গুছিয়ে বাড়াতে শুরু করলেন। দেবেন্দ্রনাথের ভাগনে ঈশ্বর মুখোপাধ্যায়, তিনি ছিলেন ঠাকুরবাড়ির আশ্রিত এবং দেবেন্দ্রনাথের বাল্যবন্ধু। তাঁকে দেবেন্দ্রনাথ বললেন দারোয়ান সাজতে। দারোয়ান সাজতে গিয়ে তাঁকেও রাখতে হল দাড়ি, বাড়াতে হল চুল। সেই চুল পাটি করে আঁচড়ালে ঠেকে এসে দাড়ি আর গালপাট্টায়, তখন তাঁকে এমন মানতো না, দারুণ! দেবেন্দ্রনাথের সেটা এতটাই পছন্দ হয়েছিল যে, নিজেও দাড়ি বাড়াতে শুরু করলেন। রেখেও দিলেন সব দিনের জন্য। চোখে পরতে শুরু করলেন মানানসই গোলফ্রেমের সোনার চশমা। ব্যস, তাঁর দেখাদেখি ঠাকুরবাড়ির উঠতি ছেলেছোকরাদের কাছে সেটাই হয়ে গেল তখনকার ফ্যাশান। সেখান থেকে এই ট্রেন্ড ছড়িয়ে পড়ল ঠাকুরবাড়ির বাইরে। এই ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারেই রবীন্দ্রনাথের দাড়িগোঁফ ও লম্বা চুলের বাহার!
তথ্যঋণ : ঘরোয়া– অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও শ্রীমতী রাণী চন্দ
Channel Hindustan Channel Hindustan is Bengal’s popular online news portal which offers the latest news