Breaking News
Home / TRENDING / দোল উৎসবের গল্পঃ নানা নামে, নানা রূপে, সারা দেশে

দোল উৎসবের গল্পঃ নানা নামে, নানা রূপে, সারা দেশে

পার্থসারথি পাণ্ডা

উত্তরভারতে যা ‘হোলি,’ আমাদের উৎকল-বঙ্গে তাকেই বলি ‘দোল’। সর্বত্রই আবির, ফাগ আর পিচকারিতে রঙ খেলা কিন্তু কমন। কিন্তু অতিপ্রাচীনকালে ভক্তির চেয়ে কৃষিজীবনের সঙ্গেই হোলি উৎসবের ভাব ছিল বেশি। পাঞ্জাবের হোলিতে এখনও সেই কৃষিযোগের পরিচয় যায়। এখানে এই উৎসব হয় কৃষি দেবতার পূজাকে কেন্দ্র করে। উৎসবের নাম ‘হোলা মোহাল্লা’। এতে দু’দিন ধরে হয় নাচ, গান, ঘোড়ায় চড়া, আবির ও পিচকারিতে রঙ খেলা। তারপর স্নান সেরে চলে মালপোয়া, লাড্ডু, গুজিয়ার ভুরিভোজ।

শুধু ভোজ নয়, মহারাষ্ট্রের হোলিতে বিশেষ গল্পও আছে। সেই গল্পের মধ্যে স্পষ্ট যে, হোলি একসময় আসলে ছিল নতুন বছর উদযাপনের উৎসব। কারণ, তখন বছর শুরু হত ফাল্গুন মাস থেকে। সেকালে এদিন এখানকার মানুষ অবশ্যই নতুন পোশাক পরতেন। আর ব্রাহ্মণেরা অবশ্যই ছুঁতেন এমন কোন অন্ত্যজশ্রেনীর মানুষকে, যাকে সারা বছর ছোঁয়াছুঁয়ি হলে জাত যাবার ভয়ে এড়িয়ে চলতেন। লোকের বিশ্বাস ছিল যে, এই অচ্ছুৎ মানুষকে ছোঁয়ার ফলে বছরের প্রথম দিনই তিনিও মৃত্যুর দেবতা যমের কাছেও অচ্ছুৎ হয়ে গেলেন। এবার তাঁকে কাছে টেনে নিতে যমেরও অরুচি হবে। ফলে সারাবছর আর মৃত্যুভয় থাকবে না।

এ তো গেল এক গপ্পো। আরও এক গপ্পো আছে বিহার তথা উত্তরাঞ্চলে। সেই গল্পের মূলে এক রাক্ষসী। সেই রাক্ষসী বরলাভ করেছিল যে, হোলির দিন যদি কোন মানুষ সভ্যভব্য হয়ে থাকে তাকে সে টুক করে খেয়ে ফেলতে পারবে। কিন্তু মানুষের কল্যাণের জন্য শিব দিলেন তাতে বাগড়া। তিনি এমন মায়াজাল সৃষ্টি করলেন যে, হোলির ক’টা দিন মানুষ একেবারে উন্মত্তের মতো আচরণ শুরু করল। তাই রাক্ষসী এদিন আর মানুষ ধরে খেতে পারল না। সেই মিথ মাথায় রেখে, এসব অঞ্চলে ভাঙ খেয়ে উন্মত্ত হয়ে আজও হোলি খেলা হয়। গ্রামদেশে এখনও সেইসঙ্গে খেউড়, গালাগালির রঙ্গরস আর আদিরসের গান গেয়ে মাতিয়ে তোলা হয় হোলির আসর।

উত্তর প্রদেশের লাঠমার হোলিতে বারসানায় যে অভিনব নারীশাসিত হোলি খেলা হয়, তার পেছনেও আছে এক গল্প। একবার হোলির আগে নন্দগ্রাম থেকে কৃষ্ণ তাঁর গোপসখাদের নিয়ে দেখতে গিয়েছিলেন পাশেই রাধার গ্রাম বারসানায় হোলির প্রস্তুতি কেমন চলছে। তখন সেখানে রাধার সখীদের গোপসখারা খুব উত্যক্ত করেছিল। এতেই ক্ষেপে গিয়ে সখীরা লাঠি হাতে প্রতিবাদ করে সখাদের বেশ কয়েক ঘা লাগিয়ে দিয়েছিল। এই ঘটনার কথা স্মরণ করেই এখনও এই অঞ্চলে মূল হোলি খেলার আগে বারসানার মেয়েরা রাধার সখী সেজে মজার ছলে নন্দগ্রামের পুরুষদের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে থাকেন। এই সময় নন্দগ্রামের পুরুষেরা এ-গাঁয়ে আসেন গোপসখা সেজে, আর হাতে নিয়ে আসেন আত্মরক্ষার জন্য ঢাল।

তামিলনাড়ুর হোলি উৎসব প্রাচীন মদন উৎসবের স্মৃতি এখনও বহন করে চলেছে। সেখানে এদিন একটি সুন্দর কাঠের ঘর বানিয়ে তাঁর মধ্যে কামদেবের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়। আর তাঁর কোলে বসিয়ে দেওয়া হয় রতিদেবীকে। তারপর নাচগানে-পার্বণে তাঁদের পূজা করা হয়।

সারা দেশের হোলি উৎসবের বৈচিত্র্যময়তার দিকে তাকালে স্পষ্টই বোঝা যায় আজকের হোলি বা দোল উৎসবের প্রকৃত ইতিহাস। বেদের যুগের সূর্য পূজার সঙ্গে ছিল কৃষিজীবনের ঘনিষ্ঠ যোগ। বলা যায়, একই অঙ্গে সূর্য পূজা, মদন উৎসব, বসন্তোৎসব, নববর্ষ উৎসব, রাধাকৃষ্ণের দোলা—সব আত্তীকরণ করে গড়ে উঠেছে আজকের এই দোল উৎসবের বর্ণময় ঐতিহ্য।

বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

https://www.youtube.com/channelhindustan

https://www.facebook.com/channelhindustan

Spread the love

Check Also

চোরেদের মন্ত্রীসভা… কেন বলেছিলেন বাঙালিয়ানার প্রতীক

ডঃ অরিন্দম বিশ্বাস : আজ বাংলার এবং বাঙালির রাজনীতির এক মহিরুহ চলে গেলেন। শ্রী বুদ্ধদেব …

আদবানি-সখ্যে সংকোচহীন ছিলেন বুদ্ধ

জয়ন্ত ঘোষাল : লালকৃষ্ণ আদবানির বাড়িতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মধ্যাহ্ন ভোজে আসবেন। বাঙালি অতিথির আপ্যায়নে আদবানি-জায়া …

নির্মলার কোনও অর্থনৈতিক চিন্তা-ভাবনা নেই

সুমন ভট্টাচার্য এবারের বাজেটটা না গরিবের না মধ্যবিত্তের না ব্যবসায়ীদের কাউকে খুশি করতে পারলো। দেখে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *