চ্যানেল হিন্দুস্তান ব্যুরো:
১৫ জুন গালওয়ান উপত্যকায় ভারত ও চিনের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় জওয়ান নিহত হন। এই ঘটনার দু’দিন পর সেনাবাহিনীর জন্য বুলেট প্রুফ জ্যাকেট ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম প্রস্তুতের সিধান্ত নিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। সূত্রের খবর, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলিকে জরুরি ভিত্তিতে ২ লক্ষ বুলেট প্রুফ জ্যাকেটের তৈরির অর্ডার দিয়েছে।
যা নিয়ে তৈরি হল বিতর্ক। কারণ বেশিরভাগ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরির মূল উপাদান (কাঁচামাল) আসে চিন থেকে। যার গুণমান নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে খোদ সেনাবাহিনীর অন্দরে।
২০১৭ সালে চিনের সংস্থার সঙ্গে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত দ্রব্য আমদানির চুক্তি হয় ভারতের। ৬৩৯ কোটি টাকার ওই চুক্তি প্রসঙ্গে সেই সময় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ সংসদে জানিয়েছিলেন, সেনাবাহিনীর জন্য প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম তৈরি করতে চিন থেকে কাঁচামাল আনতে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। কিন্তু এখন ডেলিভারি পর্যায়ে গিয়ে দেখা গিয়েছে চিনা সরঞ্জামগুলির গুণমান মোটেও ভালো নয়। ফলে ওই চিনা সংস্থাগুলির সঙ্গে চুক্তি থাকবে কিনা তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
সূত্রের খবর, সেনাবাহিনীর জীবনের সঙ্গে জড়িত কোনও বিষয়ে আপোষ করতে নারাজ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। তাই চিন থেকে আমদানি করা কাঁচামাল নিয়ে নতুন করে ভাবনা চিন্তা শুরু করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কর্তারা। এ প্রসঙ্গে নীতি আয়োগের সদস্য এবং প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার প্রাক্তন প্রধান ভি কে সরস্বত বলেন, “এখন পরিস্থিতি বদলেছে সেই জন্য নয়। আমরা এক বছর আগেই গুণমান খারাপের জন্য ওই সংস্থাকে জানাই। তাদেরকে গুণমান পরীক্ষার জন্য ডাকাও হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি না বদলানোর জন্য এখন মনে করি চিন থেকে আসা কাঁচামালের ওপর নজর দেওয়া উচিত। এখন আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সামরিক ও টেলিকম বিভাগে চিনা কাঁচামাল ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকব।”
তবে চিনা কাঁচামাল নিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের হুঁশ ফেরে পিএইচডি চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির একটি চিঠিকে কেন্দ্র করে। এই সংস্থাটি প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত কাঁচামাল পর্যবেক্ষণ করে ও সিদ্ধান্ত নেয়। শনিবার সংস্থাটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে চিঠি দিয়ে বিশেষভাবে জানায়, “বুলেট প্রুফ জ্যাকেট তৈরির জন্য দেশের সমস্ত প্রস্তুতকারক সংস্থা চিন থেকে উচ্চ মানের পলিথিন (High Performance Polyethylene) আমদানি করে এবং বিশাল আকারের বিদেশি মুদ্রা আয় করে। কিন্তু এই পলিথিনের গুণমান খুব ভালো নয়। তাই এই কাঁচামালের আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক। কারণ এতে যুদ্ধরত জওয়ানদেন জীবনের প্রশ্ন জড়িয়ে রয়েছে।” শুধু পলিথিন নয় বুলেট প্রুফ জ্যাকেট ও জওয়ানদের অন্যান্য জিনিস বানাতে যে বোরন কার্বাইড লাগে, তাও আসে চিন থেকে।
বুলেট প্রুফ জ্যাকেট এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরির জন্য কাঁচামাল যে চিন থেকে আসে সে কথা স্বীকার করে নেন এসএমপিপি (SMPP) প্রাইভেট লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এনসি কনসাল। তিনি বলেন, “হ্যাঁ, আমরা কাঁচামাল চিন থেকে আমদানি করি। কিন্তু এখন দেশ ও সেনাবাহিনীর স্বার্থে আমরা বিকল্পের সন্ধানও করতে পারি এবং নির্দেশ পেলে তার জন্য আমরা তৈরি।” আবার এমকেইউ (MKU)-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর নীরজ কুমার গুপ্ত বলেন, “চিন ছাড়াও আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলি থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের কাঁচামাল আনা যায়। কিন্তু তাতে অনেক বেশি খরচ। অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার তুলনায় চিনের কাঁচামালের দাম ৬০%-৭০% কম। তবে এমন একটি খাতে ব্যবহার করা হবে সেখানে নিরাপত্তা সবার আগে জরুরি। কারণ যুদ্ধের জন্য সেনাবাহিনীদের সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।”