মধুমন্তী :
২২ মে সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনা নিয়ে নিন্দার ঝড় সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সাংবাদিক মহলে। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রেস ক্লাব, কলকাতা সম্পাদক কিংশুক প্রামাণিক বললেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত নিন্দনীয়। সমালোচনা সব বিষয়েই হয় এবং হবেও। আমি বোলপুরে ছিলাম বলে সই করতে পারিনি। প্রেস ক্লাবের প্যাডে লেখা চিঠি কেন গ্রাহ্য হবে না সই ছাড়া! আমরা বাইরে আছি, ফিরলে এগজিকিউটিভ কমিটির মিটিং ডাকব। তারপর আমাদের বক্তব্য জানাব।”
সাংবাদিক নিগ্রহের প্রতিবাদে ২৩ এবং ২৪ মে পথে নেমেছিলেন সাংবাদিকেরা। এ নিয়ে কলকাতা প্রেস ক্লাবের ভূমিকায় উঠেছে নানা প্রশ্ন। কারণ, এই ঘটনার প্রতিবাদে প্রেস ক্লাব থেকে যে-চিঠি পাঠানো হয়েছিল তাতে ছিল না প্রেস ক্লাবের সভাপতি বা সম্পাদকের স্বাক্ষর। এ প্রসঙ্গে আগেই ক্লাবের সম্পাদক বলে দিয়েছেন ঘটনাটি কি ঘটেছিল। প্রেস ক্লাবের ভূমিকায় উঠেছে সমালোচনার ঝড়। কবি সাংবাদিক মৃদুল দাশগুপ্ত বলেন, “অত্যন্ত নিন্দনীয় ব্যাপার হয়েছে। সাংবাদিকেরা তাঁদের কাজ করতে যান। তাঁদের ওপর এই নিগ্রহ এর আগেও হয়েছে। সাংবাদিকদের কাজে বাধা দেওয়া হয়েছে। তাঁরা একটা আন্দোলন কভার করতে গেছেন, সেখানে এমন ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। গণতন্ত্রের পক্ষে এটা খুব লজ্জাজনক। এটা কোনও রাজনীতির রং দেখে বলছি না, যে এই অন্যায় করবে তার বিরুদ্ধেই কথা বলব। বাধাদান গণতন্ত্রে চলতে পারে না।”
বর্ষীয়ান সাংবাদিক রন্তিদেব সেনগুপ্ত এ প্রসঙ্গে বলেন, “সংবাদমাধ্যমের একটা বৃহৎ অংশই সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছে। এখন একটা গরিষ্ঠ অংশই সরকারের মুখাপেক্ষী। তার কারণ আছে। কিছু ব্যক্তিগত কারণে আর কিছু সরকারের ভয়ে, নানাভাবেই সরকারের মুখাপেক্ষী। কিন্তু এটা ঠিক নয়। সরকারের ভয়ে যদি নিজেকে গুটিয়ে রাখে তাহলে গণতন্ত্র বিপন্ন হয়ে পড়ে।”
২৪ ঘণ্টার চিফ রিপোর্টার রজতশুভ্র মুখোটি জানান, “প্রেস ক্লাবের আরও বেশি রেসপন্সিবল হওয়া উচিত ছিল। গোটা বিষয়টা নিয়ে প্রেস ক্লাবের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের দরকার ছিল। চিঠিতে স্বাক্ষর না থাকায় নিজেদের আরও গুরুত্বহীন করে ফেলেছে। জারি করছে না সেটা ঠিক ছিল। তাহলে বোঝা যেত সাংবাদিকদের তাঁরা অন্য অ্যাঙ্গেল থেকে দেখছে। কিন্তু জারিও করল আবার তাতে সই করল না এটা খুবই দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয়। আরও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করা উচিত ছিল।”
আনন্দবাজারের সাংবাদিক সন্দীপন চক্রবর্তী বলেন, “খুবই দুর্ভাগ্যজনক। প্রেস ক্লাবকে আমরা আন্দোলন করার জায়গা বলে ভাবতাম, সেই জায়গাটা প্রেস ক্লাব ক্রমশ হারাচ্ছে। প্রেস ক্লাব যদি নিজেকে সরকারের কাছে নিবেদন করে দেয়, তবে তার থেকে দুঃখজনক আর কিছু হয় না।”
প্রবীণ সাংবাদিক রথীন্দ্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সাংবাদিকরা যখন বিপন্ন হন, তাঁদের ওপর যখন নির্যাতন হয়, কর্মক্ষেত্রে হোক বা বাইরে কর্তব্যসাধনের জন্য, তখন কোনও সংগঠন সরব হয় না বা আন্দোলন করে না। এটা আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা। সাংবাদিকদের যে পেশাগত সমস্যা তাঁরা বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করতে গিয়ে যে-পরিস্থিতির সম্মুখীন হন সেগুলোর ব্যাপারে এঁরা একেবারে নিশ্চুপ।”
এছাড়াও আমরা বহু সাংবাদিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। কিন্তু তাঁরা কেউই মন্তব্য করতে চাননি। কেউ কেউ বলেছেন তাঁরা এ নিয়ে নিজেরাই লিখবেন।