দেবক বন্দ্যোপাধ্যায়
ভোটের ময়দানে মুকুল রায় কী দাঁত ফোঁটাতে পারেন! মোদ্দা কথা দীর্ঘ দিনের রাজ্যসভার সাংসদ মুকুল কী মানুষের ভোটে জিতে সংসদে যাওয়ার ক্ষমতা রাখেন! তৃণমূল কংগ্রেসে ইদানীং এই আলোচনা শোনা যাচ্ছে দলের বিভিন্ন স্তরে। ভাটপাড়ার বিধায়ক অর্জুন সিংহও এবার এই বিতর্কে যোগ দিয়েছেন। মুকুল তৃণমূলে থাকাকালীনও অর্জুন ছিলেন ঘোষিত মুকুল বিরোধী। মুকুল দল ছাড়ার পর তিনি যে আরও সুর চড়াবেন, সেটাই স্বাভাবিক।
প্রশ্ন উঠছে অন্য জায়গায়। মুকুলকে খাটো করে দেখানোর অভিপ্রায়ে তৃণমূল কংগ্রেস রাজনীতির একটা ঘরানাকে অপমান করে ফেলছে না তো! এই প্রশ্ন উঠছে রাজনীতির সেইসব আঙিনায় যেখানে রাজনৈতিক চর্চায় শিক্ষার ছোঁয়া আছে। দেশে তো বটেই এই রাজ্যের রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন বহু ব্যক্তিত্ব আছেন যাঁরা নির্বাচনে লড়াই না করলেও নিজের দলের প্রার্থীদের লড়িয়েছেন। এই লড়ানোর মধ্যে অজস্র খুঁটিনাটি থাকে, যুক্ত ডিটেলিং থাকে যা একেবারেই ফুলটাইম বিশেষজ্ঞের কাজ। কংগ্রেসে এক সময় এই কাজ করেছেন অতুল্য ঘোষ। সংগঠক হিসেবে রাজ্য রাজনীতির এই ‘বড়বাবু’র নাম আজও শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হয় রাজনীতির পরিশীলিত মহলে। অতুল্য ঘোষের সঙ্গে তুলনা করে রাজ্য কংগ্রেসের আর এক দিকপাল সংগঠককে ‘বড়বাবু’ তকমা দিয়েছিলেন সাংবাদিক মিহির গঙ্গোপাধ্যায়। এই বড়বাবু শিয়ালদার ছোড়দা সোমেন মিত্র। চার দশক ধরে মানুষের ভোটে জিতে এসে শিয়ালদার বিধায়ক থাকলেও তাঁকে মাপার আসল মাপকাঠি জীবনে তিনি কতজনকে সংসদে আর বিধানসভায় পাঠিয়েছেন তার ওপর নির্ভরশীল। তিনি নিজেও নিজেকে এভাবেই ভাবতে পছন্দ করেন। সংসদ বা বিধানসভার ব্যাপারে তাঁর অতি ব্যক্তিগত মনোভাব অনেকটা নকশালপন্থীদের মত! সংসদ-বিধানসভার বদ্ধ ঘরের চেয়ে তাঁর অনেক বেশি পছন্দ দলীয় কর্মীদের দরবার। ৪৪ নম্বর আর্মহাস্ট স্ট্রীটে বসে তিনি ১০ জনপথের পাশাও উল্টে দিয়েছেন। এমনই তাঁর সাংগঠনিক শক্তি। এই নজির কংগ্রেসের ইতিহাসে আছে।
গোটা রাজ্য যাঁরা হাতের তালুর মত চেনেন তাঁর মধ্যে একজন বিমান বসু। ছিলেন অনিল বিশ্বাসও। তাঁদের কেউ কোনওদিন ভোটে দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে বলেননি। কোনওদিন মানুষের ভোটে না জিতে আর একজন বঙ্গ সন্তান সর্বভারতীয় রাজনীতির অনেক ওপরে উঠেছিলেন। ২০০৪ সালে তাঁর সাধ হয়েছিল নির্বাচনে জেতার। অধীর চৌধুরী দিনরাত পরিশ্রম করে (আরও অনেক ফ্যাক্টর কাজ করেছিল) তাঁর মত স্বনামধন্য মানুষের সাধপুরণ করেছিলেন। আর নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না তিনি প্রণব মুখোপাধ্যায়। তবে মানুষের ভোটে না জিতলেও সংসদীয় রাজনীতিতে তাঁর অবদানের কোনও হেরফের হত না। রাজনীতির চাণক্যদের কাজ রাজা তৈরি করা রাজা হওয়া নয়।
মুকুল রায় কোনওদিন তৃণমূলের মাথা ছিলেন না। তবে অনেকাংশে মস্তিষ্ক ছিলেন। এখন মমতার চ্যালেঞ্জার হয়ে হয়তো তৃণমূলের মাথা ব্যথার কারণ হয়েছেন। তৃণমূল তাঁকে কিভাবে আক্রমণ করবে তা তাঁদের ব্যাপার। তবে গায়ের ঝাল মেটাতে গিয়ে রাজনীতি একটি ঘরানাকে বেইজ্জত করে ফেলা মোটেই কাজের কাজ নয়।
বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
https://www.youtube.com/channelhindustan
https://www.facebook.com/channelhindustan