সুখেন্দু বিশ্বাস
পাহাড়ে নিগৃহীত রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়ায় শাসক দলের করিৎকর্মা নেতা কর্মীদের সে কী উল্লাস! শান্ত পাহাড়কে চক্রান্ত করে অশান্ত করতে গিয়েই নাকি শারীরিক নিগ্রহের শিকার রাজ্য বিজেপি সভাপতি! বিরোধী রাজনৈতিক দলকে চোখ রাঙানি দিয়ে মুখ বন্ধ করার ট্রাডিশন সেই সমানে চলছে। না, কোনও অনুতাপ নেই, পরিতাপ নেই শাসক দলের মধ্যে। উল্টে আছে শুধুই শক্তির আস্ফালন। আর হ্যাঁ, এমন ঘটনা আরও ঘটবে তারই সগর্জে ঘোষণা।
আমার স্মৃতি একারণেই চলকে উঠছে। উদ্ধত বামেরা হাজরা মোড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লালু আলাম, বাদশা আলামদের দিয়ে ঠেঙিয়ে ছিল। সেদিন জীবনহানির আশঙ্কা হয়ে গিয়েছিল বর্তমান তৃণমূল সুপ্রিমোর। এরপর বারাসত সহ গোটা রাজ্যে যেখানেই মানুষের জন্য আন্দোলনে গিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী, সেখানেই কটুক্তি, বক্রোক্তি কিংবা শারীরিক নিগ্রহ নেমে এসেছিল তাঁর ওপরে। কখনও মহাকরণে পুলিশের চুলের মুঠি ধরে নামিয়ে দেওয়া আবার কখনও রাতের অন্ধকারে সিঙ্গুরে মারতে মারতে পুলিশ ভ্যানে ওঠানো হয়েছিল মমতা-কে। নন্দীগ্রামকাণ্ডেও অনিল বসু, বিনয় কোঙারদের মুখ থেকেও অনেক অপমানকর শব্দ শুনেছেন তিনি। কিন্তু মনের জোর হারাননি। লক্ষ্যে অবিচল থেকেছেন। আর তার ফলও পেয়েছেন ২০১১ সালে।
রাজনীতিতে বিরোধী কন্ঠস্বরকে রোধ করা মানেই তো গণতন্ত্রকে হত্যা করা। বিরোধীদের আয়নাতেই নিজেদের ভুলত্রুটি শুধরে নেওয়া দস্তুর শাসকের। কিন্তু বর্তমান শাসক যে একদম-ই সমালোচনা সহ্য করতে পারছে না। বিরোধী স্বর-ও তাই না-পসন্দ তাঁদের।
ঠিক এই পরিস্থিতিতেই কংগ্রেস-সিপিএম রাজ্য রাজনীতিতে ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু শক্তি হওয়াতেই পালে হাওয়া লেগেছে বিজেপি-র। তার ওপর দল ভাঙানোর খেলায় নেমেছে মুকুল রায়। সারদা-নারদা-রোজভ্যালি কাণ্ডে সিবিআইএর সাঁড়াশি আক্রমণে রাজ্যের শাসক দল। আর তা-ই কী ধৈর্যের অভাব ঘটছে তৃণমূল নেতৃত্বে! ঠিক যে কারণে বামেদের বিপথগামিতায় উত্থান হয়েছিল মমতার মা-মাটি-মানুষ-এর সরকারের। তৃণমূল সুপ্রিমো কি বুঝতে পারছেন না পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে? অনেকটা হাতের বাইরেও চলে যাচ্ছে।
পাহাড়কাণ্ডে বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব বাড়তি অক্সিজেন পেল বলেই মনে হচ্ছে। দিলীপ ঘোষের নিগ্রহের প্রতিবাদে গোটা রাজ্য জুড়ে রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ করেছে রাজ্য বিজেপি। সংগঠনও চাঙ্গা হচ্ছে। বিজেপির পাল্টা প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শাসক তৃণমূলেরও। সুতরাং বাড়তি মাইলেজ তো দিলীপ ঘোষেদের। এদিকে পশ্চিমবঙ্গের ওপর বাড়তি নজর দিয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বারে বারেই রাজ্যে আসছেন তাঁদের পর্যবেক্ষক, বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দ, মায় কেন্দ্রীয় সভাপতি-ও। পাহাড়কাণ্ডে দিলীপ ঘোষকে খোদ ফোন করে বিস্তারিত জেনেছেন সভাপতি অমিত শাহ। সুতরাং বিষয়টি যে বিজেপি নেতৃত্ব হাল্কা ভাবে নিচ্ছেন না তা দিনের আলো মতো পরিস্কার। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে পর্যন্ত টানা আন্দোলন বিজেপি চালিয়ে গেলে রাজ্যের শাসক দল যে বেশ চাপে থাকবে তা হলফ করে বলাই যায়।
বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
https://www.youtube.com/channelhindustan
https://www.facebook.com/channelhindustan