দেবক বন্দ্যোপাধ্যায়
জয় ঘোষ
কলকাতা: দিল্লির লাড্ডু মুকুল রায় অনেকদিন ধরে খাচ্ছেন। বলা ভাল, খাচ্ছেন, হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখছেন, আবার আঘ্রান নিয়ে রেখেও দিচ্ছেন। সেই কবেকার কথা… টুটু বসু আর তিনি, রাজ্যসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের দুই প্রতিনিধি। রাজনীতিতে অভিজ্ঞতার ভার বড় ভার। টলিউড-সোপ অপেরার কুশীলবদের দিল্লি উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে, বঙ্গভবনে রেখে তারপর দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গে দলের সদর কার্যালয়ে তাঁদের হাতে পতাকা তুলে দিয়ে যোগদান করিয়ে মুকুল বোঝালেন তিনি মুকুল রায়।
তৃণমূল কংগ্রেসে অনেক হোমরাচোমরাদের পিছনে ফেলে, ও তো জেলা থেকে এসেছে, এই ধরনের শ্লেষ ফুৎকারে উড়িয়ে, কেবল মগজাস্ত্রের জোরে মমতার ঠিক পরের স্থানটিতে তিনি আসীন হয়েছিলেন। কিছুদিন আগেই রাজ্য বিজেপি ঘোষণা করেছিল, আর কোনও যোগদান দিল্লি থেকে হবে না। কলকাতাতেই করতে হবে। নামী দামী হলে সদর দফতরে অন্যথায় জেলা বা মণ্ডল স্তরে। হালিশহর বা কাঁচড়াপাড়ার কাউন্সিলরদের বিজেপিতে যোগ দিয়েও তৃণমূল ফিরে যাবার ঘটনাকে মুকুলের দায় বলে দেখতে ও দেখাতে চেয়েছিলেন হালে দিল্লির লাড্ডু হাতে নেওয়া কোনও কোনও নেতা।
রাজনীতি না করলে মুকুল সম্ভবত ক্রিকেটার হতেন। তাঁকে যাঁরা ছোটবেলা থেকে দেখেছে, তাঁরা এমনটাই বলেন। ক্রিকেট মাঠে মুকুল ছিলেন ব্যাটসম্যান। স্থিতপ্রজ্ঞতা, ধৈর্যশীলতা… এসবই সার্থক ব্যাটসম্যানের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। রাজনীতির ময়দানেও মুকুল স্থির, নির্লিপ্ত। এক ওভারে রান না এলে পরের ওভারে আসবে, একথা তিনি জানেন। এ হেন ক্রিকেটিয় টেম্পারামেন্টেই তিনি ব্যাট হাতে এগিয়ে গেছেন পরের ওভারে। আগের ওভারে হয়তো টাইমিংয়ের ভুল হয়েছে। এই ওভারে একেবারে কপিবুক। ২১ জুলাইয়ের আগে মমতার সাধের টলিউডে ভাগ বসিয়েছেন তিনি। আবার একই সঙ্গে ঘরের মাঠে শ্লেজিং করে যারা তাঁর মনঃসংযোগ নষ্ট করার চেষ্টা করছিল তাদেরও নির্বাক বার্তা দিলেন মুকুল। কোনও কথা না বলে, এদিন তিনি বুঝিয়ে দিলেন যোগদান নিয়ে যাঁরা জটিলতা তৈরি করছেন, তাঁরাই আখেরে দলের ক্ষতি করছেন।
রাজ্য বিজেপির অন্দরমহলের খবর, দিল্লিতে যোগদান নয়: এমন মতের প্রবক্তা দু’জন, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়। এদিন দিলীপ ঘোষকে জিজ্ঞাসা করা হয়, রাজ্য বিজেপির ঘোষণার পরেও কেন সেই দিল্লিতেই যোগদান পর্ব হল? দিল্লিতে যোগদান নিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের দিল্লিতে যোগদান পর্ব করার মন্তব্যের অপব্যাখ্যা করা হয়েছে।” দিল্লিতে যোগদান নিয়ে টানাপোড়েনের ইতি টেনে দিলীপের আরও বক্তব্য, “দিল্লিতে বিজেপির যোগদানে কোনও বিধিনিষেধ নেই।” দিলীপ ঘোষ মিডিয়ার ঘাড়ে অপব্যাখ্যার দায় চাপান কিংবা নিজেদের কথার ঢোঁক নিজেই গিলুন, তিনি কিন্তু এদিন নিজেই দিল্লির মাটিতে দাঁড়িয়ে উত্তরীয় পরিয়ে বরণ করে নিলেন টালিগঞ্জের শিল্পী ও কলাকুশলীদের।
এবং মুকুল আরও একবার বোঝালেন, পদ্ম বাগানে তিনিই কোচ।