Breaking News
Home / TRENDING / কৌষিকী অমাবস্যার দিন তারাপীঠে তারা মায়ের পুজো এবং দ্বারকা নদীতে স্নান করলে কুম্ভস্নানের পুণ্য লাভ হয়

কৌষিকী অমাবস্যার দিন তারাপীঠে তারা মায়ের পুজো এবং দ্বারকা নদীতে স্নান করলে কুম্ভস্নানের পুণ্য লাভ হয়

 

নিজস্ব প্রতিনিধি :

আগামী সোমবার ৪ ভাদ্র ১৪২৪ (২১ আগস্ট, ২০১৭) কৌষিকী অমাবস্যা। বছরের অন্য সব অমাবস্যার থেকে একবারে ভিন্ন। তন্ত্র এবং শাস্ত্র মতে এই দিন অপ্রকাশ্য-নিভৃতে কঠিন সাধনা করলে তার ফল ভাল হয়। সাধকেরা জয় করেন কুণ্ডলিনী চক্র। হিন্দু এবং বৌদ্ধ তন্ত্র মতে কৌষিকী অমাবস্যার রাতকে বলা হয়— তারা রাত্রি। সাধক নিজের সাধনার ভিতর আত্মস্থ হন। গভীর রাতে এক বিশেষ মুহূর্তে কিছুক্ষণের জন্য খুলে যায় স্বর্গ-নরকের দরজা।
পৌরাণিক কালে শম্ভু-নিশম্ভু কঠোর সাধনা করে ব্রহ্মাকে তুষ্ট করেন। ব্রহ্মা বর দেন কোনও পুরুষ তাঁদের বধ করতে পারবে না। অ-যোনি জাত নয় এমন নারীর হাতেই ওঁদের মৃত্যু হবে। পৃথিবীতে এমন নারী কোথায়! ব্রহ্মার বরে বলীয়ান শম্ভু-নিশম্ভুর অত্যাচারে স্বর্গ-মর্ত-পাতালে সবাই অতিষ্ঠ। অত্যাচারিত সমস্ত দেবতাই আশ্রয় নিলেন কৈলাসে। সেইসময় মহাদেব সকলের সামনেই পার্বতীকে বললেন, “কালিকা তুমিই ওদের উদ্ধার করো।”
উপস্থিত দেবতাদের সামনে কালী সম্বোধন করাতে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হলেন পার্বতী। চলে গেলেন মানসসরোবরের ধারে। বসলেন গভীর তপস্যায়। কঠোর তপস্যা শেষ হতে স্নান করলেন সরোবরে। গায়ের রং বদলাতে শুরু করে দেবীর। গায়ের রং হল পূর্ণিমার জ্যোস্নার মতো সুন্দর! আর ওই কালো কোষ বা কায় থেকে সৃষ্টি হল এক দেবীর। সেই দেবী হলেন কৃষ্ণবর্ণা। ইনি-ই দেবী কৌষিকী। এই অমাবস্যার দিনেই দুই অসুর শম্ভু-নিশম্ভুকে বধ করলেন তিনি। তাই এই অমাবস্যার নাম কৌষিকী অমাবস্যা। আজকের দিনেই দশ মহাবিদ্যার অন্যতম দেবী তারা মর্তে আবির্ভূত হয়েছিলেন। দেবী তারাকে বৌদ্ধধর্মের বজ্রযানে বলা হয় নীল সরস্বতী।
আবার অন্যভাবেও জানা যায় মা তারার আবির্ভাব-কথা। কৌষিকী অমাবস্যায় দেবী তারার আবির্ভাব। দশমহাবিদ্যার দ্বিতীয় বিদ্যা হলেন দেবী তারা। নারদ পঞ্চরাত্র অনুযায়ী—- সতী নামে যিনি প্রজাপতি দক্ষরাজের গৃহে জন্মেছিলেন তিনি কৈবল্যদায়িনী। তাঁর নাম একজটা। সকল ভূতবর্গকে তিনি তারণ (উদ্ধারকর্ত্রী) করেন তাই তাঁর নাম তারা। তিনি বাক শক্তি প্রদান করেন তাই তাঁর আর এক নাম নীল সরস্বতী। অপর দিকে তিনি উগ্রমূর্তি বলে উগ্রতারিণীও বলা হয়। দেবী ঘোর বা উগ্র বিপদ থেকে উদ্ধার করেন বলে তাই তিনি উগ্রতারা।
