Breaking News
Home / TRENDING / চৈতন্যপূর্ব বৈষ্ণবধর্মের কাণ্ডারী অদ্বৈত আচার্য

চৈতন্যপূর্ব বৈষ্ণবধর্মের কাণ্ডারী অদ্বৈত আচার্য

পার্থসারথি পাণ্ডা : 

প্রায় ছ’শো বছর আগের কথা। গৌড়ে তখন সুলতানি শাসন। সেসময় শাসক আর স্মার্তব্রাহ্মণের অত্যাচারে বাংলার বৈষ্ণব-সমাজ একেবারেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। জাতপাতের ভেদাভেদ তুঙ্গে উঠেছিল। বৈষ্ণব সাধনার ম্লান শিখাটি শুধু টিমটিম করে জ্বলছিল নবদ্বীপ আর শান্তিপুরে। এরকম একটি সময়ে বৈষ্ণব-সমাজের হাল ধরলেন কমলাক্ষ। জ্যোতিষ, ষড়দর্শন, বেদ-পুরাণে অগাধ পাণ্ডিত্য নিয়ে জ্ঞানমার্গের সাধনা করতে লাগলেন। তারপর মাধবেন্দ্রপুরীর কাছে একদিন ভক্তিমার্গের দীক্ষা নিলেন। গুরু মাধবেন্দ্র তাঁর নাম রাখলেন ‘অদ্বৈত’। বৈষ্ণব সমাজে কমলাক্ষ হয়ে উঠলেন ‘অদ্বৈত আচার্য’।

বাংলার বৈষ্ণব সমাজের প্রতি অত্যাচারের বিরুদ্ধে একদিকে তিনি যেমন সুলতানের দরবারে গিয়ে সওয়াল করেছেন, অন্যদিকে জাতপাত নির্বিশেষে সকলকে বুকে টেনে নিয়ে তাঁর আরাধ্য বিষ্ণুর চরণে আশ্রয় দিয়েছেন। যেমনটা ঘটেছে যবন হরিদাসের ক্ষেত্রে। যবন জেনেও, হরিদাসের প্রার্থনায় অদ্বৈত সাড়া দিতে দ্বিধা করেননি। তাঁকে তিলক-তুলসীমালা-কৌপীন দিয়ে কৃষ্ণমন্ত্রে দীক্ষা দিয়েছেন, আশ্রয় দিয়েছেন, নাম দিয়েছেন, ‘ব্রহ্ম হরিদাস’। এজন্য অদ্বৈতকে ব্রাহ্মণ সমাজের কাছে অনেক অত্যাচার, অনেক লাঞ্ছনা সহ্য করতে হয়েছে, এমনকি সমাজচ্যুত করার হুমকিও শুনতে হয়েছে। তবু একজন গেরস্ত বৈষ্ণব হয়েও সেই হুমকি-অত্যাচারের কাছে তিনি মাথা নত করেননি। বরং যে হরিদাসকে ব্রাহ্মণেরা ম্লেচ্ছ, অচ্ছুৎ বলে দূরে সরিয়ে দিত, তার সঙ্গে এক পঙক্তিতে বসে ভোজন করেছেন।

এসবের মাঝেই তিনি বাংলায় কৃষ্ণভক্তির গঙ্গা বইয়ে দেবার জন্য একজন ভগীরথের সন্ধান করছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, ভাগবত গীতায় ভগবান ‘সম্ভবামি যুগে যুগে’ বলে যে অবতার নেবার আশ্বাস দিয়েছিলেন, সেই আশ্বাস পূরণের কাল উপস্থিত হয়েছে। গুরু মাধবেন্দ্রও ‘অনন্ত সংহিতা’-র কথা উল্লেখ করে ভবিষ্যৎবাণী করেন, অচিরেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নবদ্বীপে অবতার নেবেন, নবদ্বীপ হয়ে উঠবে নবদ্বীপধাম।

বিষ্ণুপাদপদ্ম আর ঈশ্বর পুরীর স্পর্শে ধন্য হয়ে বিশ্বম্ভর নিমাই যখন হৃদয়ে ভক্তির ঢেউ নিয়ে গয়া থেকে ফিরলেন, তখন সত্তর পেরনো অদ্বৈত তাঁর মধ্যে সেই ‘ভগীরথের’ সন্ধান পেলেন, সন্ধান পেলেন সেই অবতারের, যাকে তিনি এতদিন হৃদয় হাতড়ে খুঁজছিলেন। যোগ্য লোক পেয়ে তিনি বিশ্বম্ভরের হাতে একটু একটু করে ছেড়ে দিতে লাগলেন বৈষ্ণব সমাজের ভার। ভারমুক্ত হয়ে আশ্রয় চাইলেন বিশ্বম্ভররূপী বিষ্ণুর চরণে। শ্রীপদযুগল মাথায় তুলে নিলেন, হয়ে উঠলেন প্রভুর আদরের ‘নেড়া’। এভাবেই অদ্বৈত ধীরে ধীরে নেতা থেকে সেবক হয়ে উঠলেন।

পরবর্তীকালে নগর কীর্তনের মধ্য দিয়ে শ্রীধরের মতো নিম্নবর্গের মানুষকে বুকে টেনে নিয়ে, ম্লেচ্ছ দবীর খাস আর সাকর মল্লিককে উদ্ধার করে রূপ ও সনাতন নাম দিয়ে বৈষ্ণবধর্মের মধ্যে যে উদারতার ধারা, মানবতার ধারা, করুণার ধারা, প্রেমভক্তির ধারা একটি স্রোতে মহাপ্রভুর চরণ ছুঁয়ে বয়ে গেল, সেই ধারাপথ কিন্তু অদ্বৈত আচার্যই সারাটি জীবন ধরে একটু একটু করে তৈরি করে রেখেছিলেন। চৈতন্যপূর্ব বৈষ্ণব ধর্মের এই মহান কাণ্ডারীর আবির্ভাব ঘটেছিল ১৪৩৫ খ্রিস্টাব্দে, আজকের দিনটিতে।

 

বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

https://www.youtube.com/channelhindustan

https://www.facebook.com/channelhindustan

Spread the love

Check Also

চোরেদের মন্ত্রীসভা… কেন বলেছিলেন বাঙালিয়ানার প্রতীক

ডঃ অরিন্দম বিশ্বাস : আজ বাংলার এবং বাঙালির রাজনীতির এক মহিরুহ চলে গেলেন। শ্রী বুদ্ধদেব …

আদবানি-সখ্যে সংকোচহীন ছিলেন বুদ্ধ

জয়ন্ত ঘোষাল : লালকৃষ্ণ আদবানির বাড়িতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মধ্যাহ্ন ভোজে আসবেন। বাঙালি অতিথির আপ্যায়নে আদবানি-জায়া …

নির্মলার কোনও অর্থনৈতিক চিন্তা-ভাবনা নেই

সুমন ভট্টাচার্য এবারের বাজেটটা না গরিবের না মধ্যবিত্তের না ব্যবসায়ীদের কাউকে খুশি করতে পারলো। দেখে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *