ডম্বরুপাণি উপাধ্যায়:
তাঁকে যাঁরা ভালোবাসেন তাঁরা চিন্তিত। এতটাই চিন্তা যে পরিচিত সাংবাদিকদের ফোন করে জিজ্ঞাসা করছেন তাঁর খবর। তাঁর খবর মানে দল থেকে তিনি কোনও স্বীকৃতি পাচ্ছেন কি পাচ্ছেন না, সেই খবর।
‘দাদা কি কোনও পজিসন পাচ্ছে? আপনার কাছে কোনও খবর আছে?’ মালদা, হুগলি, পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ কিংবা কুচবিহার, আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিং থেকে যখন এমন ফোনকল পাচ্ছেন মুকুল রায় ঘনিষ্ঠ নেতা বা মুকুল রায়ের খবর রাখেন এমন কোনও সাংবাদিক, মুকুল তখন দলে কোনও পজিসনের কথা ভাবার চেয়ে বরং মাঠ জুড়ে খেলাকেই শ্রেয় মনে করেছেন। ঘুরে বেড়াচ্ছেন ঝাড়খণ্ডের পথে, নির্বাচনী প্রচারে। ঝাড়খণ্ডের বাঙালি মহল্লায় হাত মাইক নিয়ে বাংলায় বক্তৃতা করছেন মুকুল রায়। বলছেন, কথা রেখেছে মোদি সরকার। ইস্তেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন করছে মোদি-অমিত জুটি। আরও যা করার আছে, তা’ও করবে। ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানাচ্ছে সমবেত মানুষ। এরই মধ্যে কর্ণাটকের উপনির্বাচনের ফল দেখে আপ্লুত হয়ে চেনা সাংবাদিকের ফোন পেয়ে তাঁকে বলছেন, ‘কর্ণাটকের খবরটা ভাল করে লিখুন ভাই! এই খবর ঝাড়খণ্ডের ভোটে ভাল প্রভাব ফেলবে।’
টাইপের সামান্য গণ্ডগোলে আগাম জামিনের আবেদন পত্রটি নাকচ হয়েছে। আদালত বলেছে, আবার করে আবেদন করতে। খবর রটে গেছে, মুকুলের আগাম জামিনের আবেদন খারিজ! মুকুল তখন করমর্দন আর আলিঙ্গনে ব্যস্ত ঝাড়খণ্ডের পথে পথে।
তাঁর বিরুদ্ধে এত মামলা! সামলান কি করে? এত টেনসন নিয়ে কাজ করা যায়!
বিজেপির একজন ডাকসাইটে নেত্রী, যিনি একসময় মমতাকেও চিনতেন খুব কাছ থেকে, তাঁর ব্যখ্যা, মনে রাখবেন, এটাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাল। তাঁর কৌশল। মুকুলের মাথাটা ব্যস্ত রাখার কৌশল। তাঁর কাজের কুশলতা কমিয়ে আনার কৌশল।
কুশলতা কমছে নাকি? মমতার ওষুধে কাজ হচ্ছে? তাই কি উপনির্বাচনে ৩-০ জেতার কথা বলেছিলেন, যা কিনা বুমেরাং হয়ে গেল!
আপনার কি বুঝতে ভুল হয়েছিল?
খড়গপুর নিয়ে চুপ থাকলেও বাকি দুটি কেন্দ্র নিয়ে মুকুলের বক্তব্য,
ভেবেছিলাম কংগ্রেস আর বামেরা ওদের ভোট ধরে রাখতে পারবে। তা হয়নি। টিএমসির দিকে চলে গেছে। ঘনিষ্ঠ মহলে অবলীলায়, অমায়িক স্বীকারোক্তি মুকুলের।
তাহলে পজিসন?
স্বীকৃতি?
লক্ষ্য একটাই। পশ্চিমবঙ্গে মমতা জমানার অবসান, পদ্মফুলের প্রতিষ্ঠান।
বলেই পরের বাঙালি মহল্লার দিকে যাবার জন্যে স্টার্ট দিল গাড়ি। যাবার আগে অস্ফুটে বললেন, আম হবে কি হবে না এই ভাবনা থাকলে মুকুলের তো আর সুগন্ধ ঢালা হয় না! ততক্ষণে ফার্স্ট গিয়ারে গাড়ি। এগিয়ে গেলেন মুকুল।
পিছনে ধুলোয় ঢাকা পড়ে কত কেউ পড়ে রইল কে জানে!