Breaking News
Home / TRENDING / মোদির অপছন্দের ‘পরিবারবাদই’ তাঁর গলায় লাগাম পরাল

মোদির অপছন্দের ‘পরিবারবাদই’ তাঁর গলায় লাগাম পরাল

দেবক বন্দ্যোপাধ্যায় ও রমেশ প্রসাদ-

নিউজ ডেস্ক :

চব্বিশের লোকসভা নির্বাচন অনেক কিছু দেখালো। আমরা দেখলাম স্বঘোষিত দেবদুত মোদিকে কেমন আদিখ্যেতা করতে হচ্ছে নীতিশ কুমার আর চন্দ্রবাবু নাইডুর সঙ্গে! জোট সরকার চালাবার বাধ্যবাধকতায় এই রকম আরও কত আদিখ্যেতা তাঁকে করতে হবে কে জানে! আরও কত কাষ্ঠহাসি তাঁকে কষ্ট করে হাসতে হবে দেবা না জানন্তি! রাহুলের মহব্বতের দোকান যে তাঁকে এমন গেরোয় ফেলবে, সে কথা সম্ভবত দুঃস্বপ্নেও ভাবেন নি মোদি! এর চেয়ে পুরোপুরি হেরে যাওয়া ভালো ছিল। ইন্ডিয়া জোট সরকার করত আর প্রধানমন্ত্রীর আসন নিয়ে ওদের দড়ি টানাটানি মোদি দেখতেন! বেশ মজা হতো! তার বদলে মোদি পেলেন এমন এক ‘ভাগের মা’ সরকার, যে সরকারে নীতিশ কুমারের সামনে দাঁত বার করে সরকার চালাতে হবে মোদিকে। নীতিশকে যাঁরা জানেন, তাঁরা বেশ বুঝতে পারছেন, এর চেয়ে বড় শাস্তি আর হয় না!

চব্বিশের নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর মানুষ এক অন্য মোদিকে দেখলেন। যে মোদির মুখে কথায় কথায় নিজের নাম নেই! মোদি গ্যারান্টি নেই। তাঁর আত্মবিশ্বাস যা অনেকটা অহংকারের মতো দেখতে, তাও নেই। এমনকি মুখে রাম নাম নেই! নিন্দুকেরা বলছে অযোধ্যায় হেরে, গোটা উত্তর প্রদেশে উল্লেখযোগ্য ভাবে খারাপ ফল করে, মোদির এখন রামের ওপর ভরসা উঠেছে। উড়িষ্যার ফল ভালো হয়েছে বলে তাঁর মুখে এখন জয় জগন্নাথ!

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সম্ভবত এটাই তাঁর শেষ টার্ম। শেষ টার্মে এসে মোদি এইটুকু বুঝতে পারছেন, সারা দেশে এক পুলিশি ব্যবস্থা, এক ভোট, এক ভাষা… এইসব একপেশে কাজ আর করা যাবে না। পুরো ভারতের ওপর বাধ্যতামূলক হিন্দি চাপানোতে তাঁকে সায় দেবেন না নায়ডু। আর নীতিশ যদি সম্মতি দেন, তাহলে বুঝতে হবে ওঁর নিশ্চয়ই কোনও অভিসন্ধি আছে। কংগ্রেস কে শূণ্য করা হলো না বরং কংগ্রেস একাই একশোর কাছে উঠে এল এই নির্বাচনে।

২০২৪ আরও দেখাল যে পরিবার তন্ত্র কে ভিলেন বানিয়ে আর কোনও লাভ হবে না। ভারতবর্ষের যে নতুন প্রজন্ম মোদির গলায় লাগাম পরাল তাঁরা চারজনেই রাজনৈতিক পরিবার থেকে উঠে আসা দেশে আধুনিক রাজনীতির রুপকার। রাহুল, অখিলেশ, তেজস্বী, অভিষেক। এবং অবশ্যই প্রিয়াঙ্কা।

এঁদের মধ্যে বঙ্গ তনয় অভিষেক এখনও পর্যন্ত কিছুটা হলেও মমতার আলোর আড়ালে রয়েছেন। তবে আড়াল থেকেই তিনি তাঁর চিন্তায়, তাঁর মতামতে এবং লক্ষে স্থির। অভিজ্ঞ মমতা নতুনত্বের অভিষেক কে কখনও ছাড়ছেন কখনও অভিভাবকের মতোই ধরে থাকছেন। আর এইসবের মধ্যে দিয়ে অভিষেক নিজেকে জাতীয় স্তরের রাজনীতিতে উন্নীত করে ফেলেছেন। তিনি ও তাঁর আই প্যাক (এখন অবশ্যই আইপ্যাক উইদাউট পিকে) একুশে বিজেপির ন্যারেটিভের পাল্টা ন্যারেটিভে অমিত শাহদের দশ গোল দিয়েছিলেন। আর চব্বিশে বিজেপিকে ন্যারেটিভ তৈরি করতেই দেননি। শুভেন্দুর মতো যাঁরা অবিরত অভিষেক কে ব্যক্তি আক্রমণ করে গেছেন, চব্বিশের ফলাফলের পর তাঁদের হুঙ্কার হাহাকারের মতো শোনাচ্ছে। দলের বৃদ্ধতন্ত্রের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থানে তিনি অনড় থেকেছেন। মনে রাখতে হবে, এবারের ভোটে তিনি সুদীপ, সৌগত, কল্যাণ কারও হয়ে প্রচারে যাননি। আর ইন্ডিয়াকে ২৯ টি সাংসদ দেওয়ার পিছনে তাঁর পিসির ভূমিকা যেমন আছে, তাঁর ভূমিকাও কিছু কম নেই। তাঁর প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে যাঁরা দল ছেড়ে ঘুরপথে কাঙ্খিত লক্ষে পৌঁছতে চেয়েছিলেন, তাঁরা যতদিন যাচ্ছে ততো হাস্যকর হয়ে উঠছেন! দলীয় রাজনীতির উর্ধে গিয়ে দেখলে, ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়ার ওপরে উঠে দেখলে, মমতার পর পশ্চিমবঙ্গ থেকে আর একটি মুখ জাতীয় রাজনীতিতে মাথা তুলছে। চব্বিশের ভোটের ফলাফল, বাঙালির এই উত্থানটিও দেখাল।

Spread the love

Check Also

চোরেদের মন্ত্রীসভা… কেন বলেছিলেন বাঙালিয়ানার প্রতীক

ডঃ অরিন্দম বিশ্বাস : আজ বাংলার এবং বাঙালির রাজনীতির এক মহিরুহ চলে গেলেন। শ্রী বুদ্ধদেব …

আদবানি-সখ্যে সংকোচহীন ছিলেন বুদ্ধ

জয়ন্ত ঘোষাল : লালকৃষ্ণ আদবানির বাড়িতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মধ্যাহ্ন ভোজে আসবেন। বাঙালি অতিথির আপ্যায়নে আদবানি-জায়া …

নির্মলার কোনও অর্থনৈতিক চিন্তা-ভাবনা নেই

সুমন ভট্টাচার্য এবারের বাজেটটা না গরিবের না মধ্যবিত্তের না ব্যবসায়ীদের কাউকে খুশি করতে পারলো। দেখে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *