দেবক বন্দ্যোপাধ্যায় :
কয়েক বছর আগে তিনি ছিলেন একুশে জুলাই সমাবেশের মূল কর্মকর্তা। ঝামেলা – ঝক্কি থাকত সব তাঁর কাঁধেই। দুই দিকে তাঁর দুই সহযোগী প্রশান্ত আর রঞ্জিতের তখন নিশ্বাস ফেলার সময় থাকত না। মাত্র কয়েকবছর আগে পর্যন্ত মদন মিত্রর জীবনে জুলাই মাস এভাবেই কাটত। গত বছর একুশে জুলাইতে মদন মিত্র আসতে পারেননি। তিনি তখন সারদা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে বন্দি। সেবার একমাত্র কবীর সুমন সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন তিনি মদন মিত্রকে মিস্ করছেন। এই বছর, দুহাজার সতেরোর একুশে জুলাইতে যোগ দিতে পেরেছেন মদন। তবে মঞ্চ অবধি যাওয়া হয়নি তাঁর। মিছিল করে এসে কে. সি দাশের সামনেই থেমে যেতে হয়েছে। ভিড়ের জন্যে আর এগোতে পারেননি। কেন তিনি মঞ্চের পিছনের বিশেষ করিডর দিয়ে সভায় ঢুকতে পারলেন না? জবাব এড়াচ্ছেন মদন। বলছেন, আমি এখন বিধায়ক নই, দলেরও কোনও পদে নেই, আমি কী করে মঞ্চে যাব!
তবে জানাতে ভুলছেন না যে কয়েকজন নেতা তাঁকে মঞ্চে যেতে বলেছিলেন, তিনি যাননি। কারণ? বলছেন যে তিনি তখন এতটাই ঘর্মাক্ত ও সারাদিনের পর বিদ্ধস্ত তখন আর মঞে ওঠা সমীচীন মনে করেননি তিনি। মদন মিত্র জানিয়েছেন, দলনেত্রী তাঁকে ফোন করেছিলেন। তিনি মঞ্চে যাননি বলে মমতা তাঁকে বকাবকি করছেন বলেও জানিয়েছেন মদন। কেমন লাগল রাস্তায়? বলছেন, দারুন লেগেছে আমার। যেদিন গুলি চলেছিল সেদিনও রাস্তাতেই ছিলাম, আজও আছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একদিন এই সমাবেশ থেকে সিপিএম হটানোর ডাক দিয়েছিলেন। আজ তিনি দেশ থেকে বিজেপি হটানোর ডাক দিয়েছেন। সেই দিনে সমাবেশে থাকতে পেরে আমি গর্বিত।
কেন এসব বলছেন অভিজ্ঞ রাজনীতিক মদন মিত্র? দলনেত্রীর স্মৃতি উসকে দিতে চাইছেন কী? প্রশ্ন উঠছে তাঁরই ঘনিষ্ঠ মহলে। তৃণমূলে মমতা ছাড়া আর যে কয়েকজন নেতার নিজস্ব জনভিত্তি আছে তাঁদের মধ্যে মদন মিত্র একজন। মদন মিত্র সেই বিরল গোত্রের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যাঁর কোনও ভণিতা নেই। মদনকে যাঁরা কাছ থেকে জানেন, তাঁরা এই কথাগুলি বলেন এই ডাকাবুকো নেতা সম্পর্কে। তাঁরা এই কথাও বলছেন, যে রাজনৈতিক দল তাঁর নিজের দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে এত দ্রুত ভুলে যেতে পারে, সেই দল সত্যিই শহীদদের মনে রেখেছে কিনা সন্দেহ হয়।
তাঁরা বলছেন, যে মানুষটি যুব তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি তাঁর তো মঞ্চে বিশেষ জায়গা থাকার কথা।
মদন বলছেন, দলনেত্রী আমায় ফোন করেছিলেন। মঞ্চে যাইনি বলে রাগারাগি করেছেন।
তবে মঞ্চ হোক বা ধূসর রাস্তা মদন মিত্র কিন্তু স্বমহিমায় সদা হাস্যমুখ।
আরও পড়ুন :-