সতী বিনা নিমন্ত্রণে পিতৃগৃহে যেতে চাইলে কৈলাসপতি তাঁকে বাধা দেন। তখন দেবী ধারণ করলেন দশমহাবিদ্যা রূপ। কালী রূপের পর দেবী তারার আবির্ভাব। দেবী নিজেই বলছেন—- শ্যামবর্ণা যে-দেবী ঊর্ধ্বে বিরাজিত তিনিই মহাবিদ্যা তারা। স্বতন্ত্র তন্ত্রে দেবীর পরিচয়— নিশিথে ঘোর বা উগ্র বিপদ থেকে তিনি উদ্ধার করেন বলেই তাঁর নাম উগ্রতারা। চোল নামে এক হ্রদে দেবী তারার আবির্ভাব। তন্ত্রসার মতে দেবীর মন্ত্রে চৈতন্য লাভ করলে মানুষ অল্পক্ষণের মধ্যেই মুক্তিলাভ করেন। দেবী তারা বাক শক্তির অধিকারিণী বলে মায়ের সাধকেরা সর্ব শাস্ত্রে পাণ্ডিত্য লাভ করেন। দেবী তারার ধ্যানমন্ত্র অনুযায়ী তিনি খর্বা, লম্বোদরী, ভীমা, বাঘের ছাল পরিহিতা। তাঁর অবস্থান জ্বলন্ত চিতার ভিতর। দেবী চতুর্ভূজা—- খড়্গ, কাটারি, খর্পর এবং পদ্ম ধারণ করে আছেন। জটাবদ্ধ কেশরাশি। দেবীর মাথায় সর্পরূপী মহাদেব। নানা আভরণে ভূষিতা। করুণা-মাখা নয়ন। দেবীর অধিষ্ঠান শ্বেতপদ্মে।
তারাপীঠে কৌষিকী অমাবস্যায় প্রচুর ধুমধাম হয়। সারাদিনই পুজোপাঠ চলে। তারা মায়ের বিশেষ পুজো হয়। মানুষের বিশ্বাস এই দিন ভাত খেতে নেই। শোনা যায়, এই কৌষিকী অমাবস্যায় তারাপীঠ মহাশ্মশানে শ্বেতশিমুল গাছের নীচে সাধক বামাখ্যাপা তাঁর সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। এইদিন তারা মায়ের পুজো করলে এবং দ্বারকা নদীতে স্নান করলে পুণ্যলাভ হয়। কুম্ভস্নানে যেমন পুণ্য অর্জন করা যায়, তেমনই কৌষিকী অমাবস্যায় তারাপীঠে দ্বারকা নদীতে স্নান করলে একই পুণ্যলাভ হয়।

Spread the love

Check Also

চোরেদের মন্ত্রীসভা… কেন বলেছিলেন বাঙালিয়ানার প্রতীক

ডঃ অরিন্দম বিশ্বাস : আজ বাংলার এবং বাঙালির রাজনীতির এক মহিরুহ চলে গেলেন। শ্রী বুদ্ধদেব …

আদবানি-সখ্যে সংকোচহীন ছিলেন বুদ্ধ

জয়ন্ত ঘোষাল : লালকৃষ্ণ আদবানির বাড়িতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মধ্যাহ্ন ভোজে আসবেন। বাঙালি অতিথির আপ্যায়নে আদবানি-জায়া …

নির্মলার কোনও অর্থনৈতিক চিন্তা-ভাবনা নেই

সুমন ভট্টাচার্য এবারের বাজেটটা না গরিবের না মধ্যবিত্তের না ব্যবসায়ীদের কাউকে খুশি করতে পারলো। দেখে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *