দেবক বন্দ্যোপাধ্যায় :
‘শত্তুরের মুখে ছাই দিয়ে’ মুকুল রায় গেলেন বিজেপিতে!
নয়াদিল্লিতে তাঁর বিজেপি গমনের দিনেই সুদূর পশ্চিমবঙ্গে অতি নিরবে ঘটে গেল দুটি ঘটনা। নিরবে, সন্তর্পনে, অতি সাধারণ ও সামান্য ঘটনার মত ঘটে যাওয়া দুটি ঘটনা। নিবিড় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণে, নিরবে ঘটে যাওয়া দুটি ঘটনাই গভীর তাৎপর্য বহন করছে।
রাজনীতির খবর যেমন জল্পনা ছাড়া হয়না আবার শুধুমাত্র জল্পনাও রাজনীতির খবর নয়। অভিজ্ঞ সাংবাদিকরা এমনটাই বলে থাকেন। বিষয়টি অবতারণা করার আগে একটি কথা বলে রাখা প্রয়োজন যে যেকোনও রাজনৈতিক খবর আর পাঁচটা খবরের মতই সময়ের দলিল, ভবিষ্যদ্বাণী নয়। সাংবাদিকতা আর যাই হোক জ্যোতিষ নয়।
এবার মূল বিষয়ে আসা যাক।
মুকুল রায় বিজেপিতে যোগ দিলেন, আপনার প্রতিক্রিয়া কি?
প্রশ্নটি করা হয়েছিল মদন মিত্রকে।
চটজলদি উত্তর, “আমি কিছু বলব না।”
এবার সাংবাদিকসুলভ জোরাজুরি, অফ দ্য রেকর্ড তো কিছু বলা যায় নাকি!
এবার শব্দ খরচ করলেন মদন। বললেন, “অফ দ্য রেকর্ড নয় আমি অন রেকর্ড বলছি, আমি জলের মুখপাত্র নই।” একবার নয় এক নিশ্বাসে দু’বার কথাটি উচ্চারণ করলেন মদন যে তিনি দলের মুখপাত্র নন।
তাঁর এই উচ্চারণ কি শুধুই দলে তাঁর সাম্প্রতিক অবস্থানের বাস্তব বিবৃতি নাকি অভিমান, ক্ষোভ আর চাপা ক্রোধের সুচারু রাজনৈতিক বহিঃপ্রকাশ!
এক সময় মিটিং-মিছিল মানেই লোক আনবেন মদন, যা কিছু ঝামেলার কাজ, গায়ে কাদা লাগতে পারে, করবেন মদন (অবশ্য আরও কেউ কেউ করতেন), মিডিয়া সামলাবেন, মদন, রাত ৩টে কোনও দলের কর্মী বা তাঁর আত্মীয়কে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে, করবেন কে? সেই মদন। সিঙ্গুরে একঘর মিডিয়ার সামনে দুটি লোক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অপদস্থ করতে চাইছে। পত্রপাঠ লোক দুটিকে বিদায় করতে হবে! চমকে তাঁদের এলাকা ছাড়া করবেন কে? কে আবার! সেই মদন।
দলের খারাপ সময়ের সঙ্গীদের মাথা তুলে দল করার এখন জো নেই দলে!
তাই মদন একুশে জুলাইের মিটিং শোনেন রাস্তায় বসে। সল্টলেক স্টেডিয়ামের খেলা দেখেন ফুটপাথে বসে জায়ান্ট স্ক্রীনে।
দলে এখন পুরনোকে ভুলে যাওয়ার উৎসব চলছে!
পুরনো হিন্দি সিনেমায় যেমন হত , একটি স্মাগলিং গ্যাং ছেড়ে বেরিয়ে কেউ অন্য গ্যাং-এ ঢুকলে বা সৎ জীবনে ফেরার চেষ্টা করলে তার পিছনে বোমা-পিস্তল নিয়ে লেগে পড়ত ছেড়ে আসা দলের সতীর্থরা, প্রায় সেরকম ভাবে মুকুলের পিছনে পুলিশ, সিআইডি, খিস্তিবাজ নব্য তৃণমূলীদের লাগিয়ে দিয়েছে দল। কলতলার ঝগড়ার ঢঙ-এ, ‘গেছে, বাঁচা গেছে’ বলানো হচ্ছে দলের মহাসচিবকে দিয়ে।
এদিন আরও একটি ঘটনা ঘটেছে হুগলির কোন্নগরে। জেটি পরিদর্শন করতে এসেছিলেন পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী।
সাংবাদিকরা তাঁকে বলেন, দাদা, মুকুল রায় বিজেপিতে গিয়ে কি তৃণমূলের ক্ষতি হল, এই প্রশ্নটা আপনাকে করব। ক্যামেরা চালু করার আগেই শুভেন্দু তাঁদের জানিয়ে দেন, মুকুল নিয়ে কোনও প্রশ্ন যেন তাঁকে করা না হয়।
কিন্তু কেন? মুকুল বিজেপিতে গিয়ে দলের কোনও ক্ষতি হয়নি বরং লাভ হয়েছে– এমন একটা উত্তর তো দিতেই পারতেন শুভেন্দু। কেন এড়িয়ে গেলেন! কেন নিরব রইলেন মুকুল বিষয়ে!
কার্যত একার নেতৃত্বে নন্দিগ্রাম দিয়েছেন তৃণমূলকে। মমতা সহ কলকাতার নেতৃত্ব সেখানে অনেক পরে গেছেন। কেন্দ্রে মন্ত্রীত্ব পাননি। যুব সভাপতির পদ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। দলে তাঁর অবদানের তুলনায় কম গুরুত্বের মন্ত্রক পেয়েছেন রাজ্য মন্ত্রীসভায়। তাঁর নিরবতার তাৎপর্য, লোভনীয় প্রশ্ন, যে প্রশ্নের উত্তরে শীর্ষ নেতৃত্বকে খুশী করার সুযোগ আছে, সেই প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার তাৎপর্য গভীর, গভীরতর।
রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রিয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে এখন যে গানটি নিভৃতে অনুরণিত হচ্ছে, তা হল: যে পথ দিয়ে চলে এলি সে পথ এখন ভুলে গেলি রে…
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুনতে পাচ্ছেন তো!
বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
https://www.youtube.com/channelhindustan
https://www.facebook.com/channelhindustan