গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় :
পাকিস্তানের পক্ষে মোটেই ভাল দিন যাচ্ছে না। কাশ্মীরের পাথর ছোড়ার ঘটনা বিশ্বের দরবারের না পৌঁছাতে পারলেও নিজেরাই বিশ্বের দরবারে মাথা হেঁট করে ফেলল। পাকিস্তানে বন্দি কূলভূষণ যাদবের ফাঁসির আদেশ আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশে আপাতত রদ হয়ে যাওয়ায় মোদির পক্ষে যতটা না স্বস্তির, তার চেয়ে অনেক বেশি শিরঃপীড়ার কারণ হল নওয়াজ শরিফের।
আজ নয়, কায়েদ-এ আজমের মৃত্যুর পর থেকেই পাকিস্তান যেভাবে একদিকে মসজিদ অন্যদিকে সেনাদের মাঝে পড়ে হাঁসফাঁস করছে তার থেকে বার হওয়ার উপায় বোধহয় তার নিজেরও জানা নেই। যতবার দেশে অসামরিক শাসন বলবৎ হয়েছে ততবারই মোল্লাতন্ত্র আর মিলিটারির নিঃশ্বাস তার কাঁধে এসে পড়েছে। তবুও এটা ছিল অভ্যন্তরীণ বিষয়, ভারতীয় নৌ বাহিনীর প্রাক্তন কর্মী কূলভূষণের বিচার নিয়ে পাকিস্তান যা করে ফেলল, তাতে দেশের বাইরেও বেশ খানিকটা মাথা হেঁট হয়ে গেল শরিফের পাকিস্তানের। আন্তর্জাতিক আদালত যা বলেছে তার মোদ্দা কথা হল, ফাঁসির আসামী কূলভূষণ যাদব নিজের বয়ানটুকুও লিপিবদ্ধ করার সুযোগ পাননি। পাকিস্তানের বালুচিস্তানে বছর খানেক আগে মার্চ মাসে ধরা পড়েন তিনি। পাক সেনার আদালতে তাঁর বিচার হয়। চরবৃত্তির অভিযোগে তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ হয়। ভারতের অভিযোগ ছিল, কার্যত বিনা বিচারে কূলভূষণের ফাঁসি দিতে চাইছে পাকিস্তান। মামলা সংক্রান্ত কাগজপত্র হাতে পায়নি ভারত, ভারতীয় দূতাবাসকেও অন্ধকারে রাখা হয়েছিল। কমকরে ষোলোবার ভারতীয় কূটনীতিকদের সঙ্গে কূলভূষণকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। এ প্রসঙ্গে পাকিস্তনি জঙ্গি আজমল কাসভের নামও উঠে আসে। সে প্রসঙ্গ মূলত ওঠায় অবশ্য ভারত। ভারতের বক্তব্য ছিল, এ দেশের মাটিতে যেভাবে কাসভকে জঙ্গীপনা করে মানুষ খুন করতে দেখা গিয়েছে তারপরও তার বিচার করা হয়েছিল ন্যায়সঙ্গতভাবে, তার জন্য পাকিস্তানের কাছে আইনজীবী চাওয়া হয়েছিল। পাকিস্তান তা দেয়নি বলে ভারতেই তার পক্ষ নিয়ে কথা বলার জন্য আইনজীবী নিযুক্ত করা হয়েছিল। অথচ কূলভূষণের ক্ষেত্রে পাকিস্তান যা করেছে তা অনৈতিক এবং তাদের কাপুরুষতার নজির। পাকিস্তান ভারতের কথায় কান দেয়নি, কারণ তাদের মনে হয়েছিল কাশ্মীরে পাথর ছোড়া দেখালেই ভারতকে পৃথিবীর সামনে স্বৈরতান্ত্রিক, অগণতান্ত্রিক বলে প্রচার করা সম্ভব হবে। ঘটনাক্রম যে হেগ পর্যন্ত দৌড়বে তা সম্ভবত পাকিস্তানও ভাবেনি।
পরিস্থিতি পাল্টে গেল ভারত আন্তর্জাতিক আদালতের দরজায় কড়া নাড়ায়। এবং কড়া নাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আদালতের দরজা এমনভাবে হাট করে খুলে যাবে সে কথা পাক সেনাপ্রধানের দুঃস্বপ্নেও আসেনি। অতঃপর যা ঘটল, তা ভারতের অবস্থানকে দৃঢ় করল যেমন, তেমন সারা বিশ্বের কাছে এ বার্তাও পৌঁছাল, পাকিস্তান এখনও পাকিস্তানেই আছে। আন্তর্জাতিক আদালত যা জানিয়েছে তা কার্যকর করতে হলে পাকিস্তান ভিয়েনা কনভেনশন বিরোধী কাজ করেছে বলে ভারতের অভিযোগ যতদিন না অপ্রমাণ হয় ততদিন ফাঁসির আদেশ বলবৎ হবে না। পূর্বেই পাকিস্তান জানিয়েছিল, ফাঁসির আদেশ আগস্ট মাস পর্যন্ত কার্যকর হবে না। অর্থাৎ তারপর যে কোনও সময়ে ফাঁসির আদেশ কার্যকর করে ফেলতে পারত পাকিস্তান। এখন আর তা করার উপায় থাকল না।
ইতিহাসের এক অদ্ভূত সমাপতন। ১৯৯০ সালে কাশ্মীরের অশান্তিকে হাতিয়ার করে নওয়াজ শরিফ প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তারপর সেনার হস্তক্ষেপেই তাঁর চাকরি গিয়েছিল। এবারও কাশ্মীরে অশান্তি, এবারেও প্রধানমন্ত্রী সেই নওয়াজ। ভারতের কাছে এভাবে পরাভব স্বীকার করে নেওয়ার পর তাঁর সাধের চাকরিটি আবার না যায়।
Check Also
চোরেদের মন্ত্রীসভা… কেন বলেছিলেন বাঙালিয়ানার প্রতীক
ডঃ অরিন্দম বিশ্বাস : আজ বাংলার এবং বাঙালির রাজনীতির এক মহিরুহ চলে গেলেন। শ্রী বুদ্ধদেব …
আদবানি-সখ্যে সংকোচহীন ছিলেন বুদ্ধ
জয়ন্ত ঘোষাল : লালকৃষ্ণ আদবানির বাড়িতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মধ্যাহ্ন ভোজে আসবেন। বাঙালি অতিথির আপ্যায়নে আদবানি-জায়া …
নির্মলার কোনও অর্থনৈতিক চিন্তা-ভাবনা নেই
সুমন ভট্টাচার্য এবারের বাজেটটা না গরিবের না মধ্যবিত্তের না ব্যবসায়ীদের কাউকে খুশি করতে পারলো। দেখে …