ঈষাণিকা ভোরাই
শুধুই কি নিজেদের দাবি জানানো, নাকি এইভাবেই ‘রেইকি’ করে নেওয়া; কিভাবে পৌঁছে যাওয়া যায় মুখ্যমন্ত্রীর একেবারে কাছে ? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরপর দু’ দিনের সভায় ধরা পড়ল দুটো মারাত্মক গাফিলতির ঘটনা। বুধবার, দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরে বক্তব্য রাখার সময় হঠাৎই মুখ্যমন্ত্রী বুঝতে পারেন যে মাইকে হাত রেখে তিনি বক্তৃতা করছেন সেটা থেকে কারেন্টের শক্ লাগছে। সঙ্গে সঙ্গে সরে যান তিনি। মঞ্চে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থার কর্মী এসে বদলে দিয়ে যায় মাইক। কিন্তু প্রশ্ন উঠে যায় এমন ঘটনা ঘটলো কি ভাবে। মুখ্যমন্ত্রী যে মাইকে বক্তব্য রাখবেন সেটা আগে থেকেই নির্দিষ্ট করা ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য রাখার আগে সেটা ভালো করে পরীক্ষা করে নেওয়াটাই রীতি। তাহলে কী সেখানে কোনও গাফিলতি ছিল! প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রী নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের প্রতি। তবে বুধবারের ঘটনাকে ছাপিয়ে গেল বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্যের সময়। উত্তরদিনাজপুর জেলার হেমতাবাদে সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে তখন বক্তব্য রাখছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বক্তৃতা প্রায় শেষের পথে। এমন সময় জেড প্লাস নিরাপত্তা পাওয়া মুখ্যমন্ত্রীর সভামঞ্চে উঠে মুখ্যমন্ত্রীর প্রায় কাছে এসে পড়লেন এক মহিলা। সঙ্গে সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দু’জন তাকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। দৃশ্যতই হতচকিত মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চে দাঁড়িয়েই নিজের নিরাপত্তা আধিকারিকদের প্রতি বলে ওঠেন “তোমাদের গাফিলতি এবার দেখতে পেলে! কেউ হঠাৎ করে দৌড়ে চলে এল আর মঞ্চে উঠে পড়ল!” এটা যে সত্যিই মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তায় থাকা আধিকারিকদের একটা বড়সড় গাফিলতি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না । এমনিতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুব সহজেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যান। কিন্তু বৃহস্পতিবার যেভাবে রাবেয়া খাতুন নামে ওই মহিলা দৌড়ে এসে মঞ্চে উঠে পড়েন তা একেবারে নজিরবিহীন। শোনা যাচ্ছে রাবেয়া খাতুন ও তার বোন আমেয়া খাতুন মঙ্গলবার থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছোবার চেষ্টা করছেন। মঙ্গলবার মালদহের পর বুধবার তারা পৌঁছায় দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের সভামঞ্চে। সেখানে সুবিধা করতে না পেরে এরপর বৃহস্পতিবার একেবারে উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদের মঞ্চে উঠে পড়লেন এই দুই জনের একজন। অন্যজনকে অবশ্য তার আগেই আটকে দেওয়া হয়। শোনা যাচ্ছে ২০১৫ সালে এদের বাবা খুন হয়, তারপর সরকারের পক্ষ থেকে চাকরি ও বাড়ির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। কিন্তু বাবার খুনের ঘটনার বিচারের দাবি জানাতেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তারা এসেছেন। কিন্তু এমন ঘটনা ঘটল কি করে ? “ডি-জোন” বা নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভিতর এরা দুজন প্রবেশ করলই বা কী ভাবে! যেখানে সাংবাদিকরা পর্যন্ত ঢুকতে গেলে হাজারটা প্রশ্ন, হাজারটা চেকিং করা হয়, এবং স্বাভাবিক নিয়মেই সাংবাদিকরা সেটা মেনেও নেন। কিন্তু বৃহস্পতিবারের এই ঘটনায় যে গুরুতর প্রশ্নটা সামনে চলে এল তা হল, এটা নিছকই গাফিলতি নাকি এভাবেই বড় কোনও ছক কষার আগে নিরাপত্তাবেষ্টনীর ভিতরটা একবার সরেজমিনে মেপে রাখতে চাইল দুষ্কুতিরা!
বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
https://www.youtube.com/channelhindustan
https://www.facebook.com/channelhindustan