প্রসেনজিৎ ধর
রাজ্য জুড়ে সিন্ডিকেটরাজ এবং সিন্ডিকেটরাজ থেকে জন্ম নেওয়া গোষ্ঠীদ্বন্দ তৃণমূল কংগ্রেসকে বারবার কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বারবার সরব হয়েছেন তাঁর নিজের দলের এই ব্যাধির বিরুদ্ধে। পরিস্কারভাবে বলেছেন, সিন্ডিকেট করার হলে তৃণমূল করবেন না।
রাজ্যের ভুক্তভোগীরা জানেন সিন্ডিকেট বলতে ঠিক কি বোঝায়। তবু সংক্ষেপে একবার পূর্ব পাঠের পুনরালোচনা এক্ষেত্রে দরকার।
বড় কোনও প্রোমোটিং কোম্পানি হোক কিংবা ছোট, বিল্ডিং নির্মাণ করতে গেলে ইমারতি দ্রব্য কিনতে হবে স্থানীয় কয়েকজনের থেকে। এই কয়েকজনকে নির্দিষ্ট করে দেবেন স্থানীয় কোনও এক বা একাধিক নেতা। শুধু প্রোমোটিং কোম্পানিই নয় সিন্ডিকেটের গ্রাস থেকে বাদ যান না সাধারণ মধ্যবিত্তও।
সল্টলেকের কাউন্সিলর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় এই রকমই এক অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন। তাঁর গ্রেফতার হওয়াকে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মমতার জেহাদের উদাহরণ হিসেবেই সে সময় দেখান হয়েছিল। তবে কী ওই পর্যন্তই! তৃণমূল কী এখনও সেই তৃণমূলেই রয়ে গেল! প্রশ্ন উঠছে, কারণ উত্তরপাড়ায় আবার সামনে এসেছে সিন্ডিকেটরাজ ও সিন্ডিকেটজনিত গোষ্ঠীদ্বন্দ।
উত্তরপাড়ার ভদ্রকালীতে দুই সিন্ডিকেটগোষ্ঠী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বৃহস্পতিবার রাতে। চারজন আহত হয়েছে তার মধ্যে
তিনজন হাসপাতালে ভর্তি। নামী নির্মাণ সংস্থা ইউনিমার্কের উত্তরপাড়া একটি আবাসনে নির্মান সামগ্রী ফেলা নিয়ে শুরু হয় গন্ডগোল। স্বপন পাল সহ চার জন একটি গাড়ি করে বৃহস্পতিবার রাতে ভদ্রকালীতে প্রসূন দে নামে এক যুবককে মারধোর করতে যায় বলে অভিযোগ। এলাকার বাসিন্দারা পাল্টা তাদের গাড়ি ভাঙচুর করে।মারধোরও করে। দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত হন চারজন। ঘটনায় দুজন কে আটক করেছে পুলিশ।
এত অবধি ঘটনা আর পাঁচটা ঘটনার মতই। তবে এলাকার তৃণমূল নেতা এবং পুরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল তাপস মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য ঘটনায় অন্য মাত্রা এনে দেয়। তাপস কার্যত মেনে নেন উত্তরপাড়ায় সিন্ডিকেটের অস্তিত্বের কথা। বলেন, “উত্তরপাড়ায় সিন্ডিকেট নিয়ে গণ্ডগোল কখনও হয়নি।” পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তাঁর বক্তব্য, “এখানে সিন্ডিকেট নেই। ৫-৬ জন গ্রুপ করে মাল দিচ্ছে। এটা আপনার কাছে সিন্ডিকেট হতে পারে। আমার কাছে নয়।” যদিওবা এই প্রজেক্টে ৫-৬ জন নয়, ২০-২২ জন ইমারতি দ্রব্য সরবরাহ করে বলে জানিয়েছেন এই ঘটনায় জড়িত এক মাল সরবরাহকারী।
তৃণমূলেরই অন্দরের খবর, মুখ্যমন্ত্রী সিন্ডিকেট নিয়ে সরব হওয়ার পর সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। তবে এটা পুরোটাই চোখে ধুলো দেওয়ার সামিল। সিন্ডিকেটের নাম বদলে এখন নতুন নাম হয়েছে কমিটি। আর ৫-৬ জন ছেলে গ্রুপ করে মাল সরবরাহ করার যে কথা তাপস বলেছেন তা আসলে ওই কমিটি। এই কমিটি সিন্ডিকেটেরই নামান্তর।
সংবাদমাধ্যমের সামনে এ হেন সিন্ডিকেটের কথা কার্যত স্বীকার করে তাপস দলের অস্বস্তি বাড়ালেন বলেই মনে করছে দলেরই একাংশ।
বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
https://www.youtube.com/channelhindustan
https://www.facebook.com/channelhindustan