প্রশান্ত মল্লিক, টুরিজম আক্টিভিস্ট এবং চিত্র সাংবাদিক :
কাল দুপুরের প্রথম দিকে সবকিছুই ছিল ঠিকঠাক। কালিম্পঙের প্রধান সড়কও ছিল জমজমাট। দলে দলে পর্যটকেরাও আসতে শুরু করেছেন, অনেকে চলেও এসেছেন পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায়। বহুদিন পর এত ভ্রমণবিলাসী মানুষ দেখলাম পাহাড়ে!
হঠাৎ দুপুরের পর থেকে লক্ষ করলাম বাজার-দোকান বন্ধ হচ্ছে। সমস্ত দোকানই ঝাঁপ বন্ধ করে দিয়েছে। রাস্তা থেকে সাধারণ মানুষ এবং পর্যটকেরা উধাও হয়ে গেলেন মুহূর্তে! পথে দেখলাম শুধু আন্দোলনকারীদের। অদ্ভুত এক শূন্যতা বিরাজ করতে লাগল পথেঘাটে! চারিদিকে শুধু সরকার বিরোধী ধ্বনি। একটা চরম অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হল। দুপুরের আগে অব্দি যেমন শান্ত ছিল ঠিক ততটাই অশান্ত হয়ে উঠল পাহাড়!
তবে কালিম্পং মোটামুটি শান্ত ছিল। দার্জিলিঙে চরম আকার নিল অশান্তির বাতাবরণ। পর্যটকেরা পড়লেন আতান্তরে। অনেকেই বিপদের আঁচ পেয়ে পাহাড় থেকে নামতে শুরু করেছেন। ট্যাঁকের কড়ি খসাতে হচ্ছে প্রচুর। অনেকেই নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে ওই ব্যাপক গুনাগার দিয়ে শিলিগুড়ির পথ ধরেছেন।
এখনও বহু পর্যটক বন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। আমার সব দেখে মনে হয়েছে এ সেই ২০১০-এর মে মাসের পুনরাবৃত্তি। ভয়ংকর দিন কী ফিরে আসছে পাহাড়ে! জানি না! যাই হোক, আমি পাহাড়ের ভালটাই আশা করছি।
বেশ কয়েক বছর পর পাহাড়ে এবার প্রচুর পর্যটক এসেছিলেন। ভাল ব্যবসা পেয়েছিল হোটেল এবং হোমস্টেগুলো। এবার রেকর্ডসংখ্যক ভিড় হয়েছিল পাহাড়ে। এমন ভরা মরশুম আমি পাহাড়ে অনেকদিন দেখিনি। আমার পাহাড়ে আসা-যাওয়া-থাকা-খাওয়া বহু বছরের। এই ভরা পর্যটন মরশুমে অবিবেচকের ভূমিকায় দেখলাম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের!
পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত পাহাড়বাসীরা তাঁদের নেতাদের আচরণে খুশি নন। অনেক হোমস্টের মালিকেরা বিরক্তও সব দলের নেতাদের প্রতি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু হোমস্টের মালিক তাঁদের অসন্তুষ্টির কথা জানালেন। বললেন, সকলেই ক্ষমতা প্রদর্শন করতে চায়, আমাদের কথা কে আর ভাবে!
কালকের এই চরম অশান্তির পর আজ মোটামুটি শান্ত। তবে ১২ ঘণ্টার (সকাল ৬টা থেকে সন্ধে ৬টা) বনধ চলছে। বনধ সর্বাত্মক।