Breaking News
Home / TRENDING / জানেন কি, কৃষ্ণাচতুর্দশীর রাতে শিবরাত্রিব্রতের গোপন রহস্য?

জানেন কি, কৃষ্ণাচতুর্দশীর রাতে শিবরাত্রিব্রতের গোপন রহস্য?

পার্থসারথি পাণ্ডা : 

ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণাচতুর্দশীতিথির রাতটিকে বলা হয়, ‘শিবরাত্রি’। এই রাতটি শিবের বড় প্রিয়। একথা আমরা সকলেই অল্পবিস্তর জানি। কিন্তু প্রশ্নটা হলো, বৎসরের বারোটি মাসে বারোটি কৃষ্ণাচতুর্দশী থাকতে শিবের কাছে হঠাৎ ফাল্গুনের কৃষ্ণাচতুর্দশীই প্রিয় হয়ে উঠল কেন?

এর উত্তর পেতে গেলে, আমাদের পুরাণের যুগে যেতে হবে। সেযুগে এখনকার মতো বছরের মাস গণনা, বৈশাখে শুরু হয়ে চৈত্রে শেষ হত না। তখন চৈত্র মাসের নাম ছিল, ‘মধুমাস’। সেই মধুমাসে বছর শুরু হয়ে, শেষ হত ফাল্গুনে। তাই সারা বছরের পাপ, গ্লানি, মলিনতা, দুঃখ, দৈন্যতা থেকে মুক্ত হতে বছরের এই শেষ মাসটির কৃষ্ণাচতুর্দশীতিথিতে শিবশম্ভূ স্বয়ং তাঁকে ভজনা করার কথা বলেছেন।

সেযুগে সাধারণ মানুষের কাছেও ‘বছর’ নিছক বারোটি মাসের সমাহার ছিল না, জীবনবৃত্তের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। বছর শেষ হলে যেমন নতুন বছর আসে, তেমনি জীবনবৃত্ত পূর্ণ হলে মৃত্যুতে জীবন শেষ আর পুনর্জন্মে নতুন জীবন শুরু হয় বলেই তাঁদের বিশ্বাস ছিল। তাই বছরের শেষ মাসে অর্থাৎ জীবনের উপান্তে এসে তাঁরা শিবের ভজনা করে প্রার্থনা করতেন, শিব যেন তাঁদের মুক্তিদান করেন, পুনর্জন্ম দিয়ে আর যেন দুঃখের জীবনে না-পাঠান।

সে না হয় বুঝলাম, কিন্তু এই মাসটির দুই পক্ষে তিরিশ তিথি থাকতে একা কৃষ্ণাচতুর্দশীই শিবের প্রিয় হল কেন?

মহাদেব শিব মহাকাল মহাযোগী। তাঁকে পেতে তাই যোগী বা যোগিনীর মতো সাধনা করতে হয়। বেদশাস্ত্রে ‘ব্রত’-কে বলা হয়েছে, ‘কর্ম’। এদিন উপবাস, জাগরণ আর শিবপূজা—এই তিনটিই যোগীর একমাত্র কর্ম বা ব্রত। ‘কঠ উপনিষৎ’ বলছেন, যোগ সাধনায় আমাদের পাঁচটি কর্মেন্দ্রিয়(বাক, পাণি, পাদ, পায়ু ও উপস্থ), পাঁচটি জ্ঞানেন্দ্রিয়(চোখ, কান, নাক, জিভ ও ত্বক), চারটি অন্তঃকরণ(মন, অহং, চিত্ত ও বুদ্ধি) সংহত বা সংযত রাখতে হয়, একমাত্র তবেই ভগবান শিবকে পাওয়া যায়। দশ ইন্দ্রিয় আর চার অন্তঃকরণের যোগফল, চোদ্দ। এই চোদ্দের সঙ্গে আছে তিথি চতুর্দশীর যোগ।

লোক সাধারণের কাছে যা ‘রাত’, যোগীর কাছে তাই ‘দিন’। কৃষ্ণপক্ষে চতুর্দশীর নিকষ কালো রাত তাই যোগীর কাছে আলোকময় দিন। অন্যদিকে ‘শিবরাত্রি’-র আরও একটি অর্থ আছে। ‘শিব’ কে? যিনি শবের মতো নির্বিকার, যিনি সদা শান্ত, যিনি সমস্ত জীবের আশ্রয়, যিনি সুখস্বরূপ, মঙ্গলময়, তিনিই তো ‘শিব’। আর ‘রাত্রি’ কি? দিনের শ্রান্তি, অতৃপ্তি দূর করতে মায়ের মতো যিনি নিজের কোলে জীবকে স্থান দেন, সন্তানস্নেহে ঘুম পাড়ান, তিনিই ‘রাত্রি’। যিনি জীবের নিদ্রাকালে আবির্ভূতা হয়ে তাদের কর্মাকর্মের ফল দান করেন,  তিনিই ‘রাত্রি’। ঋগ্বেদের ‘রাত্রিসূক্তে’ এঁকেই বলা হয়েছে, ‘চিন্ময়ী ভুবনেশ্বরী’। বলা হয়েছে, ‘দেবী দুর্গা’। বলা হয়েছে, ‘শিবা’। তাই ‘শিবরাত্রি’ একত্রে শিব ও শিবার মিলন। দুজনে মিলিত হয়ে সমস্ত জগতের কল্যাণ করাই তাঁদের উদ্দেশ্য। সেজন্যই ‘স্কন্দপুরাণ’-এর ‘নাগর খন্ডে’ স্বয়ং শিব বলেছেন যে, কলিযুগে বৎসর শেষের কৃষ্ণাচতুর্দশীর রাত্রে তিনি সমস্ত গণ ও অনুচরদের সঙ্গে পৃথিবীতে অবতরণ করবেন। সারা বছরের পাপ থেকে জীবকে মুক্ত করার জন্য শক্তির আধার হয়ে সমস্ত লিঙ্গ ও মূর্তিতে অধিষ্ঠান করবেন। তাই এই রাতে যারা তাঁর পূজা করবেন, তাঁরা সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়ে, শুদ্ধ ও পবিত্র হয়ে উঠবেন; পাবেন মুক্তির স্বাদ।

বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

https://www.youtube.com/channelhindustan

https://www.facebook.com/channelhindustan

Spread the love

Check Also

চোরেদের মন্ত্রীসভা… কেন বলেছিলেন বাঙালিয়ানার প্রতীক

ডঃ অরিন্দম বিশ্বাস : আজ বাংলার এবং বাঙালির রাজনীতির এক মহিরুহ চলে গেলেন। শ্রী বুদ্ধদেব …

আদবানি-সখ্যে সংকোচহীন ছিলেন বুদ্ধ

জয়ন্ত ঘোষাল : লালকৃষ্ণ আদবানির বাড়িতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মধ্যাহ্ন ভোজে আসবেন। বাঙালি অতিথির আপ্যায়নে আদবানি-জায়া …

নির্মলার কোনও অর্থনৈতিক চিন্তা-ভাবনা নেই

সুমন ভট্টাচার্য এবারের বাজেটটা না গরিবের না মধ্যবিত্তের না ব্যবসায়ীদের কাউকে খুশি করতে পারলো। দেখে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *