দেবক বন্দ্যোপাধ্যায়।
“ভরসা যেন না পায় কোনো
দাঙ্গামুখো হতচ্ছাড়া
সবাই মিলে বেঁচে থাকার
ভরসা তাদের করুক তাড়া।”
প্রশ্ন হল, সবাই মিলে বেঁচে থাকার যে ভরসা, সেই ভরসার তাড়া করার ধরনটা কি এইরকম হবে?
এমন নয় যে সুমনদা এই প্রথম সাংবাদিকদের খিস্তি করলেন। ১৯৯৪-৯৫ সালে তিনি বাংলার বিখ্যাত সংবাদপত্রের সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘অমুক কাগজের সাংবাদিকরা বিচ্ছিন্ন জায়গার ঔরস নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে।’
আজকের মত তিনি তখন প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ না, কবীর সুমন ও না। তিনি তখন সুমন চট্টোপাধ্যায়। জীবনের প্রথম ক্যাসেটের গানের কথায় যিনি লিখে দিতে পারেন, সুমন চাটুজ্যের একঘেঁয়ে সুর নয় সব্বার জন্য।
অমন কমলকুমারীয় খিস্তির পর সেই কাগজের সাংবাদিকদের সঙ্গে তাঁর সদ্ভাব কমেনি। পরের দিনের কাগজে একবিন্দু কোথাও লেখা হয়নি যে সুমন এমন অবমাননাকর কথা বলেছেন। সাংবাদিকরা তখনও জানতেন, কোন কথাটি ছাপার আর কোন টি ফেলে দেবার।
সাংবাদিকতার সংজ্ঞা এখন পাল্টেছে। টিভি সাংবাদিকতার প্রয়োজন ভিন্ন। এখন আবার এক প্রকার অতি-টিভি সাংবাদিকতা শুরু হয়েছে। এদের প্রয়োজন আরও ভিন্ন।
কেউ কেউ সুমনদার এই স্বভাব কে ‘অনিয়ন্ত্রিত আবেগ’ বলে থাকেন। তবে আবেগে নিয়ন্ত্রণের লাগাম পরালে সুমনদা আর সুমনদা থাকবেন বলে আমার অন্তত মনে হয় না।
সুমনদা কে যারা চেনে তারা বুঝতে পারছে, সাংবাদিকের ওপর নয়, চ্যানেলের নামটি শুনেই যে কথা বলে উঠেছে, সে সম্ভবত ওই, ওই অনিয়ন্ত্রিত আবেগ।
যুবা সাংবাদিক ও গায়ক বিট্টুর সঙ্গে হয়ত একদিন সুসম্পর্ক তৈরি হবে সুমনদার। এমন উদাহরণ সাংবাদিকতায় ভুরি ভুরি আছে। তিক্ততা দিয়ে শুরু করে, সম্পর্ক অন্তরঙ্গতার পথে এগিয়েছে, সাংবাদিক মহলে এমন বহু ঘটনা আছে।
রবীন্দ্রনাথের পর বাংলা গান কে সার্থক ভাবে নতুন ভাষা দেওয়া সুমনের এস্টিমেসন তাঁর খিস্তি দিয়ে হবে না নিশ্চয়। তাঁর খিস্তির এস্টিমেসনের জন্য স্থানীয় নেতা থেকে শুরু করে ফেসবুকের ট্রেন্ড বুঝে পোস্ট করা কবি পর্যন্ত আছেন।
বাস্তবিক, সুমন চাটুজ্যে সকলের জন্য নন। হবার কথাও নয়। এই ধরনের ঘটনায় যেটা হয় তা হল, সুমনের বৌদ্ধিক স্তর থেকে কয়েক কোটি আলোকবর্ষ দুরে থাকা চ্যাং-ব্যাংরাও মাথার ওপর উঠে নাচতে শুরু করে।
প্রশ্ন একটা রয়ে গেল। মুখ্যমন্ত্রীর সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের সঙ্গী। বঙ্গবিভূষণ পুরস্কারে ভূষিত শিল্পী। বাংলা গানের ইতিহাসে উজ্জ্বল একটা নাম। এ হেন ব্যক্তি খিস্তি করেছেন ও সেই খিস্তি রেকর্ড হয়েছে, (কেন রেকর্ড, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। না জানিয়ে রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুমন। রেকর্ডিং-এ শোনাও যাচ্ছে যে রেকর্ডের অনুমতি নেওয়া হয় নি। তবে শিল্পী নিজেই ব্রডকাস্ট করার অনুমতি দিয়েছেন, সম্ভবতঃ রেকর্ড করা হচ্ছে আন্দাজ করেই) তাই বলে তাঁকে মারার হুমকি দেওয়া যায় নাকি! আইনের পথে অবশ্যই যাওয়া যায়। তাই বলে হাতে মারার হুমকি!
বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আসা জরুরি বলে মনে করি। মস্তানেরা শিল্পীদের চমকে দেবে, এতো ভালো কথা নয়। এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক প্রবণতা বলেই আমার মনে হচ্ছে।