Breaking News
Home / TRENDING / শিল্প ভাবাবেগের চেয়ে বড় নয়

শিল্প ভাবাবেগের চেয়ে বড় নয়

চিরজিত পাল 

অজন্তা, ইলোরা, খাজুরহো-র নামে আমার ভাবাবেগ-এ আঘাত করা হবে কেন? আমি হিন্দু দেবীদের নিজের মায়ের আসনে বসাবো, সেটা আমার অধিকার। তোমার শিল্প আমার ভাবাবেগের চেয়ে বড় নয়।

হিন্দু শিল্পজীবীদের নিজেদের ‘সেকুলার’ প্রমাণ করার একটা খুব সহজ পথ আছে, হিন্দু ধর্মকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করো, তাহলেই সমাজ (পড়ুন secular liberals) তোমার নামে একটা সুন্দর সার্টিফিকেট ছাপিয়ে চারিদিকে বিলি করে দেবে। সেটা দেখিয়ে তুমি প্যারিস-এ প্রদর্শনী, রোমে শিল্পভ্রমণ, পদ্মশ্রী পুরস্কার থেকে সরকারি অনুদান সবকিছুই সহজে প্রাপ্ত করতে পারবে। কোনও অ-হিন্দু শিল্পী যদি সেটা করে তাহলে তাকেও প্রটেকশন দেওয়াটা হিন্দু শিল্পীদের অবশ্য কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। তিনি হিন্দুধর্মকে নিদারুণভাবে ভালবাসেন বলেই-না হিন্দু দেবীদের এমন শৈল্পিক ভঙ্গিমায় কল্পনা করতে পারেন, এইরকম একটা যুক্তিও বাতাসে উড়ে বেড়ায়।

তা বলে ভাববেন না যে, আপনি হিন্দু ঘরে জন্মে অন্য কোনও ধর্মকে নিদারুণ ভালবেসে তাদের দেব-দেবী অথবা ধর্মীয় symbol নিয়ে কোনও শিল্প সৃষ্টি করার ছাড় পেয়ে যাবেন। এমন করার বাসনা মাথায় এলে একবার সালমান রুশদি এবং তাসলিমা নাসরিন-এর পরিণীতি নিয়ে একটু পড়াশোনা করে নেবেন। তাঁরা স্বধর্ম নিয়েই শিল্প সৃষ্টি করেছিলেন, অন্য কারওর ধর্ম নিয়ে নয়। তাতেও বিপত্তি এড়াতে পারেননি।

অর্থাৎ ব্যাপারটা কি দাঁড়াল এই দেশে সংখ্যাগুরুর ভাবাবেগ বলে কিছু নেই, আছে শুধু সংখ্যালঘুর ভাবাবেগ। আর হবে নাই-বা কেন? সংখ্যাগুরুদের ধর্মে অজন্তা, ইলোরা, খাজুরহো আছে, ধর্মগ্রন্থগুলোতে রগরগে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের বর্ণনা আছে, অন্য ধর্মে তো এসব নেই। তাই হিন্দু ধর্মের মানুষদের এসব ব্যাপারে ভাবাবেগ থাকার কোনও যুক্তিই নেই।

এখন আপনি বলতে পারেন, এই যেসব শিল্পকীর্তি, যেগুলো নিয়ে আপনারা অজুহাত খাড়া করছেন, সেগুলো যে সেই সময়কার সাধারণ মানুষদের ভাবাবেগে আঘাত করেনি সেটার কোনও প্রামাণ্য নথি কি আপনার কাছে আছে? যাই হোক, ধরে নেওয়া গেল যে সেইসময় এই সৃষ্টিগুলো সাধারণ মানুষের কাছে খুবই সমাদৃত হয়েছিল, এবং এর থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তারা নিজেদের জীবনেও এর প্রয়োগ ঘটিয়েছিল। তাহলেই কি ধরে নিতে হবে যে আজকের দিনের মানুষকেও সেই একই কাজ করতে হবে? আমরা কি তাহলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই শিল্পকে সমাদর করার বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়ে গেলাম? তাহলে কেন রাম মন্দির-বাবরি মসজিদের প্রসঙ্গে উঠলে আমরা বলি যে যা হয়েছে হয়েছে, আমরা পেছনে তাকাতে চাই না। ইতিহাসের সব ভুল আজকের সময়ে শুধরে নেওয়া যায় না। তাহলে কি ইতিহাসকে আমরা সিলেক্টিভলি দেখব?

কিন্তু আমার মতন হিন্দু ধর্মে জন্মানো মানুষ যাঁরা আপনার বাধ্যবাধকতা মানতে নারাজ, যাদের ভাবাবেগে আঘাত লেগে যায়, তাদের কি হবে? তাঁরা কার কাছে যাবে? তাদের কি আপনাদের শিক্ষিত, শিল্পবান্ধব সমাজে জায়গা হবে না বলতে চান?

নাকি কি ভাবাবেগের মূল্য তাঁর জোট বেঁধে ভোট দেবার সঙ্গে সম্পর্কিত? আমাদের মতন মহান সেকুলার দেশে হয়তো তাই।

 

লাইক শেয়ার ও মন্তব্য করুন

বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

Spread the love

Check Also

রাহুলের পাইলট প্রোজেক্ট, মুর্শিদাবাদ কংগ্রেসে আধিপত্য হারাতে পারেন অধীর

দেবক বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে রাহুল গান্ধির নতুন উদ্যোগে মুর্শিদাবাদের কংগ্রেস রাজনীতিতে খর্ব হতে পারে অধীর …

আমি আসছি! নাম না করে শুভেন্দুকে শাসালেন আনিসুর

চ্যানেল হিন্দুস্থান, নিউজ ডেস্ক: নাম না করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারিকে শাসালেন আনিসুর রহমান। একদা …

আগামী সপ্তাহে শতাধিক ট্রেন বাতিল হাওড়া-বর্ধমান শাখায়

চ্যানেল হিন্দুস্থান, নিউজ ডেস্ক: উন্নত পরিষেবা পেতে চলেছে পূর্ব রেল হাওড়া-বর্ধমান কর্ড শাখায়, আর তার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *