পার্থসারথি পাণ্ডা
স্ক্রিন প্লে লিখতে গিয়ে বারকুড়ি কলম তুলে রেখেছিলেন জর্ডন পেলে। বার বার তাঁর মনে হচ্ছিল লেখাটা কিছুতেই দাঁড়াবে না। যা লিখতে চান, কিছুতেই মাথা থেকে বেরুচ্ছিল না। তারপর একুশ বারের চেষ্টায় বেরুল, ‘গেট আউট’। ছবি হল। এবং সেই ছবি ইতিহাস তৈরি করে ফেলল। অস্কারের প্রতিযোগিতা থেকে ‘বেস্ট অরিজিন্যাল স্ক্রিন প্লে’র পুরস্কার আদায় করে নিল। উনচল্লিশ বছর বয়সী জর্ডনই প্রথম অ্যাফ্রো-আমেরিকান ব্ল্যাক, যিনি এই ক্যাটেগরিতে পুরস্কার পেলেন।
হলিউডের ডলবি থিয়েটারে ঝড় তুললেন আর একজন। ‘থ্রি বিলবোর্ড আউটসাইড এবিং, মিসৌরি’-র অভিনেত্রী ফ্রান্সিস ম্যাকডোরমান্ড। এই ছবির জন্য তিনি পেলেন ‘বেস্ট অ্যাকট্রেসের’ পুরস্কার। ছবিতে তো ঝড় তুলেই ছিলেন, পুরস্কার নিতে এসেও ঝড় তুললেন। বললেন হলিউডের ছবির জগতের বর্ণবৈষম্যের কথা। দাবি জানালেন, শ্বেতাঙ্গদের পাশাপাশি সমান সংখ্যক ব্ল্যাক যেন প্রতিটি ছবিতে কাজ পান। এই দাবির কথা জানাতে গিয়ে ‘ইনক্লুশন রাইডার’-এর কথা বললেন। সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত অভিনেত্রী ও অভিনেতারা উঠে দাঁড়িয়ে কুর্নিশ জানালেন ফ্রান্সিসকে। তাঁদের হাততালিতে মুখরিত হল গোটা স্টেডিয়াম। ওয়েবস্টার-মেরিয়ম ডিকশনারির তরফে জানানো হয়েছে, রোববার মানুষ অনলাইনে সবচেয়ে বেশিবার সার্চ করেছেন এই শব্দবন্ধটির মানে খুঁজতেই। এ-থেকে বোঝাই যায়, ফ্রান্সিসের এই আবেদন কতটা সাড়া ফেলেছে ছবির জগত ছাড়িয়ে সাধারনের মাঝে। ‘ইনক্লুশন রাইডার’ হল, হলিউডের লিডিং অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কনট্রাক্ট পেপারের সেই ক্লজ, যাতে তাঁরা দাবি জানাতে পারেন, প্রযোজক বা প্রযোজক সংস্থাকে বাধ্য করতে পারেন ছবিটিতে হোয়াইটদের সমসংখ্যক ব্ল্যাক ক্রু এবং কাস্ট নিতে।
শেরা ছবির শিরোপা এবার আদায় করে নিয়েছে গিলারমো দেল তোরো’র ‘দ্য শেপ অব ওয়াটার’ ছবিটি। সেই সঙ্গে পেয়েছে বেস্ট ডিরেক্টরের পুরস্কার, বেস্ট অরিজিন্যাল সাউন্ড স্কোর আর প্রোডাকশন ডিজাইনিঙয়ের জন্য পুরস্কার। ফ্যান্টাসি-রোমান্স ধারার এই ছবিতে একটি বোবা মেয়ের চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন স্যালি হকিন্স। পরিচালক তোরো ফ্যান্টাসি ছবি বানাতেই বেশি ভালোবাসেন। তাতে থাকে পোয়েটিক ন্যারেশন। এই ছবিতেও রয়েছে। এটি একটি মৎস্য-মানুষের সঙ্গে স্যালির প্রেমের গল্প। ছবিতে নীরবতার ভাষা দুজনেরই মুখে, অভিব্যক্তিতে। নিঃসঙ্গতার মাঝে সঙ্গ, ভালোবাসা আর নির্ভরতার গল্প ‘দ্য শেপ অব ওয়াটার’।
জেমস আইভরি অস্কারের চেয়ে এক বছরের ছোট। অস্কার দেওয়া শুরু হয় ১৯২৭ থেকে। আর আইভরি জন্মেছিলেন ১৯২৮-এ। তিনি হলেন একাধারে আমেরিকান পরিচালক, প্রযোজক এবং চিত্রনাট্যকার। ভারতের ইসমাইল মার্চেন্ট-এর সঙ্গে যৌথ ভাবে অনেক ছবি প্রযোজনা করেছেন অনেক বছর ধরে। পরিচালনা করেছেন, ‘সেক্সপিয়ারওয়ালা’, ‘দ্য হাউসহোল্ডার’, ‘দ্য বোম্বে টকি’-র মতো বহু বিখ্যাত ছবি। এবার তিনিই পেলেন ‘কল মি বাই ইয়োর নেম’ ছবির জন্য ‘বেস্ট অ্যাডাপটেড স্ক্রিপ্ট’ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার। তিনিই এ ছবির প্রযোজক।
বেস্ট অ্যানিমেশন ছবির জন্য এবছর পুরস্কার পেল ‘কোকো’ ছবিটি। সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে, ‘ডেডস ল্যাণ্ডে’ ম্যাজিক ও অ্যাডভেঞ্চারের মধ্য দিয়ে নিজের পরিবারের ইতিহাস খুঁজে পাওয়ার গল্প ‘কোকো’। পরিচালক লি ক্রিক নিজেই এছবির গল্প লিখেছেন, এডিটিং করেছেন। সঙ্গীতমুখর এই ছবির ‘রিমেম্বার মি’ গানটি পেয়েছে ‘বেস্ট অরিজিন্যাল সং’-এর পুরস্কার।
‘ডারকেস্ট আওয়ার’ ছবির জন্য বেস্ট অ্যাক্টরের পুরস্কার পেয়েছেন গ্যারি ওল্ডম্যান। এছাড়া ‘ব্লেড রানার ২০৪৯’ ছবির জন্য বেস্ট সিনেমাটোগ্রাফিতে রজার ডিকিন্স, বেস্ট লাইভ অ্যাকশন ছবি হিসেবে ‘দ্য সাইলেন্ট চাইল্ড’, বেস্ট ডকুমেন্টারি শর্ট সাবজেক্ট ক্যাটাগরিতে ‘হেভেন ইজ আ ট্রাফিক জ্যাম অন দ্য ৪০৫’ ছবিটি পুরস্কার পেয়েছে। বেস্ট ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে চিলির ‘আ ফ্যান্টাস্টিক উওম্যান’ ছবিটি। এটি একজন ট্রান্সজেন্ডার গায়িকার জীবনের উত্থানপতন ও নিঃসঙ্গতার গল্প।
পুরস্কারের নমিনেশনের তালিকায় এক ঝাঁক নারীর নাম থাকলেও, এবারের অস্কারে প্রাপ্তির পাল্লা পুরুষের দিকেই ভারি। তবে, এবার ডলবি স্টেডিয়ামের সামনের আসন ছিল মেয়েদেরই দখলে। মঞ্চে কিম্বা রেড কার্পেটে নজর কেড়েছেন একমাত্র তাঁরাই। শুধুমাত্র তাঁদের প্রতিবাদ আর জৌলুশের মিশেল এবারের অস্কারে আনল অন্য স্বর, অন্য মাত্রা।