সুমন সেনগুপ্ত
ওরে গৃহবাসী/ খোল দ্বার খোল,লাগল যে দোল/ স্থলে জলে বনতলে লাগল যে দোল।। রবীন্দ্রনাথ তার সত্তর বছর বয়সে লিখলেন এই কবিতা। বসন্তকে কবি সারা জীবন ধরে প্রত্যক্ষ করেছেন,উপভোগ করেছেন। যৌবনে বসন্ত তাঁকে যে ভাবে দোলা দিত, সত্তরেও তাই। হৃদয়ের সুরের সঙ্গে প্রকৃতির সুর মিললেই বসন্তের সার্থকতা। যা মর্মে অনুভব করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ফাল্গুন–চৈত্র মাস রঙের মাস। একদিকে গাছের পাতা ঝরা শুরু। অন্যদিকে থোকা থোকা নরম নরম লাল–হলুদ ফুলের প্লাবন। অনেকটা সরল কিশোরীর মুখের মতো। যে কারণে রবীন্দ্রনাথ লিখলেন–বাহির হলেম ব্যাকুল হাওয়ার উতল পথের চিহ্ন ধরে/ওগো তুমি রঙের পাগল,ধরব তোমায় কেমন করে।
আর এইভাবে রবীন্দ্রনাথ আমাদের হৃদয়ে বসন্তের ছোঁয়া দিয়ে যান। রবীন্দ্রনাথ না থাকলে বসন্ত এভাবে বাঙালিকে নাড়া দিত না।
সময়টা 1907 ফেব্রুয়ারি,দশ বছরের বালক রবীন্দ্রনাথের কনিষ্ঠ পুত্র শমীন্দ্রনাথের উদ্যোগে শান্তিনিকেতনে প্রথম ঋতু উৎসবের সূচনা হয়। এই অনুষ্ঠানে বসন্ত সেজেছিলেন শমীন্দ্রনাথ। তিনি তাঁর পিতার লেখা যে গানটি গাইলেন–এ কী লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ,প্রাণেশ হে/আনন্দবসন্ত সমাগমে।।
এই উৎসবের মাত্র ন-মাস পরে শমীন্দ্রনাথের অকাল মৃত্যু ঘটে। কিন্তু যে উৎসবের সূচনা করেছিলেন তিনি তা বন্ধ হল না। একে একে শুরু হল ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে নতুন নতুন উৎসব–বর্ষামঙ্গল,শারদোৎসব,বসন্তোৎসব। প্রথমদিকে শান্তিনিকেতনে দোলের দিন চিরাচরিত রঙের খেলাই চলত। দোলের দিন পরস্পরকে রাঙিয়ে দেওয়ার এই প্রথাকে কবি বিশেষ ভাল ভাবে নেননি। সঠিক সময় বলা সম্ভব নয়। তবে 1910 থেকে1920 র মধ্যে শান্তিনিকেতনে বসন্তোৎসবের সূচনা ঘটে। আদি কুটিরের জহর বেদিতে রীতিমতো আলপনা দিয়ে নাচ ও গানে বসন্তকে স্বাগত জানান হতো। পরে তা স্থানান্তরিত হয় আম্রকুঞ্জে। সাধারণ ভাবে দোল বা হোলি রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলার অনুসঙ্গ হিসেবে দেখা হয়। রবীন্দ্রনাথ সেই প্রথাকে ভেঙে দোলকে উপস্থাপন করলেন,বসন্তকে স্বাগত জানাবার উৎসব রূপে। তিনি লিখলেন–আজি দখিনদুয়ার খোল/এসো হে,এসো হে আমার বসন্ত এসো।
বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
https://www.youtube.com/channelhindustan
https://www.facebook.com/channelhindustan